শূন্য রিটার্নের অপব্যবহার
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভ্যাট ফাঁকিবাজদের ধরতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৯ লাখ ৪৮ হাজার ৪৮৯টি ভ্যাট রিটার্ন জমা হয়, যার মধ্যে ৮ লাখ ৪৩ হাজার ৪৭৪টি (৪৩%) ছিল শূন্য রিটার্ন। এতে সরকার কোনো রাজস্ব পায়নি।
শূন্য রিটার্নের অপব্যবহার ঠেকাতে এনবিআর ১১টি ভ্যাট কমিশনারেটকে যাচাই-বাছাই করার নির্দেশ দিয়েছে। এনবিআরের ভ্যাট বাস্তবায়ন ও আইটি শাখা থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২ এর ৬৪ ধারা এবং বিধিমালা ২০১৬ এর ৪৭ ধারার আওতায় প্রতিটি নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের জন্য মূসক-৯.১ ফরমে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক। তাই শূন্য রিটার্ন দাখিলকারীদের অনিয়ম, মামলা বা রাজস্ব ফাঁকি হয়েছে কি না, তা যাচাই করে এনবিআরে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকার একটি বড় ভ্যাট কমিশনারেটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিশনার জানান, ২০২৪ সালের শেষ ছয় মাসে দাখিল হওয়া ভ্যাটের বড় অংশই ছিল শূন্য রিটার্ন। সাধারণত বন্ডেড সুবিধা পাওয়া ব্যবসায়ী, বড় কনস্ট্রাকশন ফার্ম ও অনিয়মিত আমদানিকারকরাই এ সুবিধার অপব্যবহার করে থাকেন। অনেকে উৎসে মূসক থাকলেও তা সঠিকভাবে রিটার্নে প্রদর্শন করেন না, ফলে অডিটের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি ধরা পড়ে। তিনি আশা করেন, এনবিআরের এ উদ্যোগে শূন্য রিটার্নের সংখ্যা কমবে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি শূন্য রিটার্ন জমা পড়েছে খুলনা ভ্যাট কমিশনারেটে। এখানে মোট জমা হওয়া ১ লাখ ১৭ হাজার ৫০২টি রিটার্নের মধ্যে ৮৫ হাজার ৭১৫টি (৭২.৯৪%) ছিল শূন্য। এরপর রংপুর ভ্যাট কমিশনারেটে ৭৭ হাজার ৯৩০টি রিটার্ন জমা পড়ে, যার মধ্যে ৫২ হাজার ৯৯৩টি (৬৮%) ছিল শূন্য। যশোর ভ্যাট কমিশনারেটে জমা হওয়া ১ লাখ ২৭ হাজার ৮৯৭টি রিটার্নের মধ্যে ৮২ হাজার ৭২৬টি (৬৪.৭২%) ছিল শূন্য।
রাজশাহী ভ্যাট কমিশনারেটে জমা হওয়া ১ লাখ ২৫ হাজার ৩৩০টি রিটার্নের মধ্যে ৮০ হাজার ৪৩৪টি (৬৪.১৭%) শূন্য রিটার্ন। চট্টগ্রামে ১ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৩টির মধ্যে ১ লাখ ৯ হাজার ৫১৬টি (৫৭.২৩%) শূন্য। কুমিল্লায় ৬০ হাজার ৭৭৮টির মধ্যে ৩৩ হাজার ৮৯৫টি (৫৫.৭%) শূন্য। সিলেটে ৬৯ হাজার ৭৭৮টির মধ্যে ৩৪ হাজার ৩৭৩টি (৪৯.২৬%) শূন্য।
ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেটে ২ লাখ ২৮ হাজার ১১৫টি রিটার্ন জমা হয়, যার মধ্যে ৯৯ হাজার ৬৩টি (৪৩.৪৩%) ছিল শূন্য। ঢাকার পূর্ব ভ্যাট কমিশনারেটে জমা হওয়া ১ লাখ ২৮ হাজার রিটার্নের মধ্যে ৪২ হাজার ৭৫৬টি (৩৩.৪১%) শূন্য। ঢাকা উত্তর কমিশনারেটে জমা হওয়া ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৯৯২টি রিটার্নের মধ্যে ৯৩ হাজার ১৬৯টি (২৭.8%) শূন্য। ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটে ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৯১১টি রিটার্ন জমা হয়, যার মধ্যে ১ লাখ ২৮ হাজার ৮৩৪টি (২৬.৫২%) ছিল শূন্য।
এনবিআর মনে করছে, এসব অনিয়মের কারণে সরকার বড় অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে। তাই কমিশনারেটগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, অনিয়ম ধরা পড়লে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।