Image description

রাজধানীর ইব্রাহিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে একটি চারতলা মার্কেট রয়েছে। প্রতি মাসে সেই মার্কেট থেকে কমপক্ষে দেড় লাখ টাকা ভাড়া আদায় করা হয়। কিন্তু স্কুল ফান্ডে খুবই যৎসামান্য জমা হয়। এমনকি ঝুঁকিপূর্ণ এই মার্কেটটি যেকোনো সময় ধসে পড়ারও শঙ্কা রয়েছে। স্কুল চলাকালে মার্কেটের লোকজন অবাধে চলাচল করে। ফলে নিরাপদ নয় শিশুরাও।

স্কুলের জমিতে মার্কেট, মহালুটপাটসূত্র জানায়, বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সোয়া ৬০০ ও শিক্ষক ১৭ জন। স্কুলটির সামনে একটি চারতলা বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে। এই ভবনের নিচ দিয়ে সাত ফুট চওড়া গেট দিয়ে শিক্ষার্থীরা ঢুকে ও বের হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই স্কুলের আগের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন রোকেয়া ইউসুফ। আর আওয়ামী লীগের নেতা মো. ইসমাইল হোসেন ছিলেন সহসভাপতি। যিনি একসময় স্কুলটির সভাপতিও ছিলেন।

তাঁর নির্দেশেই মূলত মার্কেটটি পরিচালিত হতো। মার্কেট থেকে প্রতি মাসে দেড় লাখ টাকা ভাড়া আদায় হলে গত ১৫ বছরে দুই কোটি ৮০ লাখ টাকা ভাড়া আদায় হওয়ার কথা। কিন্তু মার্কেট থেকে আয় বাবদ বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের ইব্রাহিমপুর শাখায় মার্কেট ভাড়া বাবদ ২০ লাখ ৬৪ হাজার ৫১৭ টাকা জমা আছে। যদিও এখন আগের কমিটি নেই, নতুন অ্যাডহক কমিটি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, স্কুলটির সমস্যা সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

গত ৪ মার্চ সেনানিবাস থানা শিক্ষা অফিসার শাহীনা আক্তার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর একটি চিঠি দেন। সেখানে বলা হয়, বিভিন্ন পরিদর্শনে ইব্রাহিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাণিজ্যিক ভবনের স্থাপনার বৈধতা ও আয়-ব্যয়সংক্রান্ত তথ্য জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এড়িয়ে যান। একই প্রশ্ন আগের ম্যানেজিং কমিটিকে করলেও তারা ক্ষিপ্ত হয়েছে। এ ছাড়া আগের ম্যানেজিং কমিটিও বিধি মেনে হয়নি। 

চিঠিতে বলা হয়, এই মার্কেটের ব্যাপারে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে তদন্ত করা হয়। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, দোকান ও অফিস ভাড়ার কোনো চুক্তিপত্র নেই। কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের যৌথ স্বাক্ষরে ব্যাংক হিসাব পরিচালিত হলেও ভাড়া বাবদ প্রাপ্ত অর্থ সঠিকভাবে জমা ও উত্তোলনের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বাণিজ্যিক ভবনটিতে রাজউকের অনুমোদন নেই। ভবনটির অবস্থা নাজুক, যেকোনো সময় ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া স্কুলের সামনে উঁচু এ ভবনটি থাকায় বিদ্যালয়টি দৃষ্টিগোচর হয় না ও পাঠদানের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। অনুমোদনহীন ভবনটি অপসারণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

থানা শিক্ষা অফিসের চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, স্কুলের আর্থিক হিসাব বিবরণী থেকে দেখা যায়, বিভিন্ন দোকান থেকে ১৬ লাখ ২৮ হাজার টাকা ভাড়া বকেয়া রয়েছে। যদিও এ হিসাব সঠিক কি না তা প্রশ্নবিদ্ধ।

স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির সদ্য সাবেক সভাপতি রোকেয়া ইউসুফ কালের কণ্ঠকে বলেন, মূলত ভাড়াটিয়াদের টাকায়ই ভবনটি হয়েছে। তাই তারা খুব কম টাকা ভাড়া দেয়। এ ছাড়া এই টাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। ফলে খুব বেশি উদ্বৃত্ত থাকে না। তবে ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সহসভাপতি মো. ইসমাইল হোসেনের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

স্কুলটির প্রধান শিক্ষক নাসরিন সুলতানা কালের কণ্ঠকে বলেন, আমি ২০১৭ সালের জুন মাসে যোগদান করেছি। তবে মার্কেটটি হয়েছে অনেক আগে। আমার সময়ে আমি বলতে পারি, স্কুলের উন্নয়ন ছাড়া এক টাকাও অন্য কাজে ব্যয় করা হয়নি। আর দোকানদাররা কোনো ক্যাশ টাকা দেন না। তাঁরা ব্যাংকে ভাড়ার টাকা জমা দিয়ে আমাদের রসিদ দিতেন। তবে বর্তমানে অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ থাকায় দোকানদাররা ভাড়ার টাকা জমা দিচ্ছেন না।

থানা শিক্ষা অফিসার শাহীনা আক্তার কালের কণ্ঠকে বলেন, আমি ২০২৩ সালে এ থানায় যোগদানের পরই স্কুলটির মার্কেট ভাড়া নিয়ে নানা অনিয়ম ধরা পড়ে। মার্কেট ভাড়া জমা রাখার জন্য অ্যাকাউন্ট আছে, অথচ সেটা অধিদপ্তর জানে না। আমাকে জানানো হলো, মার্কেটটি স্কুলের জায়গায় নয়। অথচ আমি কাগজপত্র বের করে দেখলাম, এটি স্কুলের জায়গায়ই আছে। পরে আমি অ্যাকাউন্টে থাকা ২১ লাখ টাকার মতো জব্দ করেছি। স্কুলটির নানা অনিয়ম ধরার কারণে আমি নিজেই রোষানলে পড়েছি।