Image description

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের টেলিটকের ৩ হাজার কোটি টাকার ফোর-জি মোবাইল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। প্রথমবার আহ্বান করা টেন্ডারে তিনটি কোম্পানি অংশ নিলেও তাদের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট করার অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে টেন্ডারের শর্ত না মানারও অভিযোগ প্রমাণিত হয় টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটির কাছে। সবকিছু বিবেচনা করে শেষ পর্যন্ত তিনটি কোম্পানিকেই অযোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়। আর এতেই আটকে যায় ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ফোর-জি মোবাইল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ। পরে টেন্ডারের সিদ্ধান্ত জানতে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ)-এর কাছে চিঠি দিয়েছে টেলিটক।

এখন এ প্রকল্পের দরপত্র কি অবারও এ তিন কোম্পানির মধ্যে আহ্বান করবে নাকি শুধু চায়না মেশিনারিজকে একক সল্যুশন দেওয়ার কথা বলবে, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা। অন্যদিকে বিপিপিএ বলছে, নতুন দরপত্রে টেলিটক কাকে আহ্বান করবে সেটা টেলিটকের নিজস্ব এখতিয়ার। সে অনুযায়ী ইআরডি চীন  সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান চাইবে।

টেলিটক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ওই প্রকল্পের প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়। আর এটা দেখভাল করেন সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ফোর-জি মোবাইল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য চীন জোগান দিচ্ছে ২ হাজার কোটি টাকার অনুদান এবং বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৯০০ কোটি টাকা। জি টু জি প্রকল্পের শর্তানুযায়ী, এ প্রকল্পে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) মাত্র তিনটি প্রতিষ্ঠানের নাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কোম্পানিগুলো হলো চায়না ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিআইটিসিসি), ইউনান কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট হোল্ডিং গ্রুপ (ওয়াইসিআইএইচ) ও চায়না মেশিনারিজ ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন কোম্পানি (সিএমইসি)।

এ প্রসঙ্গে টেলিটকের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ সামসুজ্জোহা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নানা অনিয়মের অভিযোগে ও শর্ত না মানার কারণে তিন কোম্পানিকে মূল্যায়ন কমিটি অযোগ্য বলে ঘোষণা দেয়। পরে ইআরডির নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটির কাছে টেন্ডারের সিদ্ধান্ত জানতে ১৮ ফেব্রুয়ারি চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমরা এখন সে চিঠির জবাবের অপেক্ষায় আছি।’ তিনি বলেন, ‘তারা সিন্ডিকেট করে কাজটি করার পাঁয়তারা করছিল। জাতীয় স্বার্থ অক্ষুণ্ন রাখার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই মূলত নতুন করে টেন্ডারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’

টেলিটক জানিয়েছে, গত বছর সেপ্টেম্বরে আহ্বান করা দরপত্রে বলা হয়, অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। পাশাপাশি দরপত্রে অংশগ্রহণের জন্য টেন্ডার সিকিউরিটি অর্থাৎ দরপত্রের নিরাপত্তা অর্থ ৩০ লাখ ইউএস ডলার জমা দিতে হবে। পাশাপাশি এও বলা হয়, সব কোম্পানিকে শুধু একক পণ্য প্রস্তাব করতে হবে, কোনো বিকল্প পণ্য দেওয়া যাবে না। অর্থাৎ একই প্রযুক্তিসম্পন্ন কেবল একটি পণ্যই থাকতে পারবে, একাধিক কোম্পানির পণ্য উল্লেখ করার সুযোগ নেই।

কোম্পানিগুলোর জমা দেওয়া দরপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সিআইটিসিসি ও ওয়াইসিআইএইচ দরপত্র জমাদানের সময় কোনো নিরাপত্তা অর্থ জমা দেয়নি। পাশাপাশি প্রতিটি পণ্যের আলাদা নাম ও দাম উল্লেখ করার কথা থাকলেও সে শর্তও পূরণ করেনি এ দুই কোম্পানি। অন্যদিকে, দরপত্র জমা দেওয়ার সময় তারা কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব আলাদা না দিয়ে সবকিছু একসঙ্গে জমা দিয়েও নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। আর বিকল্প পণ্য দেওয়া যাবে না জেনেও একাধিক অখ্যাত কোম্পানির বিকল্প পণ্যের কথা উল্লেখ করেছে চায়না মেশিনারিজ। এর মাধ্যমে তারা সুযোগ রেখেছিল অখ্যাত প্রতিষ্ঠানের নিম্নমানের সল্যুশন দেওয়ার। টেলিটকের টেন্ডারসংশ্লিষ্টরা জানান, সীমিত দরপত্রের মধ্যে যদি আবারও এ তিনটি কোম্পানি অংশ নেয় তাহলে এখানে নিম্নমানের পণ্য সরবরাহ এমনকি আরও বড় দুর্নীতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।