Image description
বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর গ্রহণযোগ্যতা ও গুরুত্ব বেড়েছে। সংগঠনটির নেতারাও প্রভাবশালী এবং উন্নত রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নে মনোযোগী হয়েছেন। গত সাত মাসে তারা অন্তত ১৫টি দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও কূটনীতিকদের সঙ্গে নিবিড় বৈঠক করেছেন। চীনসহ প্রভাবশালী পাঁচটি দেশ সফর করেছেন জামায়াতের আমির ও সেক্রেটারি জেনারেল। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বদরবারে নিজেদের নতুনভাবে তুলে ধরছে জামায়াত। তারা প্রমাণ করতে চাইছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় জামায়াত প্রসঙ্গে যেসব বার্তা বিশ্বদরবারে দেওয়া হয়েছে, সেগুলো ‘সম্পূর্ণ ভুল, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’ সংগঠনের নেতারা নিজেদের পজিটিভ ইমেজ বিশ্বদরবারে তুলে ধরার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এর মাধ্যমে জামায়াত আন্তর্জাতিকভাবে নিজেদের পক্ষে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছে। সংশ্লিষ্টরা বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার যখনই সুযোগ পেয়েছে, তখনই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে বিশ্বদরবারে ‘জঙ্গি, উগ্রবাদী, মানবতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী’সহ নানা নেতিবাচক বিশেষণ উপস্থাপন করে ভুল বার্তা দিয়েছে। এসব প্রোপাগান্ডার মুখে সংগঠনটিকে কোণঠাসা রাখার নীতি ছিল সরকারের। ধীরে ধীরে ওইসব অপপ্রচারের সমুচিত জবাব দিচ্ছে জামায়াত। এরই মধ্যে শক্তিশালী করা হয়েছে জামায়াতের কূটনৈতিক উইংকে। এই উইংয়ের দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, ‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর তাদের সংগঠন পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অভ্যন্তরীণ রাজনীতির মাঠ গোছানোর পাশাপাশি কূটনৈতিক পাড়ায়ও যোগাযোগ বাড়িয়েছেন তারা।’ নানা ইস্যুতে কূটনীতিকের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে নতুনভাবে সম্পর্ক তৈরিতে গুরুত্ব দিচ্ছে সংগঠনটি। এরই ধারাবাহিকতায় গত এক সপ্তাহে অন্তত পাঁচটি দেশের প্রভাবশালী কূটনীতিকের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেছেন সংগঠনের আমির ও শীর্ষ নেতারা। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ব্রিটেন, রাশিয়া, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, পাকিস্তান, ইরানসহ বেশ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরা জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিদর্শন করেছেন। গত ৮ মার্চ ইফতার মাহফিলে ঢাকায় নিযুক্ত প্রায় সব দেশের কূটনীতিকদের এক টেবিলে জড়ো করেছিল জামায়াত। সর্বশেষ শনিবার বাংলাদেশ সফররত জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গেও একান্ত বৈঠক করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতারা। জানা গেছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জামায়াতের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন নির্যাতন নিপীড়ন শুরু হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় সংগঠনের মগবাজারের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশের বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা কার্যালয়গুলো। জামায়াত কর্মীদের পরিচালিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই অবৈধভাবে দখল করে নেওয়া হয়। গুম-খুনের শিকার হন দলের নেতাকর্মীরা। সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসি কার্যকর করা হয়। সব মিলিয়ে চরম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে চলতে থাকে জামায়াতের সাংগঠনিক কার্যক্রম। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট টানা ১৪ বছর বন্ধ থাকার পর সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও মহানগর কার্যালয় খোলার সুযোগ পান জামায়াত নেতারা। আজানের ধ্বনি দিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয় খোলা হয়। একই দিনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও মহানগর কার্যালয় খোলা হয়। প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কার্যালয় পুলিশ বন্ধ করে দেয় বলে জানান জামায়াতে ইসলামীর প্রচার বিভাগের মুজিবুল আলম। যেসব দেশ ও কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক জুলাই বিপ্লবের পর কূটনীতিকদের মধ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত সর্ব প্রথম জামায়াত অফিস পরিদর্শন ও একান্ত বৈঠক করেছেন। ২০২৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। এ সময় চীনা দূতাবাসের ডেপুটি অ্যাম্বাসাডরসহ আরও দুজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। গত ৮ অক্টোবর জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান ঢাকায় নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং-সিক। তিনিও জামায়াতের আমির ও শীর্ষ নেতাদের বৈঠক করেন। গত ১৪ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে আমির ড. শফিকুর রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) নার্দিয়া সিম্পসন। গত ১৬ অক্টোবর বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ সালেহ ওয়াই রামাদান জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিদর্শন করেন ও জামায়াতের আমিরসহ শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। গত ২৬ নভেম্বর জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে আমিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেন। গত ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত মানসুর চাভোশি জামায়াত আমিরের সঙ্গে দেখা করেন। গত ১৩ জানুয়ারি আমিরের সঙ্গে দেখা করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফারনান্দো দিয়াস ফেরেস। গত ৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসেফ ঈসা আল দোহাইলানের