Image description

অতিরিক্ত পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ক্ষতি হচ্ছে বছরে ৮৬১ কোটি টাকা। অতিরিক্ত পণ্য বহনের মাধ্যমে সাশ্রয় হওয়া খরচ ও জ্বালানি ব্যয় বাদ দিয়ে এই হিসাব করা হয়েছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে মহাসড়কে ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি পণ্য বহনকারী যানবাহন চলাচলের অনুমতি দেয়। তারা যুক্তি দেন, অতিরিক্ত পণ্য বহনের অনুমতি দিলে খরচ ও যানবাহন কম লাগবে। ফলে যানজট কমবে এবং জ্বালানি খরচও সাশ্রয় হবে। এতে বলা হয়, ১৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সচল রাখতে ২০২৩ সালে ১ হাজার কোটি টাকার একটি জরুরি পুনর্বাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। মহাসড়কের সীতাকুণ্ড এক্সেল লোড স্টেশন রয়েছে। তার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অতিরিক্ত বোঝাই গাড়ির কারণে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১ হাজার ২৩১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনের কারণে আনুমানিক ৩৭০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে, যা ১৫ টন পণ্য বহনকারী ডাবল এক্সেল ট্রাককে মানদণ্ড ধরে হিসাব করা হয়েছে। তবে লোড পরিমাপের জন্য বর্তমানে শুধু সীতাকুণ্ড এক্সেল লোড স্টেশন সম্পূর্ণ চালু রয়েছে। বাকি তিনটি স্টেশন দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অথবা দুর্নীতিবাজ অপারেটরদের সহায়তায় অচল করে দেওয়া হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি এই মহাসড়কে অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনের কারণে যে ভয়াবহ ক্ষতি হচ্ছে- তার কেবল একটি ক্ষুদ্র অংশ তুলে ধরা হয়েছে গবেষণায়। কারণ দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ আমদানি-রপ্তানি হয় এই মহাসড়ক ব্যবহার করে। গবেষণা দলের প্রধান ড. মোহাম্মদ মোহসিন হাওলাদার বলেন, যদি অতিরিক্ত বোঝাইয়ের কারণে সড়ক দুর্ঘটনা, যানবাহনের ক্ষতি, নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত ক্ষমতার অপব্যবহারজনিত অপচয়, যাত্রাকাল বৃদ্ধি এবং কার্বন নিঃসরণ বিবেচনায় নেওয়া হতো, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি হতো। এ ছাড়া মহাসড়কের বড় ধরনের সংস্কার ও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অতিরিক্ত ব্যয়ও এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

 অংশীজনদের এক সভায় তিনি বলেন, অতিরিক্ত বোঝার কারণে ডাবল এক্সেল যানবাহনের ক্ষতি ৭ দশমিক ৪ গুণ, তিন এক্সেল যানবাহনের ক্ষতি ২ দশমিক ২৭ গুণ, চার এক্সেল যানবাহনের ক্ষতি ২ দশমিক ৩ গুণ বেশি হয়। সীতাকুণ্ড এক্সেল লোড স্টেশন থেকেও দেখা গেছে নিয়মিতভাবে অনুমোদিত সীমা ভেঙে অতিরিক্ত পণ্য বহন করা হচ্ছে। তিনি জানান, ২০১৯ সালে সরকার চার এক্সেল যানবাহনের অনুমোদিত সীমা ৩৩ টন থেকে বাড়িয়ে ৪০ টন করলেও অনেক গাড়ি ৪৪ থেকে ৫২ টন পর্যন্ত বহন করে এবং জরিমানা দিয়ে বৈধতা পায়। অভিযোগ আছে, ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সঙ্গে আপস করে ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সরকার এক্সেল লোড নীতিমালা কয়েকবার পরিবর্তন করে। এতে সাবেক মন্ত্রী ও পরিবহন নেতা শাজাহান খান এবং মশিউর রহমান রাঙ্গার নাম উঠে আসে।

জানা গেছে, ভারতে ডাবল এক্সেল যানবাহনে সর্বোচ্চ লোড ১৮ দশমিক ৫ টন এবং তিন এক্সেল যানবাহনে ২২ টনের বেশি পণ্য বহন করা যায় না। সেখানে বাংলাদেশে ২২ থেকে ৩০ টন পর্যন্ত বহন করা হয়। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ডাবল এক্সেল যানবাহনের জন্য ১৫ টনের অনুমোদিত সীমার বিপরীতে ২২ টন বহনের অনুমতি দেয় এবং সাত এক্সেল বা ১৪ চাকার গাড়ির ক্ষেত্রে তা ৪০ টনে উন্নীত করে। তবে ২০১৯ সালে সাত এক্সেল যানবাহনগুলো ৩৫ টনের অনুমোদিত সীমার পরিবর্তে ৫০ টন পর্যন্ত বহন করছে, যার বিনিময়ে নামমাত্র জরিমানা দিয়ে ছাড় পাচ্ছে। ডাবল এক্সেল, সামনে দুটি ও পেছনে দুটি চাকার যানবাহন সাধারণত ৫.৫ টন ও ১০ টন বহন করতে পারে, তবে এক্সেল সংখ্যা বাড়লে বহনের ক্ষমতাও বাড়ে।