Image description

জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আকতার হোসেন বলেন, ‘আমরা জানি দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে একটি বাংলাদেশ পেয়েছি। সেই সঙ্গে সম্প্রতি গণঅভ্যথানের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি নতুন বাংলাদেশ। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই আমরা প্রত্যাশা করি—একদিন ফিলিস্তিনের মাটিতেও জুলাই নেমে আসবে। তারা মুক্ত হবে, স্বাধীনতা অর্জন করবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আমাদের আহ্বান—এই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।’ 

আজ সোমবার (৭ এপ্রিল) রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে জাতীয় নাগরিক পার্টি ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এক বিক্ষোভ মিছিলে গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন এবং ভারতের ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আকতার হোসেন বলেন, ‘আজ মানবতার দায় থেকে বাংলাদেশের নাগরিকরা রাজপথে দাঁড়িয়েছে। আমরা দেখেছি, ভারতে যে ওয়াকফ বিল পাস হয়েছে সেটির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয়ভাবে মুসলিমদের দুর্বল করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। মুসলমানদের মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থানসহ ধর্মীয় সম্পত্তি এখন ভারত সরকার সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করছে। আইনগত নানা কৌশলের মাধ্যমে ভারত সরকার, ওয়াকফ সম্পত্তির সামাজিক ও ধর্মীয় স্বীকৃতিকে খর্ব করে একটি ঘৃণ্য চক্রান্ত বাস্তবায়নের পথ উন্মুক্ত করেছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে আমরা ভারতের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারত সরকার এনআরসি ও সিএ-এর মাধ্যমে মুসলমানদের নাগরিকত্ব বাতিল করার উদ্যোগ নিয়েছে। আগে মুসলমানরা নিজেদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান—মসজিদ, মাদ্রাসা ও খানকাহ—স্বাধীনভাবে পরিচালনা করত। কিন্তু বর্তমানে ভারত সরকার সেই সম্পত্তিগুলো অমুসলিমদের হাতে তুলে দিয়ে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি বৈষম্যমূলক ও নিপীড়নমূলক পদক্ষেপ।’

তিনি জানান, ‘ভারতের মুসলমানরা এ ধরনের বৈষম্যমূলক বিলের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করছে। আমরা তাদের এই প্রতিবাদের প্রতি পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করছি।’

আকতার হোসেন ইসরায়েল প্রসঙ্গে বলেন, ‘ইসরায়েল এখনো উপনিবেশিক মানসিকতা লালন করে নির্দিষ্ট একটি জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তারা মানবতাবিরোধী অপরাধের সব সীমা অতিক্রম করেছে। স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, এমনকি হাসপাতালেও তারা বর্বরভাবে বোমা হামলা চালাচ্ছে। ফিলিস্তিনে এত বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক হত্যা করা হয়েছে যা বিশ্বে নজিরবিহীন। এই বর্বরতা কোনো বিবেকবান মানুষ মেনে নিতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা জানি দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে একটি নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই আমরা প্রত্যাশা করি—একদিন ফিলিস্তিনের মাটিতেও জুলাই নেমে আসবে। তারা মুক্ত হবে, স্বাধীনতা অর্জন করবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আমাদের আহ্বান—এই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইসরায়েলের সাথে আমাদের কোনো ধরনের বন্ধুত্ব হতে পারে না। বিগত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার যেসব গোয়েন্দা যন্ত্রপাতি ইসরায়েল থেকে গোপনে বা প্রকাশ্যে কিনেছে সেগুলো আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। অতীতে যদি কোনো চুক্তি হয়ে থাকে সেগুলো অবিলম্বে বাতিল ঘোষণা করতে হবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের সামর্থ্য অনুযায়ী ফিলিস্তিনের পক্ষে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’
শেষে তিনি বলেন, ‘আমি বেশি কিছু বলতে চাই না—মজলুমের ঐক্যের চেয়ে বড় কোনো ঐক্য নেই। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকতে চাই। 

