
চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী পুরস্কার ঘোষিত সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদকে (২৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার (১৫ মার্চ) ঢাকার বসুন্ধরা মার্কেট এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) একটি টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। সিএমপির উত্তর জোনের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) আমিরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আমিরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে গ্রেফতারের অভিযানে আমিও ঢাকায় আছি। বিস্তারিত পরে জানাবো।’
তেজগাঁও থানার ওসি মো. মোবারক হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদকে বসুন্ধরা মার্কেট এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাকে চট্টগ্রাম পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে।’
সম্প্রতি ফেসবুক লাইভে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসিকে ‘পেটানোর হুমকি’ দিয়ে আলোচনায় আসেন ছোট সাজ্জাদ। এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। পরে তার অবস্থান সংক্রান্ত তথ্য পুলিশকে দিতে পারলে তথ্যদাতাকে উপযুক্ত অর্থ পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার।
কে এই সাজ্জাদ?
পুলিশ জানায়, সাজ্জাদ হোসেন বিদেশে পলাতক ‘শিবির ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত আরেক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজির ১৭টি মামলা রয়েছে। গত বছরের আগস্ট থেকে অক্টোবরে আনিস, কায়সার ও আফতাব উদ্দিন নামের তিন বালু ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যার মামলার আসামিও তিনি। গত বছরের ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা-পুলিশ অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে গ্রেফতার করে। পরের মাসের শুরুতে জামিনে বেরিয়ে আসেন। বায়েজিদ বোস্তামী থানাসংলগ্ন হাটহাজারীর শিকারপুরের মো. জামালের ছেলে এই সাজ্জাদ। সর্বশেষ গত বছরের ৪ ডিসেম্বর নগরের অক্সিজেন এলাকায় পুলিশ ধরতে গেলে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যান। এতে পুলিশসহ পাঁচ জন আহত হন।
পলাতক সাজ্জাদ ও তার প্রতিদ্বন্দ্বী আরেক সন্ত্রাসী মিজানুর রহমানের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওয়াজেদিয়া এলাকায় জড়ো হলে গত ২ মার্চ পুলিশ সেখানে গিয়ে হাজির হয়। বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমান বলেন, ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার করা হয় তিন জনকে। তবে মিজান ও সাজ্জাদকে গ্রেফতার করা যায়নি। সন্ত্রাসী সাজ্জাদ সেখানে অবস্থান করছেন খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত অভিযান শুরু করে। কিন্তু আগেই পালিয়ে যান তারা। এর মধ্যে সাজ্জাদ ও তার স্ত্রীর টিকটিক ভিডিও স্ত্রী পোস্ট করেন গত ২২ জানুয়ারি। সাজ্জাদ ওসিকে পেটানোর হুমকি দেন ২৮ জানুয়ারি।
চট্টগ্রামের একসময়ের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী খান। আলোচিত আট মার্ডার মামলার দণ্ডিত এই আসামি ২০০০ সালে একে-৪৭ রাইফেলসহ গ্রেফতার হন। ২০০৪ সালে জামিনে বেরিয়ে বিদেশে পালিয়ে যান। এ সাজ্জাদের শিষ্য হাটহাজারী থানার শিকারপুর গ্রামের মো. জামালের ছেলে ছোট সাজ্জাদ। বর্তমানে অক্সিজেন-কুয়াইশ এলাকার দখল নিয়ে লড়াই চলছে ছোট সাজ্জাদ ও অপর সন্ত্রাসী সারোয়ার হোসেন ওরফে বাবলার মধ্যে। এরই জেরে গত ২৯ আগস্ট রাতে কুয়াইশ-অক্সিজেন সড়কে মো. আনিস (৩৮) ও মাসুদ কায়ছারকে (৩২) গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পৃথক মামলার আসামি সাজ্জাদ।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাঁদা না পেলেই সাজ্জাদ গুলি করেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর বায়েজিদ কালারপুল এলাকার একটি নির্মাণাধীন ভবনে চাঁদা না পেয়ে গুলি করেন। ৬০ জন ব্যক্তি মিলে ভবনটি নির্মাণ করছেন। স্থানীয় একটি সূত্র বলছে, সাজ্জাদকে পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছেন ভবন মালিকরা।
এ ছাড়া বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন, অনন্যা, শীতলঝর্ণা, কালারপুল, বায়েজিদ থানার সীমান্তবর্তী হাটহাজারীর কুয়াইশ, নগরের চান্দগাঁও হাজীরপুল ও পাঁচলাইশ এলাকায় ১৫ থেকে ২০ জনের বাহিনী নিয়ে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাচ্ছেন সাজ্জাদ। গত ৫ জুলাই বায়েজিদ থানার বুলিয়াপাড়া এলাকায় একটি বাসা লক্ষ্য করে গুলি চালান সাজ্জাদ ও তার সহযোগীরা।
এর আগে গত বছরের গত ৫ জুলাই বায়েজিদ থানার বুলিয়াপাড়া এলাকায় একটি বাসায় গুলি করেন সাজ্জাদ তার সহযোগীদের নিয়ে। আর গত বছরের ২৭ অক্টোবর চাঁদা না পেয়ে দলবল নিয়ে মো. হাছান নামের এক ঠিকাদারের চান্দগাঁও হাজীরপুল এলাকার বাসায় গিয়েও গুলি করে সাজ্জাদ। গত ২১ অক্টোবর চান্দগাঁও থানার আদুরপাড়া এলাকায় মাইক্রোবাসে এসে দিবালোকে গুলি করে আফতাব উদ্দিন তাহসীন (২৬) নামে এক ব্যবসায়ীকে হত্যা করে সাজ্জাদ আবারও আলোচনায় আসে।
চান্দগাঁওতে ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিনকে হত্যার পর সাজ্জাদকে গ্রেফতারে তৎপরতা শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত বছরের ৫ ডিসেম্বর নগরের অক্সিজেন মোড় জালালাবাদ পেট্রোল পাম্পের পেছনে সাততলা ভবনের পঞ্চম তলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদকে ধরতে অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি চালান সাজ্জাদ। গুলিতে পুলিশের দুই সদস্যসহ পাঁচ জন আহত হন। পুলিশের ওপর গুলি চালিয়ে সাজ্জাদ চলে গেলেও তার স্ত্রী পরিচয় দেওয়া এক নারীকে আটক করা হয়।