
পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি ছিল। গুরুত্বপূর্ণ নানান মামলা তদন্ত করতে গিয়ে অবৈধ উপায়ে করেছেন সম্পদের পাহাড়। নিজ নামে ছাড়াও স্ত্রী-সন্তানদের নামে গড়েছেন সম্পদ। বলছি পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উত্তম কুমারের কথা।সিআইডির সাবেক এই কর্মকর্তার অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন— দুদক। প্রাথমিক অনুসন্ধানে তার বিপুল সম্পদের খোঁজ মিলেছে। এরইমধ্যে উত্তম কুমারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালদুদক সূত্র ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছে, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা উত্তম কুমারকে তার সম্পদ বিবরণী জমা দিতে বলা হয়েছিল। আর প্রাথমিক তদন্তে যেসব সম্পদের খোঁজ মিলেছে তার ব্যাখা এবং কীভাবে এতো সম্পদের মালিক হলেন তার জবাব চাওয়া হবে। এরই মধ্যে রাজধানীর বেইলি রোডে থাকা নিজের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটটি বিক্রি করে দিয়েছেন বলেও দৃষ্টিগোচর হয়েছে দুদকের।
সূত্র বলছে, উত্তমের দেশত্যাগ ঠেকাতে গত ৩০ মে যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল তার মেয়াদ ছিল দুই মাস। পুনরায় আবেদন দিয়ে সেই মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
জানা গেছে, সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) থেকে পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হন উত্তম কুমার বিশ্বাস। চাকরিজীবনে একটি বড় অংশই তার কেটেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডিতে। অবসরের কিছুদিন আগে তিনি র্যাবে ছিলেন, পরবর্তীতে তাকে পুনরায় সিআইডিতে বদলি করা হয়। ২০২৩ সালের শেষ দিকে তিনি অবসরে যান।
দুদক বলছে, ঢাকায় চারটি ফ্ল্যাট, বাড়ি, ব্যাংকে অঢেল টাকা রয়েছে পুলিশের সাবেক এই কর্মকর্তার। এছাড়া গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়ায় জমিসহ আছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা। তবে দুদকের জালে আটকা পড়ার ভয়ে নামে-বেনামে থাকা বিপুল অর্থ তুলে নিয়েছেন উত্তম কুমার, যার পরিমাণ প্রায় ৫৫ কোটি টাকা।দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘উত্তম কুমারের বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষ হয়েছে। তাকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে বলার পর তিনি তা করেছেন। সেগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। এরপর মামলা হবে নাকি কমিশন কি সিদ্ধান্ত নিবে তা জানতে আরও সময়ে লাগবে।’
মামলা সংশ্লিষ্ট দুদকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘যাচাইকারী হিসেবে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ পেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে মামলা হবে কিনা এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে প্রাথমিকভাবে তার বিপুল সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। সেগুলো তাকে জবাব দিতে বলা হয়েছে। তিনি জবাব দিতে সময় চেয়েছেন। যদি তার দেওয়া তথ্যে কোনো অসঙ্গতি থাকে তাহলে আমরা মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে মামলা করব।’উত্তমের অবস্থান জানতেই চাইলে দুদকের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তিনি কোথায় জানি না। তবে যতটুকু জানি দেশেই আছেন। কারণ, তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যা অনির্দিষ্টকালের জন্য বলবৎ রয়েছে।’
চাকরিজীবনে সিআইডিতে থাকাকালে স্বর্ণ চোরাচালানে হওয়া অনেক মামলা তদন্ত করেছেন উত্তম কুমার। অভিযোগ আছে, তিনি আলোচিত বেশ কিছু মামলার তদন্ত করে কামিয়েছেন মোটা অংকের টাকা। আলোচিত যুবলীগ নেতা মিল্কি হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন উত্তম কুমার। এই মামলা তদন্তের সময় রাজনৈতিক, ব্যবসায়ীসহ অনেককে আসামি করার ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
কবে পুলিশে আসেন উত্তম
মাগুরার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা উত্তম কুমার ১৯৮৯ সালে এসআই পদে পুলিশে যোগদান করেন। এরপর তিনি পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পান। পরে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি পেলে তাকে সিআইডিতে পদায়ন করা হয়। এরপর র্যাব-২ প্রেষণে বদলি হন। পুনরায় সিআইডিতে বদলি হলে তিনি অবসরে যান।
দুদককেও কয়েক দফা ভুল বুঝিয়েছিলেন উত্তম
সেসময় দুদকের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞার আবেদনে বলা হয়, উত্তম কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু হয় যা এখন চলমান আছে। ইতোমধ্যে তার ও তার স্ত্রী কৃষ্ণা বিশ্বাসের নামে সম্পদ বিবরণীর নোটিশ জারি করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে বিভিন্ন ব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া বেশকিছু রেকর্ডপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তিনি দুদকের নোটিশ পাওয়ার পরপরেই অসংখ্য হিসাব থেকে সব টাকা তুলে হিসাব বন্ধ করছেন, যা সন্দেহজনক মর্মে প্রতীয়মান হয়। তিনি অনুসন্ধানের শুরু থেকে তেমন কোনো সহযোগিতা করেননি বরং বিভিন্ন সময়ে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে অনুসন্ধান কাজ ব্যাহত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন এবং অহেতুক কালক্ষেপণ করছেন।
অনুসন্ধানকালে গোপন সূত্রে জানা যায়, উত্তম কুমার সব হিসাব বন্ধ করে দেশত্যাগের পরিকল্পনা করছেন। তিনি বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধান কাজ ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এজন্য তার বিদেশগমনে নিষেধাজ্ঞা একান্ত প্রয়োজন। এরপর আদালত নিষেধাজ্ঞা দেয়। এরই মধ্যে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পুলিশ সুপারকে বিষয়টি অবহিত করে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে ঢাকাটাইমসের পক্ষ থেকে উত্তম কুমারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
(ঢাকাটাইমস