Image description
বিকেল সাড়ে ৪টা। গুলশান-১-এর গোলচত্বরে যানজটে আটকে গেলেন ফারজানা ইসলাম। কিছুক্ষণ বসে থেকে বিরক্ত হয়ে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে গেলেন ফখরুদ্দিন বিরিয়ানির দোকানে। বিক্রয়কর্মীরা তখন ক্রেতা সামলাতে মহা ব্যস্ত। কসরত করে এক বাটি হালিম কিনতে পারলেন। লিংক রোডের বাসিন্দা ফারজানা মহাখালীর একটি বহুজাতিক কম্পানিতে চাকরি করেন। জানালেন, স্বামী-স্ত্রী দুজনই কর্মজীবী হওয়ায় ইফতারি বানানোর সময় মেলে না। তাই অফিস থেকে বের হওয়ার আগেই অনলাইনে ইফতারির অর্ডার করে দিয়েছেন। হালিমের কথা বলতে ভুলে যাওয়ায় এখন এসে কিনলেন। রমজান মাসে ঢাকার প্রতিটি অলিগলিতে বসে ইফতারির দোকান। মজাদার খাবার সাজিয়ে বসে অভিজাত রেস্তোরাঁগুলো। কয়েক বছর ধরে এসব দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে অনলাইন ফুড ডেলিভারি প্ল্যাটফর্মের কর্মীদের। ব্যস্ত নগরজীবনে ইফতারি কেনার ঝামেলা এড়াতে অনলাইন অর্ডারে ঝুঁকছেন রোজাদাররা। অনলাইনে খাদ্যরসিক শৌখিন ক্রেতা যেমন আছেন, তেমনি প্রয়োজনের তাগিদেও অনেকে অনলাইননির্ভর হয়ে পড়ছেন। পবিত্র রমজানে মানুষের বদলে যাওয়া জীবনধারার সঙ্গে তাল মেলাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন অনলাইন ফুড ডেলিভারি প্ল্যাটফর্মের কর্মীরা। রাজধানীর অন্যতম অভিজাত ইফতারির বাজারের একটি স্থান বেইলি রোড। কভিড-১৯-এর পর থেকে খাবার সরবরাহের এই পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই বাজারে। কভিডের পর গত বছর রোজার আগে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে বেইলি রোডে। কয়েকটি খাবারের দোকান পুড়ে যায়। এই দুটি ঘটনা বেইলি রোডের ইফতারির বাজারকে অনলাইনমুখী করে তুলেছে। এখানকার অন্যতম জনপ্রিয় খাবার বিক্রেতা বেইলি পিঠাঘর ও জ্যাগেরী রেস্টুরেন্টের কয়েকজন কর্মী জানিয়েছেন, এবার সরাসরি এসে ক্রেতারা যেমন কিনছেন, একই সঙ্গে কিনছেন অনলাইনেও। জোহরের নামাজের পর থেকে ফরমায়েশ আসা শুরু হয়। বিকেল বা সন্ধ্যায় যখন দোকানে ক্রেতা বাড়ে, তখন অর্ডার কমতে থাকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার অভিজাত এলাকা বলে খ্যাতি আছে যেসব এলাকার, সেখানকার রেস্তোরাঁগুলোতে অনলাইনে খাবার সরবরাহের ফরমায়েশ বেশি আসে। গুলশান, বনানী, বারিধারা, বসুন্ধরা, বেইলি রোড, ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর, মিরপুরের কোনো কোনো এলাকার রেস্তোরাঁয় বেশি অনলাইন অর্ডার আসে বলে জানা গেছে। গতকাল গুলশান-১-এর ফখরুদ্দিনের কর্মীরা জানান, দুপুর থেকে তাঁরা প্রস্তুত থাকেন। ২টা থেকে আড়াইটার দিকে অনলাইনে অর্ডার আসা শুরু করে আশপাশের এলাকা থেকে। অনলাইনে অর্ডার নেওয়াকে জনপ্রিয় করতে তাঁরা ‘ফোনে ফোনে ফখরুদ্দিন’ স্লোগান দিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছেন। শুধু ইফতার নয়, অনেক রেস্তোরাঁয় রয়েছে সাহরির ব্যবস্থা। ফখরুদ্দিনের পাশের ভবনের সিয়েলো রুফটপ রেস্টুরেন্ট সাহরিতে ৪০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে। তাদের এই অফার রাত ১০টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। তবে অনলাইন অর্ডারের ক্ষেত্রে অফারটি প্রযোজ্য নয় বলে জানালেন বিক্রয়কর্মীরা। সাহরির আয়োজন রয়েছে একই এলাকার বিন্নিসহ অন্যান্য রেস্তোরাঁয়ও। রাজধানীতে মুঘল খাবারের জন্য পরিচিতি রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) হ্যারিটেজ রেস্টুরেন্টের। এই রমজানে তারা আয়োজন করেছে ‘মুঘল-ই-মজলিস সাহরি নাইট’ এর। ইফতার থেকে সাহরি পর্যন্ত মুঘল স্বাদের খাবার নিয়ে খোলা থাকছে রেস্টুরেন্টটি। অনলাইন ফুড ডেলিভারি প্ল্যাটফরম ফুডপান্ডা বাংলাদেশের হেড অব পাবলিক অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস জাহেদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে জানান, পবিত্র রমজানে মানুষের জীবনধারা বদলে যায়। খাবারের রুটিনে পরিবর্তন আসে। এ কারণে সাহরি ও ইফতারের অর্ডার বেশি আসে। ঘরে বসে পছন্দের খাবার পাওয়ার ঝামেলাহীন পদ্ধতি হলো অনলাইনে অর্ডার করা। জাহেদুল ইসলাম জানান, বিষয়টি আরো সহজ করতে রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী ও বিখ্যাত রেস্তোরাঁ নিয়ে ‘গ্র্যান্ড ইফতার বাজার’-এর আয়োজন করেছে ফুডপান্ডা। বনানীর সোয়াট ফিল্ডে রমজান মাসজুড়ে চলমান এই আয়োজনে ফুডপান্ডা অ্যাপের মাধ্যমে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের ইফতারসামগ্রীর পাশাপাশি দেশের নামকরা ও জনপ্রিয় বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের খাবার কেনার সুযোগ মিলবে। আয়োজনস্থলে ডাইন-ইনের সুবিধাও রয়েছে। ফুডপান্ডা অ্যাপে দুপুর ২টা থেকে এই ইফতার বাজারে অংশ নেওয়া রেস্টুরেন্ট থেকে অর্ডার করা যাবে।