Image description
সারা দেশে ১৪৯৯ মামলা, হত্যা মামলা ৫৯৯

জুলাই-আগস্ট আন্দোলন পরবর্তী সারা দেশে ১ হাজার ৪৯৯টি মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় হত্যা, হত্যাচেষ্টা, হামলা ভাঙচুর, মারধর, অগ্নিসংযোগ, ভয়ভীতি প্রদর্শন, লুটপাট, চাঁদাবাজি ও দখলবাজির অভিযোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে হত্যা মামলা হয়েছে ৫৯৯টি আর অন্যান্য মামলা হয়েছে ৯০০টি। ৫৯৯টি হত্যা মামলার মধ্যে ৬০ ভাগ মামলার তদন্ত শেষের দিকে। এর মধ্যে ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঢাকাসহ সারা দেশের থানা ও নিম্ন আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে ৩২৪টি। এসব মামলার প্রধান আসামিরা হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, শেখ হাসিনার সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, এসবির সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম, ডিএমপির ডিবির সাবেক প্রধান হারুন উর রশিদসহ আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। তবে বেশকিছু হত্যা মামলায় পতিত সরকারের নির্বাহী বিভাগের প্রধান শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে হত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ আনা হচ্ছে।

হত্যা মামলার মধ্যে ৬০ ভাগ মামলার তদন্ত শেষের দিকে বলে পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। মামলাগুলো দ্রুত গতিতে তদন্ত করার জন্য সারা দেশে প্রত্যেকটি রেঞ্জ ও মেট্রোপলিটন সমন্বিত এলাকার জন্য একজন করে অতিরিক্ত ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে সভাপতি করে ১০টি মেন্টর (পরামর্শক) কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স থেকে স্বয়ং আইজিপির উপস্থিতিতে প্রতিদিন বিভিন্ন মেন্টর কমিটির সঙ্গে নিয়মিত সভা করে মামলার তদন্ত কাজে নিবিড় মনিটরিং ও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী অবসরপ্রাপ্ত অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসার ও বিজ্ঞ আইনজীবীদের কাছ থেকে নিয়মিত পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।

মামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশপ্রধান (আইজিপি) বাহারুল আলম গতকাল সন্ধ্যায় ইত্তেফাককে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যেসব মামলা হয়েছে সেগুলোর তদন্ত দ্রুত এবং স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এজন্য নানাভাবে আমরা মামলাগুলোর তদন্ত তদারকি করছি। ইতিমধ্যে বেশকিছু হত্যা মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে ৬০ ভাগ মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। আমরা আশা করছি, এপ্রিলের শেষ দিকে দুটি হত্যা মামলা তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা যাবে। মে মাসে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মামলার তদন্ত শেষ হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, নিরীহ কেউ যাতে মামলার চার্জশিটে আসামি না হয় সেজন্য আমরা তদন্ত কর্মকর্তা এবং তদারকি কর্মকর্তাদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছি। আমরা চার্জশিট তৈরি করে পিপি ও আইন বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠাব। তারা চার্জশিটে কোনো ভুল-ত্রুটি থাকলে সে বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দেবেন। এরপরই পুলিশ মামলার চার্জশিট দাখিল করবে আদালতে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, হত্যা মামলার মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) থানাগুলোয় সর্বাধিক ৩৩৩টি মামলা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা রেঞ্জে ১৪৮টি, চট্টগ্রাম রেঞ্জে ২০টি, রাজশাহী রেঞ্জে ২২টি, সিলেট রেঞ্জে ১৫টি, জিএমপিতে ১৬টি, সিএমপিতে ১০টি, এসএমপিতে তিনটি, খুলনা রেঞ্জে ১০টি, রংপুর রেঞ্জে আটটি, আরএমপিতে পাঁচটি এবং ময়মনসিংহ রেঞ্জে সাতটি মামলা রুজু হয়েছে। ঢাকার থানাগুলোতে ৩৮৮টি, ঢাকা মহানগর আদালতে ৫২টি মামলা দায়ের হয়েছে। ঐ সব মামলায় প্রধান আসামি শেখ হাসিনা। জানা গেছে, ঢাকায় যাত্রাবাড়ী থানায় ১১২টি, মোহাম্মদপুর ১৩টি, মিরপুর ১৬টি, ধানমন্ডি ৯টি, শাহবাগ থানায় আটটি, ওয়ারিতে পাঁচটি, চকবাজার ছয়টি, উত্তরা পশ্চিম থানায় ১২টি ও উত্তরা পূর্ব থানায় আটটি মামলা দায়েরের খবর পাওয়া গেছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কতটি মামলা দায়ের হয়েছে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের একজন পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৩২৪টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকাতেই মামলা হয়েছে ২৯৭টি আর ঢাকার বাইরে ২৭টি।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একটি মামলার চার্জশিট চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেছে। মামলাটি হলো গত জুলাই-আগস্টে সারা দেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সরকারের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়সংক্রান্ত। এ মাসেই ট্রাইব্যুনালে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত তিনটি মামলার তদন্ত চূড়ান্ত হয়েছে। এর মধ্যে প্রথমে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হবে আশুলিয়া থানার মধ্যে গাড়িতে ছয় জনকে পুড়িয়ে হত্যার তদন্ত রিপোর্ট। এরপর রাজধানীর চানখারপুলে হত্যার তদন্ত রিপোর্ট। এরপর যে তদন্ত রিপোর্ট দেওয়া হবে সেটি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। এটি একটি পৃথক রিপোর্ট হবে। যেখানে শেখ হাসিনাকে সুপেরিয়র রেসপন্সসিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দায়) অভিযোগে সারা দেশে যে গণহত্যা হয়েছে সেই অভিযোগে অভিযুক্ত করা হবে। সবগুলো মামলাতে শেখ হাসিনাকে আনা হবে না, একটি মামলার মধ্যে তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো উপস্থাপন করা হবে। সেখানে আমরা অভিযোগ প্রমাণের পর্যাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ পেয়েছি। আমাদের কাছে যে অকাট্য প্রমাণ এসেছে, তাতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ একাধিকবার প্রমাণ করা যাবে।’