Image description
» বিদেশি নাগরিকদের জন্য অন অ্যারাইভাল ভিসা সীমিত করা হচ্ছে । » সাধারণ কাজ করা বিদেশিদের ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ বাড়বে না । » ক্রিকেটার ছাড়া অন্য কোনো খেলোয়াড়কে অন অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়া হবে না । » ভিসার সঙ্গে কাজের অমিল পেলে কালো তালিকাভুক্ত করে ফেরত ।

দেশে বিদেশিদের কর্মসংস্থানে লাগাম টানতে চাইছে অন্তর্বর্তী সরকার । এ জন্য বাংলাদেশিরা করতে সক্ষম , এমন কাজে বিদেশিদের সুযোগ না দেওয়া , অন অ্যারাইভাল ভিসা সীমিত করা , বিদেশি কর্মীদের বিদ্যমান ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ না বাড়ানো , ভিসার সঙ্গে কাজের অমিল এবং অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকলে কালো তালিকাভুক্ত করে দেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে । প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়ার সভাপতিত্বে সম্প্রতি এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয় বলে দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে । সূত্র বলেছে, বিষয়গুলো বাস্তবায়নে সরকারের কয়েকটি দপ্তর কাজ করছে ।

পরে পরিপত্র জারি করে এসব বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া হবে । বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ ( বেপজা ) , বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ( বিডা ) , এনজিও - বিষয়ক ব্যুরো এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিদেশিদের দেশে কাজের অনুমতি দেওয়া হয় । ব্যবসা ও বিনিয়োগ , কর্মসংস্থান , শিক্ষা , পর্যটন ও অন্যান্য শ্রেণির ভিসায় বিদেশিরা বাংলাদেশে আসেন । বিদেশি নাগরিকদের সরকারি কাজ , ভ্রমণ , ব্যবসা ও বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ভ্রমণে অন অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়া হয় । অভিযোগ রয়েছে , ৩০ দিনের অন অ্যারাইভাল ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে এসে অনেকে ভিসার মেয়াদ শেষে বছরের পর বছর অবৈধভাবে কাজ করছেন । অনেকে ভিসার শ্রেণি পরিবর্তন করে কাজ করছেন । এতে দক্ষ বাংলাদেশিরা বঞ্চিত হচ্ছেন । কতসংখ্যক বিদেশি বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন , সে তথ্য সুনির্দিষ্টভাবে সরকারের কাছে নেই ।

বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ১ লাখ ৩৯ হাজার বৈধ বিদেশি নাগরিক কাজ করছেন । তাঁদের অর্ধেকের বেশি সাধারণ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত । যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের সব দেশ , যুক্তরাষ্ট্র , কানাডা , অস্ট্রেলিয়া , নিউজিল্যান্ড , রাশিয়া , চীন , জাপান , সিঙ্গাপুর , মালয়েশিয়া , দক্ষিণ কোরিয়া , সংযুক্ত আরব আমিরাত , সৌদি আরব, কাতার , কুয়েত , ওমান , বাহরাইন , মিসর , তুরস্ক ও ব্রুনাইয়ের নাগরিকেরা বাংলাদেশে অন অ্যারাইভাল ভিসা পান । এ ছাড়া যেসব দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস , হাইকমিশন বা কনস্যুলেট নেই , সেসব দেশের নাগরিক , বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিদেশি নাগরিক এবং তাঁদের স্ত্রী , স্বামী , সন্তানেরা ; অন্য দেশের কূটনীতিক ও অফিশিয়াল পাসপোর্টধারীরা এবং জাতিসংঘ ও এর বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা অন অ্যারাইভাল ভিসা পান ।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন , করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ২০২০ সালের ১৫ মার্চ থেকে কয়েক মাস বাংলাদেশে অন অ্যারাইভাল ভিসা স্থগিত রাখা হয়েছিল । এখন অন অ্যারাইভাল ভিসা সীমিত করা হয়েছে ; আগের মতো ঢালাওভাবে দেওয়া হবে না । কারণ , এই ভিসায় দেশে ঢুকে অনেকে বছরের পর বছর চাকরি করছেন । অপরাধেও জড়াচ্ছেন কেউ কেউ । সরকার এ বিষয়ে এখনো পরিপত্র জারি না করায় নিয়মে যা রয়েছে , তা শতভাগ মেনে এই ভিসা দেওয়া হচ্ছে । অন অ্যারাইভাল ভিসা সেবা সহজ করতে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি অ্যাপ উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী । এ ছাড়া বিদেশিদের মধ্যে কে কোন দেশ থেকে , কত দিনের জন্য , কোন ধরনের ভিসায় এসেছেন , তা নির্ণয় করতে নতুন একটি অ্যাপ চালু করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় । সূত্র জানায় , দেশে বিদেশিদের কাজের সুযোগ কমাতে সাধারণ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিদেশিদের ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার । এর মধ্যে যাঁরা ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছিলেন , তাঁদের আবেদন নামঞ্জুর করে দেশে ফিরতে বলা হয়েছে । স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন , মুখ্য সচিবের সঙ্গে সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে , শুধু বিশেষায়িত কাজের জন্য বিদেশিদের ওয়ার্ক পারমিট দেওয়া হবে । দেশের মানুষকে দিয়ে যেসব কাজ করানো যাবে , সেসব কাজের জন্য এখন থেকে কোনো বিদেশিকে ওয়ার্ক পারমিট দেওয়া হবে না । দেশের লোকজনই সেসব কাজ করবেন । সূত্র জানায় , সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে , ক্রিকেটার ছাড়া ফুটবলারসহ অন্য খেলোয়াড়দের অন অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়া হবে না । কারণ , বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে খেলতে আসা আফ্রিকার অনেক ফুটবলার এসে আর ফেরত যাননি । একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজার (অপারেশনস ) হিসেবে একজন বিদেশিকে ওয়ার্ক পারমিট দেওয়া হয়েছিল । কিন্তু তিনি প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করছিলেন । এ জন্য তাঁকে সম্প্রতি কালো তালিকাভুক্ত করে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে । ভিসার সঙ্গে কাজের মিল না থাকা অন্যদেরও কালো তালিকাভুক্ত করে নিজ দেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে সভায় । স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ডিসেম্বরে এক সতর্কবার্তায় অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের বৈধতা নিতে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় ।

