Image description

এভিয়েশন খাতে দেশি এয়ারলাইনসের অংশ খুব কম। সেটা মাত্র ২২ থেকে ২৫ শতাংশ। বাকি প্রায় ৭৫ শতাংশই বিদেশি এয়ারলাইনসের দখলে। আমাদের উচিত ছিল এটা আরো বাড়ানো। তাহলে দেশের বিপুল বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হতো। এ জন্য সরকারের তরফ থেকে একটি রোডম্যাপ থাকা দরকার ছিল। বাংলাদেশের এয়ারলাইনসগুলো বাজারের কত শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করবে, সেটা যদি ঠিক থাকে তাহলে সেটাকে সামনে রেখে যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া যায়।

অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী বড় বড় এয়ারলাইনস বসে গেছে। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, জিএমজি, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। আমাদের একটি মাত্র কার্গো এয়ারলাইনস ছিল (বিসমিল্লাহ এয়ার), সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আমরা সেই কার্গো নিয়ে ভোগান্তিতে আছি। দেশের কার্গো পরিবহনের মাত্র ১৫ শতাংশ বহন করার সক্ষমতা আছে আমাদের। তবে সে জন্য বিশেষায়িত উড়োজাহাজও নেই। সব বিদেশি এয়ারলাইনস বহন করছে।

বিশাল ব্যয়ে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মিত হলো। আশা করা যায়, আরো এক থেকে দেড় কোটি বাড়তি যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা বাড়বে। সেই বাড়তি সুবিধা কি বিদেশি এয়ারলাইনস নেবে? দেশি এয়ারলাইনসের সক্ষমতা যদি না বাড়ে, উল্টো বন্ধ হয়ে যায় তাহলে বাজার হাতছাড়া হতে বাধ্য। সেটা যাত্রী ও কার্গো দুই ক্ষেত্রেই। যাত্রী ও কার্গোর সঙ্গে সঙ্গে আমরা বৈদেশিক মুদ্রাও দিয়ে দিচ্ছি।

আমাদের দেশি এয়ারলাইনসকে নানা দোষারোপ করা হয়। বলা হয়, তাদের ব্যবস্থাপনা ভালো নয়, বিনিয়োগ ভালো নয়, তারা কালো টাকা সাদা করতে চায়এমন নানা অভিযোগ।

একটি এয়ারলাইনসের পরিচালন ব্যয়ের বড় অংশই যায় জ্বালানি খরচের পেছনে। উড়োজাহাজের জ্বালানি জেট ফুয়েলের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। সেই সঙ্গে সব নন-এরোনটিক্যাল চার্জ বাড়ানো হয়েছে গত ১৫ বছরে। উড়োজাহাজ পরিচালনায় যে সারচার্জ তা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে। সারচার্জ জমতে জমতে এক পর্যায়ে বিশাল দেনার পাহাড় হয়ে যায়, যা এয়ারলাইনস আর পরিশোধ করতে পারে না। এটা কি ব্যবসাবান্ধব হলো?

দেশি উড়োজাহাজের খুচরা যন্ত্রাংশে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। একটা উড়োজাহাজের হঠাৎ কোনো যন্ত্রাংশ নষ্ট হলে তা বিদেশ থেকে এনে মেরামত করতে অনেক সময় লেগে যায়। এভিয়েশন খাতে রানওয়ে, নেভিগেশনসহ অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়ন সরকার নিয়ন্ত্রিত। এই পরিষেবার আরেকটি বড় খরচ রক্ষণাবেক্ষণে। বেসরকারি বিমান কম্পানিগুলোর জন্য কোনো হ্যাঙ্গার নেই বিমানবন্দরে। বিভিন্ন হেলিকপ্টার সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের হ্যাঙ্গারে কোনো রকম মাথা ঢুকিয়ে মেরামতের কাজ করতে হয়। এতে সময়মতো মেরামত বিঘ্নিত হয়।

ব্যাংকগুলোও দেশের বেসরকারি এভিয়েশন খাতের পাশে দাঁড়াচ্ছে না। নতুন বিনিয়োগকারীরা এই খাতে আসতে চাচ্ছে না। তারা ধরেই নিয়েছে, এয়ারলাইনস ব্যবসা মানেই ঝুঁকিপূর্ণ।

অথচ মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের যেসব দেশ এয়ারলাইনসগুলোকে সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করছে তারাই বৈশ্বিক এভিয়েশন বাজারের নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমরা সেটা পারলাম না। বিমানকে অথর্ব করে রাখা হয়েছে। ব্যবস্থাপনায় যাঁরা, তাঁদের বেশির ভাগেরই অভিজ্ঞতা নেই। বিমানের পাশাপাশি বেসরকারি এয়ারলাইনসকে আরো উৎসাহিত করতে হবে। যারা এই খাতে বিনিয়োগ নিয়ে আসবে তাদের সর্বোচ্চ সহায়তা দিতে হবে।    

লেখক : এভিয়েশন খাত বিশ্লেষক ও পরামর্শক, ইউনাইটেড কলেজ অব এভিয়েশন

অনুলিখন : মাসুদ রুমী