Image description
রমজানকেন্দ্রিক পণ্যে কিছুটা স্বস্তি

আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। প্রতি বছর রমজানের আগে ছোলা, ডাল, চিনি, ভোজ্য তেল, মুড়ি ও খেজুরের মতো পণ্যগুলোর চাহিদা হু হু করে বেড়ে যায়। চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে দাম। তবে এ বছর রোজাকেন্দ্রিক বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের দাম গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। রয়েছে স্থিতিশীল। তবে প্রায় একমাস ধরে চলা সয়াবিন তেলের সংকট কাটেনি। উল্টো বাজার থেকে উধাও। পাশাপাশি চাল, মাছ-মাংসের দামও চড়া। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এবং রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান টিসিবি’র তথ্যে এসব চিত্র পাওয়া গেছে। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে শুল্ককর কমানোসহ বেশকিছু উদ্যোগের ফলে এবার ছোলা, খেজুর, বেসনের দাম বাড়েনি, বরং কিছুটা কমেছে। অন্যদিকে আমদানির পরিমাণও বেড়েছে। জানা গেছে, রমজানকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরই সাধারণত ছোলা,  মটর ডাল, চিনি, তেল, ডাল, খেজুরসহ বেশকিছু পণ্যের চাহিদা বাড়ে। সেইসঙ্গে বাড়ে দাম। 

সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হলেও কার্যকর হতো না। এবার অনেক পণ্যের দাম স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক নিচে অবস্থান করছে। রমজান মাস ও ঈদে চাহিদা বাড়ে এমন ৯টি ভোগ্যপণ্যের আমদানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১০৫-১১০ টাকা কেজি দরে। গত বছর রমজানেও এ দামে ছোলা কেনা গেছে। একইভাবে খেসারির ডাল ১১০-১২০ টাকা ও মসুর ডাল ১২০-১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। মুদি দোকানি কবির বলেন, ডালজাতীয় কোনো পণ্যের দাম বাড়েনি, বরং কমেছে কিছুটা। চিনির দাম উঠেছিল ১২৫-১৪০ টাকায়। এখন তা কিছুটা কমে ১১৫-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান এ বিক্রেতা। রমজান আসলে প্রতি বছর অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য পিয়াজের দাম বাড়ে। এ বছর পিয়াজ নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নেই। ৪৫-৫০ টাকার মধ্যে পিয়াজ কিনতে পারছেন ক্রেতারা।

বাজারে অন্যসব পণ্যের দামেও তেমন হেরফের দেখা যায়নি। স্বস্তি রয়েছে ডিম ও সবজির দামেও। বাজারে সবজির সরবরাহ অনেক; এতে কমেছে দাম। টমেটো ২০-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বেগুন ৪০-৫০ টাকা ও আলুর কেজি এখন ২০-২৫ টাকা। বাজারে ফার্মের মুরগির ডিমের দামও সহনশীল রয়েছে। প্রতি ডজন কেনা যাচ্ছে ১৩৫-১৪০ টাকায়। 

রমজান ঘিরে বাজারে মুড়ি ও খেজুরের চাহিদাও বাড়ে। বাজারে এখন প্রতি কেজি মুড়ি ৮০-৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর বর্তমানে প্রতি কেজি খেজুরের দাম বছরের ব্যবধানে কমেছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। এবার ১০ শতাংশ শুল্কহার কমানোয় খেজুরের দাম কমেছে। গত বছর রমজানের আগে পণ্যটির দাম অস্বাভাবিক বেড়েছিল। এবার সে তুলনায় খেজুরের দাম স্থিতিশীল। প্রতি কেজি সাধারণ মানের খেজুর ২৫০-৩০০ টাকা এবং ভালোমানের খেজুর ৪০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে মেডজুল খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১৪০০-১৪৫০ টাকা কেজি (আকারভেদে), মরিয়ম ১১৮০-১২৫০ টাকা, আজোয়া ১০৫০ টাকা, মাশারুক ৭০০-৮০০ টাকা, সুগাই জাতের খেজুর ৯৫০ টাকা, ডাল খেজুর ৬৫০ টাকা। এ ছাড়া দাবাস খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৪৬০-৪৮০ টাকা, জাহিদি ২০০-২৬০ টাকা, বরই খেজুর প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ টাকা দরে। রমজান মাসে খেজুরের দাম আরও কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। 

এদিকে অস্থিরতা রয়ে গেছে সয়াবিন তেলের বাজারে। ভোজ্য তেলের সরবরাহ সংকট এখনো কাটেনি। বিভিন্ন দোকান ঘুরে সয়াবিন তেলের দেখা মেলে খুবই কম। সরবরাহ সংকটের সুযোগ নিয়ে কিছু কিছু বিক্রেতা ১৭৫ টাকা লিটারের তেল ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন বলে ক্রেতাদের অভিযোগ। অনেকে তেলের বোতল কেটে ড্রামে ঢেলে চড়া দামে খুচরায় বিক্রি করছেন।