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্য সচিব মোহাম্মদ আলামীন বলেন,‘আর নয়! ইসরায়েলকে আর কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতি আমাদের সুস্পষ্ট বার্তা—আপনারা যদি মানবাধিকারের কথা বলেন তবে ফিলিস্তিনের ক্ষেত্রেও আপনাদের অবস্থান স্পষ্ট ও দৃঢ় হতে হবে। একদিকে মানবতার বুলি আর অন্যদিকে নির্যাতনের নীরব সহমত—এ দ্বিচারিতা আমরা মেনে নেব না।’

এই সময় যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন বলেন,‘আজকের এই সমাবেশে শুধু এনসিপি নয় দেশের নানা প্রান্ত থেকে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন এক কণ্ঠে রাস্তায় নেমে এসেছে। আমরা বাংলাদেশে ‘আওয়ামী’ নামধারী ফ্যাসিবাদকে বিদায় জানিয়েছি। তাই এখন সময় এসেছে, বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে ঘটে যাওয়া নিপীড়ন ও গণহত্যার বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করা। এই গণহত্যার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধই পারে মানবাধিকার রক্ষা করতে।’

যুগ্ম আহ্বায়ক তাসনিম জাহিন বলেন,‘আজ পুরো বিশ্ব থমকে গেছে গাজার নারকীয় গণহত্যার সামনে। নিষ্পাপ শিশুদের ছিন্নভিন্ন দেহ—যাদের কারও নেই মাথা, কারও নেই হাত-পা—সেই অবয়বকেই আজ দাফন করতে হচ্ছে তাদের পরিবারকে। এই পাশবিকতা মানবতার সমস্ত সীমা লঙ্ঘন করেছে। অথচ তথাকথিত মানবাধিকারের দাবিদার আমেরিকা নীরব। আমরা আমাদের ভাইবোনদের এইভাবে নিঃসহায় মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারি না। আমাদের মানবতা আজ চ্যালেঞ্জের মুখে।’

প্রসঙ্গগত, বিক্ষোভ মিছিলে গাজায় চলমান হত্যাযজ্ঞের নিন্দা জানিয়ে বক্তারা আরও বলেন,‘গাজায় যেভাবে নিরীহ মানুষ—বিশেষ করে নারী ও শিশু—নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে, তা একবিংশ শতাব্দীর মানবতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আমরা আজ বুঝতে পারছি, সংঘবদ্ধ শক্তি যখন নিষ্ঠুরতার পথে হাঁটে তখন তা কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। আমরা ইসরায়েলের বিভীষিকা সরাসরি না দেখলেও, বাংলাদেশের জনগণ বিগত ১৬ বছরে যে দমন-পীড়ন, দুর্নীতি ও গুম-খুন দেখেছে, তা থেকে অনুমান করা যায় এমন রাষ্ট্রীয় বর্বরতা কতটা ভয়াবহ হতে পারে।’

তারা আরও বলেন আমরা গাজায় সংঘটিত সমস্ত হত্যাকাণ্ড ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার চাই। এই দাবি আমরা কেবল মুসলমান হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে করছি। মুসলমানরাও মানুষ—এ কথাটি যেন বিশ্ব বিবেক ভুলে না যায়। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর নীরবতা আমাদের হতাশ করে। আজ যদি ভুক্তভোগীরা ইহুদি হতো, তবে গোটা বিশ্ব একজোট হয়ে প্রতিবাদে মুখর হতো। কিন্তু মুসলমানদের ক্ষেত্রে সে প্রতিক্রিয়া আমরা দেখি না—এ দ্বিচারিতা গ্রহণযোগ্য নয়।’

বিক্ষোভ মিছিল থেকে গাজার গণহত্যার বিরুদ্ধে মুহুর্মুহু প্রতিবাদী স্লোগান ধ্বনিত হতে থাকে। বিক্ষুব্ধ জনতা গর্জে উঠে বলে—‘তুমি কে, আমি কে? ফিলিস্তিন! ফিলিস্তিন!’, ‘ওআইসি কি করে? ফিলিস্তিনে মানুষ মরে!’, ‘জাতিসংঘ কি করে? ফিলিস্তিনে মানুষ মরে!’। এসময় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানাতে তারা আরও স্লোগান তোলে—‘One, two, three, four — Genocide no more!’ এবং ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ! জিন্দাবাদ, জিন্দাবাদ!’।