১৪ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরেকটি সতর্কবার্তায় জানায় , ৩১ জানুয়ারির সতর্কবার্তায় জানায় , ৩১ জানুয়ারির পর অবস্থান করা অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে দ্য ফরেন অ্যাক্ট , ১৯৪৬ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে । এরপর অবৈধভাবে বসবাসকারী ৪০ হাজারের মতো বিদেশি বৈধতার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেন । অনেকে নিজ দেশে ফেরত গেছেন । গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র- জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগপর্যন্ত প্রতিবছর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিদেশি কর্মীর সংখ্যা বাড়ছিল । ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে কাজ করতে ১ হাজার ৮০০ জনের বেশি বিদেশিকে অনুমতি দেয় বেপজা । একই সময়ে বেজা ১ হাজার ৩৫০ বিদেশিকে অনুমতি দিয়েছিল । বিডা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১০১ টি দেশের নাগরিকের কাছ থেকে পাওয়া আবেদনের মধ্যে ১৬ হাজার ৩০৩ টি আবেদন অনুমোদন করে । এর মধ্যে ৬ হাজার ২৫৬ টি নতুন ওয়ার্ক পারমিট ও ১০ হাজার ৪৭ টি আবেদন নবায়ন করা হয়েছে । আগের বছরগুলোতে এর হার কম - বেশি ছিল ।

অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে ৩ ফেব্রুয়ারি সুরক্ষা সেবা বিভাগের নিরাপত্তা ও বহিরাগমন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে সরকার । এই টাস্কফোর্সের প্রধান মো . শামীম খান আজকের পত্রিকাকে বলেন , ' একেবারে বিশেষজ্ঞ পর্যায় ছাড়া সাধারণ কাজের জন্য আর বিদেশিদের অনুমতি দেওয়া হবে না । একান্ত প্রয়োজনীয় না হলে বিদেশি কর্মী আনা বন্ধ করা হবে । বিদেশিদের ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আমাদের কাছে এলে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে । অন অ্যারাইভাল ভিসা প্রায় বন্ধ করে দিচ্ছি । ' বিদেশিদের মধ্যে কারা বৈধভাবে এবং কারা অবৈধভাবে কাজ করছেন , তা খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম । তিনি বলেন , ‘ কৌশলগত উপায়ে বিদেশিদের কাজে লাগিয়ে আমাদের দক্ষতার ঘাটতিগুলো পূরণ করা যেতে পারে । বিদেশি কর্মীদের অধীনে কাজ করে যাঁরা সেই যোগ্যতা অর্জন করেছেন , তাঁদের কাজে লাগাতে হবে । বিদেশে আমাদের দক্ষ শ্রমিক রয়েছেন , তাঁদের ফিরিয়ে আনতে হবে । আমাদের দক্ষ জনবল কাজে লাগাতে পারলে , সেটা আমাদের জন্য ভালো সুযোগ তৈরি করবে । রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট খাতে আমাদের দক্ষ প্রয়োজন রয়েছে । '