Image description

আসছে ডিসেম্বরেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এই লক্ষ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছে সাংবিধানিক সংস্থাটি। এরই অংশ হিসেবে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণের জন্য আইনি জটিলতা দূর করতে সংশোধিত খসড়া আইন তৈরি করে ইসি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে খসড়াটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু ইসি’র এই প্রস্তাব প্রত্যাহার করেছে আইন মন্ত্রণালয়। ফলে সীমানা পুনঃনির্ধারণ কাজে হাত দিতে পারছে না নির্বাচন কমিশন। এমন প্রেক্ষাপটে আগের সীমানায় ভোটের প্রস্তুতি নেয়ার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। 
ইসি সূত্র জানায়, জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে সীমানা পুনঃনির্ধারণের জন্য ইসিতে আবেদন আসতে শুরু করে। এখন পর্যন্ত ৬০টি সংসদীয় আসন থেকে ৪০০’র মতো আবেদন এসেছে। বেশির ভাগ আবেদন করা হয়েছে ২০০১ সালের সীমায় ফেরানোর জন্য। ইসি’র কর্মকর্তারা জানান, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে ইসি’র ক্ষমতা সীমিত হয়ে যাওয়ায় ২০২১ সালে পাস হওয়া আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয় ইসি। গত ২৭শে জানুয়ারি ইসি’র আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটির বৈঠকে খসড়াটি অনুমোদন করা হয়। পরে ১২ই ফেব্রুয়ারি তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। 

সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রস্তাবে বিদ্যমান আইনের ৪, ৬ ও ৮ নম্বর ধারায় সংশোধনের পরামর্শ দেয়া হয়। এর মধ্যে মূল সংশোধনটি হচ্ছে ৮ (৩) ধারায় উপধারা (১)-এর স্থলে উপধারা (২) করা। বিগত কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন ৮ (৩) উপধারায় সংশোধনীর মাধ্যমে সীমানায় বড় ধরনের রদবদলের পথ বন্ধ করেছিল। অর্থাৎ এর ফলে ইসি চাইলেও সীমানায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারতো না। 

সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার মানবজমিনকে বলেন, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ আইনটি সংশোধনের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। মন্ত্রণালয় আমাদের প্রস্তাবটি গ্রহণ করেনি, প্রত্যাহার করা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের তরফ থেকে আইন সংশোধন করা না হলে আগের সীমানায় ভোটের প্রস্তুতি নেয়া হবে। 

সীমানা নির্ধারণ নিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাব দিয়েছে: এর আগে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের কাজ ইসি’র কাছে না রাখার প্রস্তাব দেয় অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গঠিত নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। তাদের প্রস্তাবনায় বলা হয়, সংসদীয় এলাকার সীমানা নির্ধারণ একটি জটিল ও সময়ক্ষেপণকারী বিষয়, যেখানে বিশেষায়িত জ্ঞান ও দক্ষতা প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশনের এই কাজের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা আছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। আর আগত নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য নির্বাচন কমিশনকে অনেক সময়-শ্রম দিতে হবে। তাই আমাদের আকাঙ্ক্ষা যে, সংসদীয় এলাকার সীমানা নির্ধারণের মতো কঠিন ও কষ্টসাধ্য কাজে সময় ব্যয় করার পরিবর্তে নির্বাচন কমিশন আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতিতে সর্বশক্তি নিয়োগ করুক। এজন্য নির্বাচন কমিশনের পরিবর্তে একটি আলাদা সীমানা নির্ধারণ কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছে সংস্কার কমিশন। 

নির্বাচনী প্রচারণায় থাকছে না পোস্টার: এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত না নিয়েই নির্বাচনী আচরণবিধির একটি খসড়া তৈরি করেছে নির্বাচন কমিশন। খসড়াটি প্রায় চূড়ান্ত। এখন এটি অনুমোদনের জন্য কমিশনে জমা দেয়া হবে। অনুমোদনের পর তা সর্বসাধারণের জন্য প্রকাশ করা হবে। সংসদীয় সীমানা পুনঃনির্ধারণ, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনসহ নির্বাচনের ছয়টি বিষয় নিয়ে গঠিত কমিটি গতকাল আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে একটি সভা করে। সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার এসব কথা জানান। তিনি বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধির খসড়া প্রায় চূড়ান্ত। খসড়াটি চূড়ান্ত করে আমরা কমিশনে প্লেস করবো, কমিশন অনুমোদন দিলে প্রকাশ হবে। আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সংস্কার কমিশনের বিধি নিয়ে যে প্রস্তাবগুলো রয়েছে, যেমন-স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ নতুন কিছু বিষয় আমরা ইনকরপোরেটে করার উদ্যোগ নিয়েছি। এটি একটি চমৎকার আচরণবিধিমালা হবে। তিনি বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রচারণায় পোস্টার থাকছে না। নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবটা অনেকটা এরকম।

আমরা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবকে ভালোই মনে করছি। খসড়া আচরণবিধিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের অলমোস্ট সবগুলোই আমরা আচরণবিধির খসড়ায় ইনকরপোরেটে করেছি। আচরণবিধি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেয়া হয়েছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা একটা ভালো প্রশ্ন। আমরা পরবর্তীতে বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে এ নিয়ে বসবো। অবস্থাই (পরিস্থিতিই) আমাদের বলবে কী করতে হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমাদের তো প্ল্যান আছে কবে কি করবো। এই যে আমরা মিটিং করছি। এটাও প্ল্যানিংয়ের অংশ।