
আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদকে গ্রেপ্তারের গুজব নিয়ে বিস্তারিত জানালেন তিনি। আজ মঙ্গলবার এক টকশোতে এ বিষয়ে নিজের অভিমত তুলে ধরেন ফুয়াদ।
ফুয়াদ বলেন, "সেহেরির খাওয়ার জন্য উঠেছি, তখন ধরেন সোয়া ছয়টা সোয়া চারটা বাজে আর কি। উঠেই দেখলাম, আপনার ফোন রীতিমত কাঁপতেছে। একের পর এক ফোন আসতেছে, ফোনটা প্রচণ্ড গরম হয়ে আছে। দেখি ১৮০ এর মতো কল!"
তিনি আরো জানান, "বাংলাদেশ একটা মুক্তির লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে ৭১ সালে স্বাধীন হয়েছে। রাস্তায় না বের হয়ে থাকলে কেউ সিম্পলি বুঝবে না যে ১৬ বছরের একটা ফ্যাসিবাদী জগৎদল পাথর বুক থেকে নেমে গেছে, শুট অন সাইড, স্নাইপারের গুলি। মানে আমরা তো পলাতক, মানে ডিফেক্ট যেটাকে বলে, আর কি, ওই লেভেলে পলাতক ছিলাম। আমাদেরকে সবাই খুঁজে বেড়াচ্ছে, হন্যে হয়ে প্রত্যেকটা এজেন্সি খুঁজে বেড়াচ্ছে। মানে দেখামাত্র গুলি করে মেরে ফেলার জন্য বলা হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা থেকে।"
গত রাতে সারারাত আপনার গ্রেপ্তারের খবর এবং জরুরি অবস্থা জারি হওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল, এমনকি ব্যাপক উত্তেজনাও সৃষ্টি হয়েছিল।উপস্থাপক প্রশ্ন করেন, "কি হয়েছিল আসল ঘটনা?"
উত্তরে ফুয়াদ বলেন, "আমি আসলে যখন সেহেরির জন্য উঠেছি, তখন ধরেন সোয়া চারটা বাজে। উঠে দেখতেছি যে ফোন রীতিমত কাঁপতেছে, একের পর এক ফোন আসতেছে, ফোনটা প্রচণ্ড গরম হয়ে আছে। দেখি ১৮০ এর মতো কল! নরমালি সেহরি হওয়ার সময় তো কেউ কাউকে খুব বেশি ফোন দেয় না। তো এক-দুইটা গুরুত্বপূর্ণ ফোন দিয়েছি, বুঝার চেষ্টা করতেছি কি হচ্ছে। সবাই বলছে, আপনি কোথায়, আপনাকে কি ডিজিএফআই তুলে নিয়েছে? অথবা ডিবি, এসবি, এনএসআই কেউ তুলে নিয়েছে কি?"
