Image description

এতদিন নতুন কূপ খনন করার মাধ্যমে দেশে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা জানানো হলেও এখন এলএনজি আমদানিকে সামনে রেখেই পরিকল্পনা সাজাচ্ছে সরকার। গত কয়েক বছর ধরে দেশীয় গ্যাসের সরবরাহ ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়ায় এলএনজি আমদানি বাড়াতে হচ্ছে। পেট্রোবাংলার পরিকল্পনায় বলা হয়েছে— আগামী ছয় থেকে সাত বছরের মধ্যে দেশের মোট ব্যবহৃত গ্যাসের ৭৫ শতাংশই আমদানি করতে হবে।

সূত্র বলছে, গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোকে পেট্রোবাংলার পাঠানো গত ৬ ও ৯ জানুয়ারির দুটি চিঠিতে আমদানি নির্ভরতার এই চিত্র উঠে এসেছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে উৎপাদিত গ্যাসের পরিমাণ প্রায় ৭৫ ভাগ এবং আমদানিকৃত এলএনজি’র পরিমাণ প্রায় ২৫ ভাগ। ভবিষ্যতে ক্রমান্বয়ে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন হ্রাস পেতে পারে এবং এলএনজি আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে— যা ২০৩০-২০৩১ অর্থবছরে মোট গ্যাস সরবরাহের প্রায় ৭৫ ভাগে এসে দাঁড়াবে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এলএনজি আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমান অর্থবছরের (২০২৪-২৫) গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় ৩২টি এবং স্পট মার্কেট থেকে ১২টি, অর্থাৎ মোট ৪৪টি কার্গো এলএনজি আমদানি করা হয়েছে। এছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় আরও ২৮টি ও স্পট মার্কেট থেকে আরও ২৯টিসহ মোট ৫৭টি, অর্থাৎ সর্বমোট ১০১টি কার্গো এলএনজি আমদানি করতে হবে।

চিঠিতে এলএনজি আমদানির ফলে প্রতি বছর কী পরিমাণ আর্থিক ঘাটতি হবে তাও উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে—গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাওয়ায় শিল্প ও ক্যাপটিভ পাওয়ার শ্রেণিতে গ্যাস সরবরাহের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে। বর্তমানে দেশে সরবরাহকৃত গ্যাসের মধ্যে প্রতি ঘনমিটার এলএনজি’র বর্তমান আমদানি মূল্য প্রায় ৬৫-৭০ টাকা। চলতি বছর ১১৫টি কার্গো এলএনজি আমদানি করা হলে বর্তমানে বিদ্যমান গ্যাসের মূল্যহার অনুযায়ী প্রায় ২২ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা ঘাটতি হবে। অপরদিকে গত বছর এলএনজি আমদানির কারণে ১৬ হাজার ১৬২ কোটি টাকার ঘাটতি ছিল।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার যে দামে এলএনজি কিনে আনে, তার চেয়ে কম দামে বিক্রি করায় এই ঘাটতি সৃষ্টি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বাংলাদেশের স্থলভাগে আর কোনও গ্যাসের বড় খনি পাওয়া যাচ্ছে না। কেবল ভোলা ছাড়া অন্য কোথাও গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। সাগরে সব শেষ বিডিং রাউন্ডে কোনও কোম্পানি বাংলাদেশে কাজ করতে আগ্রহ দেখায়নি। ফলে খুব সহসা বড় কোনও গ্যাসের খনি আবিষ্কারের সম্ভাবনা নেই। পুরোদমে খনন শুরু এবং তা থেকে সাগরে গ্যাস পাওয়া গেলে তা গ্রিডে আনতে অন্তত পাঁচ থেকে ছয় বছর সময় প্রয়োজন হবে। ফলে আপাতত দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব না। স্থলভাগে সামান্য কিছু উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হলেও তা দিয়ে ঘাটতি কমানো সম্ভব হবে না।

দেশে বর্তমানে প্রতিদিন ২৭০০ থেকে ২৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে আমদানি করা এলএনজি থেকে ৭০০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট, বাকিটা দেশীয় উৎস থেকে সরবরাহ করা হয়। দেশীয় গ্যাস উৎপাদনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় এলএনজির সরবরাহ বাড়াতে হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পেট্রোবাংলার নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশে তেল-গ্যাসের অনুসন্ধান আগে যেমন হয়নি, এখনও হচ্ছে না। বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিডিং রাউন্ডে কোনও কোম্পানি অংশ নেয়নি। বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিদেশি কোম্পানিগুলো হয়তো বড় বিনিয়োগের ঝুঁকি নিচ্ছে না। ফলে পেট্রোবাংলার সামনে আমদানি করে চাহিদা মেটানোর কোনও বিকল্প নেই।’

তিনি বলেন, ‘তবে ২০৩০-৩১ সালে যে পরিমাণ আমদানি করার পরিকল্পনা দেখানো হয়েছে, দেশে সেই পরিমাণ আমদানির অবকাঠামোও নেই। এখন দুটি এলএনজি টার্মিনাল দিয়ে রিগ্যাসিফিকেশন করা হচ্ছে। আমদানি বাড়ানো হলে রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট বাড়াতে হবে। আগের সরকার দুটি টার্মিনাল নির্মাণের চুক্তি করেছিল। সে দুটি চুক্তিই বাতিল করা হয়েছে। নতুন করে টার্মিনাল নির্মাণের বিষয়ে বর্তমান সরকারের কোনও নির্দেশনা নেই। ফলে জ্বালানি খাতের ভবিষ্যৎ কী সেটি এখনও বোঝা যাচ্ছে না।’