দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও চোর, ছিনতাইকারী, ডাকাত, অবৈধ অস্ত্রধারী, সন্ত্রাসী গ্রেপ্তারসহ নানাবিধ অপরাধ দমনে দেশব্যাপী আভিযানিক কার্যক্রম জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে সমন্বিত চেকপোস্ট ও টহল কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেকোনো ধরনের গুজব বা মিথ্যা তথ্য ছড়ানো প্রতিরোধে সাইবার মনিটরিং টিম অনলাইনে সার্বক্ষণিক নজরদারি অব্যাহত রেখেছে।
গতকাল সকালে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, ঢাকায় র্যাবের ৬৯টি ও ঢাকার বাইরে ১৪৯টিসহ সারা দেশে মোট ২১৮টি টহলদল মোতায়েন এবং সাদা পোশাকে র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি ও পরিকল্পনাকারী, চোর, ছিনতাইকারী, ডাকাত ও অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করতে দেশব্যাপী র্যাবের রোবাস্ট পেট্রোল ও চেকপোস্ট স্থাপনসহ আভিযানিক কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। সন্ত্রাসী নির্মূল ও মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি খুন, চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও অপহরণে জড়িত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে সাধারণ জনগণের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে র্যাবের জোরালো তৎপরতা অব্যাহত আছে। তিনি বলেন, সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে কতিপয় দুষ্কৃতকারী ও স্বার্থান্বেষী মহল হামলা ও নাশকতার মাধ্যমে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, খুন, চাঁদাবাজিসহ সাধারণ মানুষের ওপর নৃশংস কায়দায় হামলা ও আক্রমণ চালাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার রাত থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ যেকোনো ধরনের নাশকতা ও সহিংসতা প্রতিরোধে দেশব্যাপী র্যাবের আভিযানিক কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে অন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে সারা দেশে ২১৮টি টহলদল মোতায়েন এবং সাদা পোশাকে র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ ছাড়া ভার্চ্যুয়াল জগতে যেকোনো ধরনের গুজব বা মিথ্যা তথ্য ছড়ানো প্রতিরোধে র্যাব সাইবার মনিটরিং টিম অনলাইনে সার্বক্ষণিক নজরদারি অব্যাহত রেখেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, জননিরাপত্তা বিধান ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে ঢাকা মহানগর এলাকায় পুলিশি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ডিএমপিসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে সমন্বিত চেকপোস্ট ও টহল কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডিএমিপ’র ৫০ থানা এলাকায় জননিরাপত্তায় ডিএমপির ৫০০টি টহল টিম দায়িত্ব পালন করে। এ ছাড়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত স্থানে ৫৪টি পুলিশি চেকপোস্ট পরিচালনা করা হয়। ডিএমপির টহল টিমের পাশাপাশি মহানগরীর বিভিন্ন অপরাধপ্রবণ স্থানে সিটিটিসি‘র সাতটি, অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) এর চারটি এবং র?্যাবের ১০টি টহল টিম দায়িত্ব পালন করেছে। এ ছাড়াও ডিএমপি‘র চেকপোস্টের পাশাপাশি পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট এপিবিএন ৩১টি চেকপোস্ট পরিচালনা করা হয়। তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত মোট ২৪৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছে ১৪ জন ডাকাত, ১৬ জন পেশাদার সক্রিয় ছিনতাইকারী, ৭ জন চাঁদাবাজ, ১১ জন চোর, ২২ জন চিহ্নিত মাদক কারবারি, ৪৪ জন পরোয়ানাভুক্ত আসামিসহ অন্যান্য অপরাধে জড়িত অপরাধী। তাদের ব্যবহৃত ৩টি ছুরি, ৪টি চাকু, ১টি পাযার্স, ১টি স্ক্রু ড্রাইভার, ১টি লোহার শাবল, ১টি চাপাতি, ১টি দা ও ২টি লোহার রড উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া অভিযানে উদ্ধারকৃত মাদকের মধ্যে রয়েছে ৪৯ কেজি ৮৭০ গ্রাম গাঁজা ও ৭০৪ পিস ইয়াবা। গত ২৪ ঘণ্টায় ডিএমপির বিভিন্ন থানায় ৫৯টি মামলা রুজু করা হয়।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতিতে এক গুচ্ছ সিদ্ধান্ত: আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং সার্বিক পরিস্থিতি আরও উন্নত করতে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটি। সোমবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে কোর কমিটির এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো হলো- ১. রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে তল্লাশিচৌকি বাড়াতে হবে। অপরাধপ্রবণ এলাকায় টহল সংখ্যা বাড়ানো হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট, বিজিবি সদস্যদের সমন্বয়ে যৌথবাহিনী গঠন করে টার্গেট এলাকায় জোরদার অপারেশন পরিচালনা করা হবে। ২. রাজধানীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে নৌবাহিনীর একটি অতিরিক্ত পেট্র্রোল এবং কিছু এলাকায় কোস্ট গার্ডের একটি অতিরিক্ত পেট্রোল নিয়োজিত থাকবে। ৩.পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট প্রধান, উপ-পুলিশ কমিশনার, সেনাবাহিনীর মাঠে নিয়োজিত ব্রিগেড প্রধান ও অন্য দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রে সময়ে সময়ে গণমাধ্যমকে ব্রিফ করবেন। ৪. ডিএমপি’র পুলিশ সদস্য, বিজিবি, আনসার ও বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের সদস্যদের জন্য মোটরসাইকেল ক্রয় করা হবে, যাতে করে তাৎক্ষণিকভাবে অলিগলিতে টহল দিয়ে অপরাধীদের পাকড়াও করা যায়। ৫. ছিনতাইকারী ও ডাকাতরা অবস্থান করতে পারে এমন সম্ভাব্য স্থানগুলোতে কম্বাইন্ড অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। ৬. ঢাকা শহরের বাইরে, বিশেষ করে টঙ্গি, বছিলা, কেরানীগঞ্জ এবং মুন্সীগঞ্জ এলাকায়ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল বাড়ানো হবে। ৭. ৫০০ এপিবিএন সদস্য ডিএমপিতে ন্যস্ত হয়ে পুলিশের সঙ্গে কাজ করবে। ৮. থানাভিত্তিক সন্ত্রাসীদের হালনাগাদ তালিকা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের আইনের আওতায় আনতে ত্বরিত পদক্ষেপ নেবে। ৯. মিথ্যা, গুজব ও প্রোপাগান্ডার বিপরীতে সত্য তথ্যগুলো প্রচারে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