তিনি আরও বলেন, "আমি তো বাসায় আম্মার সাথে সেহরি খাবো এখন। বলতেছে পুরো অনলাইন তো ছেয়ে গেছে যে আপনার গ্রেফতারের গুজব। আমাদের দলীয় পেজ থেকে বক্তব্য দেয়া হয়েছে, আজকে দলের পক্ষ থেকে ব্রিফিং করা হয়েছে, আবার ব্রিফিংয়ে আমি থাকতে পারি নাই। আমার একটা টেলিভিশন চ্যানেলে ঈদের শুটিং ছিল, ওইটা শেষ হতে দেরি হওয়ার কারণে আমি ব্রিফিংয়ে থাকতে পারি নাই। থাকতে না পারার কারণে ওই গুজবটা আবার এক্সটেনশন চলে সারা বিকাল ধরে, এবং সেটা আবার উত্তর দিতে হয়েছে। বিকালে আবার একটা ইফতার পার্টিতে ছিলাম, একটা রাজনৈতিক দলের কূটনৈতিকদের সম্মানে, তো ওখানে আবার গণমাধ্যম ছিল, তারা দেখেছে আর কি।"
ফুয়াদ বলেন, "আমরা এমন একটা জমানাতে বাস করছি, যে ডিসইনফরমেশন, মিস ইনফরমেশন, একটা ওয়াইড স্কেল রিয়েলিটিতে বাস করছি। এর পরে হচ্ছে, একটা পোস্ট ট্রুথ রিয়েলিটি আসলে সত্য কোনটা, ঘটনা কোনটা, আসলে কোন সত্য আছে কিনা।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা দেখলাম, যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেবার পর থেকে তাকে আন্ডারমাইন্ড করা, স্যাবোটাচ করা, তাকে হেয় করা, এইটার একটা পারসিস্টেন্ট এবং অর্কেস্ট্রেটেড অ্যাটাক আমরা দেখেছি ইন্ডিয়ান প্রপাগান্ডা মেশিন থেকে।"
"এর ধারাবাহিকতায়, আমরা দেখলাম, আমাদের কন্সুলার অফিসগুলোতে সহিংস বিক্ষোভ হয়েছে, ভাঙচুর হয়েছে, আমাদের এখানে ইসকন রিলেটেড অনেক ঝামেলা হয়েছে। চট্টগ্রামে একজন আইনজীবীকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। তবে, সবকিছুর পরেও যেটা মনে হয়েছে, মোটা দাগে আমাদের নাগরিকরা যথেষ্ট পরিপক্ষ আচরণের পরিচয় দিয়েছেন। তারা গুজব শুনেছেন কিংবা গুজবে বিশ্বাস করেছেন, করেননি। এর বাইরেও মোটা দাগে কোন বড় ঘটনা ঘটে নাই।"
এ সময় উপস্থাপক প্রশ্ন করেন, "ফুয়াদ, আপনাকে আসলে খুব স্পেসিফিকালি টার্গেট করা হয়েছে। সারারাত ভর শুধু একজন ব্যক্তিকে, আমরা গ্রেপ্তারের গুজব শুনেছি। আপনি কি মনে করেন, কেন আপনার প্রতি ঘিরেই এই চক্র কাজ করছে?"
ফুয়াদ বলেন, "একটা হতে পারে, ধরেন আমার দুইটা বক্তব্য সেনাবাহিনীকে এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নিয়ে রিসেন্টলি ভাইরাল হয়েছে। একটি বক্তব্য দেয়া হয়েছে ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট বিকালবেলা, তখন তিনটা, চারটার দিকে, আর কি। তখন তো বাংলাদেশের পরিস্থিতি যদি কেউ দেশে না থাকে, রাস্তায় না বের হয়ে থাকে, সে সিম্পলি বুঝবে না যে ১৬ বছরের একটা ফ্যাসিবাদী জগৎদল পাথর বুক থেকে নেমে গেছে।"
তিনি বলেন, "আমাদেরকে সবাই খুঁজে বেড়াচ্ছে, অন্য হয়ে, প্রত্যেকটা এজেন্সি খুঁজে বেড়াচ্ছে। দেখে-মাত্র গুলি করে মেরে ফেলার জন্য বলা হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা থেকে।"
ফুয়াদ আরও বলেন, "এবং সেই বাস্তবতায়, আমি অবশ্যই আউট অফ টেম্পার ছিলাম।"
তিনি বলেন, "এবং দ্বিতীয়ত, আমার দুই-তিন দিন আগের একটা টকশো, যেখানে আমি গোয়েন্দা সংস্থা এবং আমাদের আর্ম ফোর্সেসের ইনক্লুসিভ পলিটিক্স নিয়ে কথা বলেছি।"
"আমি মনে করি যে, বাংলাদেশ একটা মুক্তির লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে ৭১ এ স্বাধীন হয়েছে। আমার সংবিধানে আমার ঘোষণাপত্রে লেখা ছিল, আমি এই রাষ্ট্রটাকে রিপাবলিক করতে চাই, জনগণের রাষ্ট্র বানাতে চাই। জনগণের রাষ্ট্রে কোন কিছু সমালোচনার ঊর্ধ্বে থাকতে পারবে না।"