Image description

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য এই সফরকে গুরুত্ব দিচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। একইসঙ্গে বড় শক্তিগুলোর মধ্যে ‘ভারসাম্য’ রক্ষা করে পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নের বিষয়েও সজাগ রয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন যেন ভুল বার্তা না দেয়, সে বিষয়ে নজর রাখছেন কূটনীতিকরা।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক, উন্নয়ন সহযোগিতাসহ বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশের কাছে চীনের গুরুত্ব রয়েছে। একই সঙ্গে অন্যদেশগুলোকে বিভিন্ন ধরনের বার্তা দেওয়ার জন্যও চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা দরকার বাংলাদেশের।’

আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে চীনের অবস্থানের বিষয়ে বাংলাদেশের পরিষ্কার ধারণা আছে। বেইজিংয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করা হলে অন্য আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শক্তিগুলো কি প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে, সেটি আমাদের বিবেচনায় আছে।’

তিনি বলেন, ‘স্ট্র্যাটেজিক সভরেইনটি বা কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সার্বভৌম অধিকার বাংলাদেশের আছে। একই সঙ্গে চীনের বিষয়ে বাংলাদেশ কেন এবং কী প্রেক্ষাপটে কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সেটি অন্য দেশগুলোকে বিভিন্নভাবে এবং বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ব্যাখ্যা করারও প্রয়োজন রয়েছে।’

স্ট্র্যাটেজিক সভরেইনটি

যেকোনও দেশ জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে তাদের পররাষ্ট্র নীতির বাস্তবায়ন করে থাকে। জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে কোন দেশের কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সার্বভৌম অধিকার বা ক্ষমতা থাকাই হচ্ছে স্ট্র্যাটেজিক সভরেইনটি।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ হিসেবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ পৃথক দুটি রেজুলেশন প্রস্তাব করে জাতিসংঘে। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র যে রেজুলেশনটি এনেছিল সেটিতে ‘হ্যাঁ ভোট’ দিয়েছে এবং ইউরোপের রেজুলেশনে ভোটদানে বিরত ছিল। এটি একটি স্ট্র্যাটেজিক সিদ্ধান্ত এবং বাংলাদেশ সেটি নিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘তবে একইসঙ্গে আমরা গোটা বিষয়টি ইউরোপকে বুঝিয়ে বলেছি যে, বাংলাদেশ কেন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর বিষয়ে অন্য যেসব দেশের আগ্রহ রয়েছে, তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হতে পারেই। আমরা সবসময় ভারসাম্য রক্ষা করে পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়ন করে থাকি।’

তবে কূটনীতিতে এর মানে এই নয় যে, এটি সবসময় ৫০-৫০ ভারসাম্য। কখনও কখনও এটি কোনও দেশের দিকে ৬০ ভাগ বা অন্য দেশের প্রতি ৪০ ভাগ হতে পারে। যেমন জাতিসংঘ রেজুলেশনের ক্ষেত্রে হয়েছে বলেও জানান তিনি।

গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর তিনটি বৈশ্বিক উদ্যোগ আছে। সেগুলো হচ্ছে গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ, গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ, এবং গ্লোবাল সিভিলাইজেশন ইনিশিয়েটিভ। এর মধ্যে গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের বিষয়ে ২০২২ সালে বাংলাদেশকে অবহিত করেছিল চীন। প্রধান উপদেষ্টার এবারের সফরে এটি গুরুত্ব পেতে পারে।

এ বিষয়ে একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এ বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় আছে। যদি আমরা এর টেক্সট বা সারবস্তু বিবেচনায় নেই, এটিতে স্পর্শকাতর তেমন কোনও বিষয় নেই। অনেক সময়ে টেক্সট ঠিক আছে কিন্তু কনটেক্সট বা প্রেক্ষাপট ঠিক না থাকলে, সেটিতে যুক্ত হওয়া ঠিক সিদ্ধান্ত হয় না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সবদিক বিবেচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো।’

উল্লেখ্য, চীনের হাইনান প্রদেশে ২৫ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত বোয়াও (বিওএও) ফোরাম ফর এশিয়া কনফারেন্সে যোগ দেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। পরবর্তী সময়ে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার পরে বোয়াও ফোরাম কনফারেন্সে প্রধান উপদেষ্টা যোগ দেবেন বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। উভয়পক্ষ রাজি হলে এবারের সফরে একাধিক চুক্তি সই হতে পারে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।