ক্রেতারা বলেন, রমজানের আগে সয়াবিন তেলের চাহিদা যখন বেড়ে যায় সরবরাহকারীরা তখন ইচ্ছাকৃতভাবে সরবরাহ কমিয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। মানুষের পকেট কেটে অযৌক্তিক মুনাফা করছেন তারা। 

জানা গেছে, গত অর্থবছরের (২০২৩-২৪) ১লা জুলাই থেকে ৮ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যে পরিমাণ অপরিশোধিত ভোজ্য তেল আমদানি হয়েছিল, চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) একই সময়ে তার চেয়ে আমদানি হয়েছে ১ লাখ টনের বেশি। এর মধ্যে সয়াবিন আমদানি বেশি হয়েছে ৩ লাখ টন। 
মাছ-মাংসের দাম খুব বেশি কমেনি। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়। সোনালি মুরগির কেজি ৩০০-৩২০ টাকা।
রোজাকেন্দ্রিক ৯ পণ্যের আমদানি বেড়েছে: গত বছরের ১১ই নভেম্বর ৯টিসহ ১১ ধরনের ভোগ্যপণ্য আমদানিতে বিলম্বে মূল্য পরিশোধের অনুমতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। রমজানের আগে পণ্য মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা ও সরবরাহ নির্বিঘ্ন রাখতে আমদানির ক্ষেত্রে লেনদেন সহজ করতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ সুবিধা বহাল থাকবে আগামী ৩১শে মার্চ পর্যন্ত। গত ৬ই নভেম্বর এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে শূন্য মার্জিনেও এসব পণ্যের এলসি করা যাবে। এসব পদক্ষেপের ফলে অত্যাশ্যকীয় পণ্যগুলোর আমদানি বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চার মাসে চিনি আমদানি হয়েছে ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৩৪ টন। এটি আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি। এ সময়ে সয়াবিন তেল আমদানি ৩৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৯৮ হাজার ২৫২ টন। ডালজাতীয় পণ্যের আমদানি ৪৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৮৩৭ টন। ছোলা আমদানি হয়েছে ৯৭ হাজার ৫৫৫ টন, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৪ শতাংশ বেশি। খেজুরের আমদানি ২ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৪ হাজার ৪২০ টন। এ সময়ে  মটর ডালের আমদানি হয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৮৪৫ টন। এ বছর দেশে পর্যাপ্ত পিয়াজ উৎপাদন হওয়ার পরও এই চার মাসে পণ্যটির আমদানি ২ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার ৬১১ টন। রসুনের আমদানি ২০ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৬১ হাজার ৩৮১ টন। আদার আমদানি ৫৬ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৫২ হাজার ৫১৫ টন।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকায়। আর গত বছর ছিল ২৫-৩০ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে দাম কমেছে ১০ শতাংশ। দেশি পিয়াজের দাম সব চেয়ে বেশি কমেছে। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়। আর গত বছর ছিল ১১০-১২০ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে দাম কমেছে ৬১ শতাংশ। আমদানি করা পিয়াজের দাম কমেছে ৪০ শতাংশ। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১২৫ টাকায়। আর গত বছর ছিল ১৪০-১৪৫ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে দাম কমেছে ১৪ শতাংশ। বর্তমানে বাজারে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৩-৪৫ টাকায়। আর গত বছর ছিল ৪৩-৪৭ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে দাম কমেছে ২.২২ শতাংশ। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি আটা সাদা (খোলা) বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকায়। আর গত বছর ছিল ৪৫-৫০ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে দাম কমেছে ১১ শতাংশ। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১০০-২৪০ টাকায়। আর গত বছর ছিল ১৪০-২৫০ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে দাম কমেছে ১৩ শতাংশ। আর আমদানি করা রসুনের দাম কমেছে ১৮ শতাংশ।

এদিকে টিসিবি’র তথ্যমতে, বাজারে মাছ-মাংসের দাম খুব বেশি কমেনি। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪৫০ টাকায়। আর গত বছর ছিল ৩০০-৩৫০ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে দাম বেড়েছ ১৫ শতাংশ। আর ইলিশ মাছের দাম স্থিতিশীল। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। আর গত বছর ছিল ৭৩০-৭৫০ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে দাম বেড়েছে ৪.৭৩ শতাংশ। ব্রয়লার মুরগি দাম বেড়েছে ১.২৭ শতাংশ। দেশি মুরগির দাম বড়েছে ৮ শতাংশ।