
ব্যবসার প্রকৃত চিত্র গোপন করে সরকারের ২৪ কোটি টাকা ফাঁকি দিয়েছে দেশের আলোচিত সুরকার ও সংগীতশিল্পী কৌশিক হোসেন তাপসের প্রতিষ্ঠান ওয়ান মোর জিরো (ওএমজি) কমিউনিকেশন। যে প্রতিষ্ঠানের অধীনেই তিনি গড়ে তুলেছিলেন সংগীতবিষয়ক দেশের একমাত্র ২৪ ঘণ্টার টেলিভিশন চ্যানেল গানবাংলা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের এক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এই ফাঁকির চিত্র উঠে এসেছে। ভ্যাট ফাঁকির তথ্য পাওয়ায় সরকারের পাওনা রাজস্ব আদায়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে এনবিআর। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কৌশিক হোসেন তাপসের প্রতিষ্ঠান ওয়ান মোর জিরো কমিউনিকেশনের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ উঠলে প্রতিষ্ঠানটির আয়-ব্যয়ের তথ্য নিরীক্ষার (অডিট) সিদ্ধান্ত নেয় ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। চার বছর মেয়াদি নিরীক্ষায় বেরিয়ে আসে মোটা অঙ্কের ভ্যাট ফাঁকির চিত্র। প্রতিষ্ঠানটির নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ৪ কোটি ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৪৯৩ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেনি। ভ্যাট না দেওয়ায় ভ্যাট আইন অনুসারে সুদের পরিমাণ
দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৮৫ লাখ ৮ হাজার ৩৬২ টাকা। সুদ ও আসলে অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ৯৩ লাখ ৬৬ হাজার ৮৫৫ টাকা। এ ছাড়া ওএমজি কমিউনিকেশন উৎসে ভ্যাট পরিশোধ করেনি ৯ কোটি ৩২ লাখ ৪৯ হাজার ৪৭৪ টাকা। আর স্থাপনার বিপরীতে ভ্যাট দেয়নি ৯০ হাজার ১৫৭ টাকা। দ্বিতীয় দফায় প্রতিষ্ঠানটি ১ কোটি ২১ লাখ ৩৮ হাজার ৩৫০ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেনি। এ ছাড়া উৎসে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে ৩ কোটি ৫৪ লাখ ৭৭ হাজার ৪৫৫ টাকা। আর স্থাপনা ভাড়ার বিপরীতে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে ৭২ হাজার ১২৫ টাকা। সব মিলে ২০২৪ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির মোট ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৪ কোটি ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৪১৬ টাকা।
জানতে চাইলে ভ্যাট গোয়েন্দার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আসছিল। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠান অডিটের একটা নিয়ম রয়েছে। সে অনুসারে ওএমজি কমিউনিকেশন নামের প্রতিষ্ঠানটির নিরীক্ষায় ২৪ কোটি টাকা ফাঁকির প্রমাণ মিলেছে। সরকারকে ফাঁকি দেওয়া এই রাজস্ব আদায় করতে এরই মধ্যে আমরা সংশ্লিষ্ট কমিশনারেট ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছি।’
সূত্র আরও জানায়, সংশ্লিষ্ট কমিশনারেট ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাটের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার আগ পর্যন্ত সুদ অব্যাহত থাকবে এবং আদায়যোগ্য হবে। প্রতিষ্ঠানটি থেকে ভ্যাট আদায় ও পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণের জন্যও সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।
জানতে চাইলে ভ্যাট কমিশনারেটের (ঢাকা উত্তর) কমিশনার মোহাম্মদ নেয়াজুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘ওএমজি কমিউনিকেশনের ভ্যাট আদায়ের জন্য এরই মধ্যে কোম্পানিকে আমরা কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি। কোম্পানি শুনানিতে আসবে। তারপর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
ওএমজি কমিউনিকেশনের এমডি কৌশিক হোসেন তাপস কারাগারে থাকায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে তার স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ফারজানা মুন্নীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা সব সময় সরকারের ভ্যাট-ট্যাক্স ঠিকমতো পরিশোধ করে আসছি।’ ২৪ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির বিষয়টি এই প্রতিবেদকের কাছ থেকে প্রথম শুনেছেন বলে দাবি করেন তিনি।