Image description
♦ আফ্রিকাজুড়ে বাড়ছে আক্রান্ত ♦ বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি ♦ বন্দরে সতর্কতার পরামর্শ মন্ত্রণালয়ের

একের পর এক নতুন নতুন ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে বিশ্ব। এবার নতুন শঙ্কা মারবার্গ ভাইরাস। এর মধ্যেই আফ্রিকার দেশ তানজানিয়াতে এই ভাইরাসের থাবায় প্রাণ হারিয়েছে মানুষ, ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিবেশী দেশগুলোতেও। বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। তাই প্রাণঘাতী এই ভাইরাস ঠেকাতে আগাম সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্থলবন্দর, বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দগুলোতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।

সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাসিক প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, মারবার্গ ভাইরাস বিষয়ে আলোচনা হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মার্চ ও এপ্রিল বিষয়ের সম্ভাব্য কার‌্যাবলি তালিকায়। সেখানে বলা হয়েছে, রুয়ান্ডাতে গত বছরের সেপ্টেম্বরে এ ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। উচ্চ সংক্রামক মাত্রার কারণে দেশের পোর্ট অব এন্ট্রিতে (প্রবেশ দুয়ার) বিভিন্ন দেশ থেকে আসা যাত্রীদের ক্ষেত্রে সতর্কতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে গ্লোবাল রেসপন্স অনুবিভাগ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করবে। জানা যায়, মারবার্গ ফাইলোভিরিডি পরিবারের ভাইরাস।

১৯৬৭ সালে এটা প্রথম জার্মানির ফ্রাঙ্কফুটের মারবার্গ এলাকায় শনাক্ত হয়। সেই জায়গার নাম অনুসারে নাম রাখা হয় মারবার্গ ভাইরাস। ওখানের একটি গবেষণাগারে আফ্রিকা থেকে কিছু গ্রিন মাঙ্কি আনা হয়েছিল গবেষণার জন্য। ওই বানর থেকে ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাস। এ পর্যন্ত মারবার্গ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে ১ হাজার আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে ৫০০ জনের মতো মানুষ। এ বছরের মার্চে তানজানিয়াতে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর আগে রুয়ান্ডা, ঘানা, ইকুয়েডরে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। রুয়ান্ডাতে মৃত্যুহার ছিল ২৪ শতাংশ। তানজানিয়াতে আক্রান্ত ১০ জনের ১০ জনই মারা গেছে। 

এ ব্যাপারে প্রিন্স অব সংক্লা ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি অব ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্সের ভিজিটিং প্রফেসর ড. বিজন কুমার শীল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ ভাইরাস বাতাসে না ছড়ানোর কারণে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে না। ফলমূল খাওয়া এক ধরনের বাদুড় থেকে এ ভাইরাস ছড়ায়। এসব বাদুড় কয়লা খনির গুহায় থাকে। বাদুড়ের মলমূত্র শরীরে ক্ষত আছে এমন কোনো জায়গায় লাগলে ভাইরাসে আক্রান্ত হয় মানুষ। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত, লালা, ব্যবহৃত সিরিঞ্জ যদি কারও ক্ষতস্থান স্পর্শ করে তাহলে একজন থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে পড়বে। তাই স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হওয়ার উচ্চঝুঁকিতে থাকেন। রোগীর শেষকৃত্যের সময় লালা জাতীয় পদার্থ থেকেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।

এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গগুলোর বিষয়ে এই অনুজীব বিজ্ঞানী বলেন, ভাইরাসটির সংস্পর্শে এলে ২-২১ দিনের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। আক্রান্ত হলে শরীর ব্যথা, জ্বর, ভীষণ পেটে ব্যথা, বমি, শরীরে র‌্যাশ হওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেবে। আক্রান্ত ব্যক্তির নাক, কান দিয়ে, বমি, পায়খানার সঙ্গেও রক্ত বের হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা না করালে প্রাণহানির ঝুঁকি রয়েছে। অ্যান্টিজেন্ট টেস্ট, র‌্যাপিড টেস্ট এবং পিসিআর টেস্টেও মারবার্গ ভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত করা যায়। আক্রান্ত ব্যক্তির উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসার পাশাপাশি স্যালাইন ও অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েও চিকিৎসা করা হয়। এই ভাইরাস প্রতিরোধে টিকা এখনো বাজারে আসেনি। তবে স্যাবিন ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউট টিকার ট্রায়াল চালাচ্ছে। তাই কয়লা খনিতে কর্মরত শ্রমিকদের হাতে গ্লাভস পরে কাজ করতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মীদের এ ধরনের উপসর্গের রোগী এলে সতর্কতার সঙ্গে সেবা দিতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে রাখতে হবে। তবে মারবার্গ ভাইরাস বাংলাদেশে আসার শঙ্কা এখন পর্যন্ত কম। যদি আফ্রিকা থেকে আক্রান্ত হয়ে কেউ দেশে আসে তাহলে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।