সঙ্গে সৌদি দূতাবাসে গিয়ে দেখা করেন জামায়াতের আমির। গত ১১ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের আমিরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ। গত ১০ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক দুই কূটনীতিক উইলিয়াম বি মাইলাম ও জন ড্যানিলোভিচ জামায়াতের আমিরের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। গত ১১ মার্চ আমিরের সঙ্গে বৈঠক করেন ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক। ১৩ মার্চ জামায়াত আমিরের সঙ্গে বৈঠক করেন ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার জি খোজিন। গতকাল শনিবার বাংলাদেশ সফররত জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতারা। গুরুত্বপূর্ণ দেশ সফর সাংগঠনিক কাজের অংশ হিসেবে বেশ কয়েকটি দেশ সফর করেছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। এরই মধ্যে জামায়াত আমির যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া ও কুয়েত সফর করেছেন। আর সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার সফর করেছেন জাপান ও তুরস্ক। এ ছাড়া আমিরে জামায়াতের নেতৃত্বে শীর্ষ নেতাদের একটি দল চীন সফর করেছে। জামায়াতের কূটনৈতিক উইংয়ে কাজ করেন—এমন একাধিক দায়িত্বশীল নেতা কালবেলাকে জানান, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে ১৬ বছর ধরে তারা স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারেননি। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পালন করাটাই যেখানে দুঃসাধ্য ছিল, সেখানে কূটনীতিকদের সঙ্গে প্রকাশ্যে যোগাযোগ রাখা আরও কঠিন। ফলে বরাবরই কোণঠাসা করে রাখার মাধ্যমে বিদেশিদের কাছে জামায়াতে ইসলামীকে নেতিবাচক হিসেবে উপস্থাপন করেছিল বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার। এখন শেখ হাসিনার পতনের পর বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে নতুনভাবে সম্পর্কোন্নয়নে মনোযোগী সংগঠনটি। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক হচ্ছে। কূটনীতিকরা জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ও পরিদর্শন করেছেন। জামায়াতের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা কালবেলাকে জানান, আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতায় বসেই জামায়াতসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন স্টিম রোলার চালাতে শুরু করে। গত বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একপর্যায়ে ২০২৪ সালের ১ আগস্ট সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ সরকার। দলটির নেতারা জানান, নির্যাতন-নিপীড়নের এমন কোনো স্তর নেই, যা জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করেনি। এরপরও তারা হাল ছেড়ে দেননি। বরং সময় ও পরিস্থিতি বুঝে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে কখনো এককভাবে, কখনো যুগপৎভাবে লাগাতার আন্দোলন করে গেছেন। কূটনীতিকদের এক টেবিলে দীর্ঘ ১১ বছর পর গত ৮ মার্চ রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সসহ কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে জামায়াতে ইসলামী। সেদিন ঢাকায় নিযুক্ত প্রায় সব দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার এবং কূটনীতিকরা অংশ নেন সেই ইফতার মাহফিলে। সেখানে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান কূটনীতিকদের কাছে বিগত সাড়ে ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের দমন-নিপীড়নের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন। ইফতার মাহফিলে বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার, চীনের রাষ্ট্রদূত, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত, অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত, ইরানের রাষ্ট্রদূত, তুরস্কের রাষ্ট্রদূত, যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক, পাকিস্তানের হাইকমিশনার, দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতসহ অনেক দেশের রাষ্ট্রদূত যোগ দেন। এ ছাড়া মরক্কো, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, ভারত, ভুটান, সিঙ্গাপুর, ব্রুনাই, ডেনমার্ক, মালয়েশিয়া, ইরাক, ভ্যাটিকান সিটি, কানাডা, ব্রাজিল, আলজেরিয়া, কসোভো, জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রতিনিধি, আইআরআই ও ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক অংশ নেন। অপপ্রচার থেমে নেই দাবি জামায়াতের: জামায়াত নেতারা আলাপকালে কালবেলাকে বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে গেলেও আমাদের সংগঠন নিয়ে এখনো বিশ্বব্যাপী অপপ্রচার থেমে নেই। সম্প্রতি ভারতের অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক বীণা সিক্রি জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির সম্পর্কে বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী আইএসআইর বাহক ছিল এবং দলটি (জামায়াত) পাকিস্তানের প্রভাবের মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, তার মন্তব্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক। তার এ মন্তব্যের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো সম্পর্ক নেই। জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার হীন উদ্দেশ্যেই তিনি উপরে উল্লেখিত বিভ্রান্তির মন্তব্য করেছেন। বীণা সিক্রি ‘জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সংবিধানকে সর্বোচ্চ দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না এবং ইসলামী ছাত্রশিবির অস্ত্র লুট করেছিল এবং এসব অস্ত্র এখনো ব্যক্তিগত হাতে রয়েছে’ মর্মে ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও কাল্পনিক মন্তব্য করেছেন। জামায়াত বাংলাদেশের সংবিধান মেনে নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পন্থায় রাজনীতি করছে। জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ বাংলাদেশের সংবিধান মেনে মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এখনো জামায়াত দেশের সংবিধান মেনেই রাজনীতি করছে। কোনো একটি দেশের রাজনৈতিক দল এবং ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রম ও তৎপরতা সম্পর্কে ফ্যাসিবাদের দোসরদের মতো একই ভাষায় কথ বলা এবং ভিত্তিহীন ও অসত্য মন্তব্য করা অন্য একটি দেশের কোনো কূটনীতিকের সমীচীন নয় বলে জানান গোলাম পরওয়ার। কূটনীতিকরা আমাদের কর্মকাণ্ডে ইমপ্রেসড: পরওয়ার এদিকে জামায়াতে ইসলামী কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো সম্পর্কে জানতে চাইলে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার কালবেলাকে বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী স্বৈরশাসনের সময় আমাদের কোনো স্পেস দেওয়া হয়নি। আমাদের অফিসে ডিপ্লোম্যাটিক কাউকে আসতে দেওয়া হয়নি। অফিস বন্ধ রাখা হয়েছিল, কোথাও প্রবেশাধিকার দেয়নি। নেতাদের নিরাপত্তাও ছিল না। এখন পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জামায়াতে ইসলামীকে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরার পদক্ষেপ আছে। আমরা সংগঠন ও দেশের বিভিন্ন বিষয় কূটনীতিকদের অবহিত করছি। জামায়াতে ইসলামী যে বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তার গঠনমূলক নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি কূটনীতিকদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে। মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, আমরা কূটনীতিকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছি, তারাও আমাদের কাছে আসছেন। দেশে-বিদেশে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। দেশ গঠনে জামায়াতের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং কর্মকাণ্ডে কূটনীতিকরা অত্যন্ত ইমপ্রেসড, সন্তুষ্ট। কেননা, তারা জামায়াতের কাছে অনেক কিছু আশা করেন। আমরা চেষ্টা করছি। বিদেশি বন্ধুদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি: তাহের জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের কালবেলাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতে ইসলামীর ওপর নির্মম অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন চালিয়েছে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীরা। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতের কেন্দ্রসহ দেশের প্রায় সব অফিস বন্ধ করে দিয়েছিল ফ্যাসিস্ট সরকার। ৫ আগস্ট পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমরা রাজনৈতিক, সামাজিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডেও গুরুত্ব বাড়িয়েছি। বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক ও মতবিনিময় হচ্ছে। আমরা বাংলাদেশ ও অন্যান্য বন্ধুপ্রতিম দেশের সঙ্গে স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করছি। ভবিষ্যতে উভয় দেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক, উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। এসবের মাধ্যমে আমরা বিদেশি বন্ধুদের কাছ থেকে ভালো এবং ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি।’ কূটনৈতিক পাড়ায় জামায়াতের যোগাযোগ বাড়ানোর বিষয়ে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সাহাবুল হক কালবেলা বলেন, গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতে ইসলামীর সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে এক প্রকার নিষিদ্ধ করে রাখে। আওয়ামী লীগ সরকার তাদের নিবন্ধন বাতিল করেছে, তথাকথিত যুদ্ধাপরাধী বা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাদের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি দিয়েছে। জামায়াতের দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ জনরোষে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার মাত্র কয়েকদিন আগে আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এইসব বিষয় জামায়াতকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সামনের দিকে নিয়ে এসেছে। জামায়েত ইসলামী বাংলাদেশের একটি সুসংঘটিত রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত, তাদের রয়েছে বিশাল প্রশিক্ষিত কর্মী বাহিনী। দেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী রাজনৈতিক দল এবং জনসমর্থনের দিক দিয়েও এই মুহূর্তে বাংলাদেশে তাদের অবস্থান অনেক উপরে। তারা কূটনৈতিক পাড়ায় যোগাযোগ বাড়াবে—এটাই স্বাভাবিক। এই যোগাযোগ দেশে এবং দেশের বাইরে বিভিন্ন অঙ্গনে জামায়াতের গুরুত্ব বাড়িয়েছে। দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় কূটনৈতিক অঙ্গনেও তাদের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। একই বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘আধুনিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক দলগুলোকে যেমন অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ বৃদ্ধি ও সমর্থন বাড়াতে হয়, তেমনই আন্তর্জাতিক সমর্থনের ভিত্তিও লাগে। আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ থাকলে, সরকার গঠন করতে পারলে বৈশ্বিক সম্পর্ক চ্যালেঞ্জে পড়ে না। তা ছাড়া বিদেশি শক্তিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখার উদ্দেশ্যে হবে যদি তারা ক্ষমতায় যায়, তখন যাতে দেশের কূটনীতিকে সেভাবে ঢেলে সাজাতে পারে। জামায়াতে ইসলামী যেহেতু বর্তমানে দেশে ক্ষমতার রাজনীতিতে আরও বেশি আগ্রহী এবং তারা ক্ষমতার রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, সেহেতু তাদের তো পরিচিতি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরতে হবে। আরও সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে হবে। সেই লক্ষ্যে রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামী সঠিক কাজ করছে এবং সেটি তাদের করা উচিত। এ ক্ষেত্রে তাদের বাংলাদেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে বিদেশিদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন ঘটাতে হবে।