Image description

বৈষম্যের বিরুদ্ধে অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের অগ্রসৈনিক তিনি। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে কোটা সংস্কার আন্দোলন এক সময়ে রূপ নেয় সরকারপতন আন্দোলনে। নাহিদ ইসলামের ডাকে রাজপথে নেমে আসেন এ দেশের আপামর জনতা। কর্তৃত্ববাদী শাসনের যে ইতি গেল আগস্টের ৫ তারিখ হয়েছিল সেই লড়াইয়ে তিনি ছিলেন ছাত্র-জনতার অন্যতম প্রধান নেতা। শেখ হাসিনার দুঃশাসনের পতনের পর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার উপদেষ্টা পরিষদে নাহিদ ইসলামও অংশ হয়েছিলেন। দায়িত্ব পান ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের। দীর্ঘ সাড়ে ৬ মাস দায়িত্ব পালনের পর সরকার থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নম্বর মুখ্য সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। আবারো রাজপথে তিনি। ছাত্র-জনতার উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়া নতুন রাজনৈতিক দলের আহ্বায়কের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন তিনি। শুক্রবার হবে নতুন দলের আত্মপ্রকাশ। মঙ্গলবার পদত্যাগের পর নাহিদ এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আশা করি দেশে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে সরকারে থাকার চেয়ে রাজপথে থাকলে বেশি ভূমিকা রাখতে পারবো। রাজপথ থেকে সরকারে গিয়ে আবার রাজপথে ফিরে আসা নাহিদ ইসলাম তার রাজনৈতিক জীবনে কতোটুকু সফল হবেন সেটি সময়ই বলে দেবে। তবে নাহিদের পদত্যাগকে স্বাগত জানিয়েছে অভ্যুত্থানে অংশ নেয়া সব পক্ষ। সবার প্রত্যাশা- দেশ ও জাতির কল্যাণে নাহিদ রাজপথে তার সেরাটাই দেবেন। আশীর্বাদ পেয়েছেন সরকারপ্রধান থেকেও। নাহিদের নতুন যাত্রায় শুভ কামনা ছিল উপদেষ্টা পরিষদের। 

এদিন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের অনানুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টার হাতে পদত্যাগপত্র তুলে দেয়ার পর নাহিদ মুখোমুখি হন গণমাধ্যমের। বলেন, একটি রাজনৈতিক শক্তির উত্থানের জন্য আমার রাজপথে থাকা প্রয়োজন; ছাত্র-জনতার কাতারে থাকা প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমরা যে গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা পোষণ করি, সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য এবং গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেয়া শক্তিকে সংহত করতে আমি মনে করেছি যে, সরকারের চেয়ে রাজপথে ভূমিকা বেশি হবে। বাইরে যে সহযোদ্ধারা রয়েছে, তারাও একই চিন্তা করেন। এ কারণেই আমি আজকে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। 

নাহিদ উপদেষ্টা পরিষদের পাশাপাশি সরকারের অন্যান্য কমিটির সদস্য পদও ছেড়েছেন। এসব কাজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, গত ছয় মাসে আমি আমার জায়গা থেকে চেষ্টা করেছি কাজ করে যাওয়ার। দুটি মন্ত্রণালয়ের বাইরেও অতিরিক্ত কিছু দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। মন্ত্রণালয়গুলোতে আমি কিছু কাজ করেছি। ছয় মাস খুবই কম সময়, তারপরও আমি চেষ্টা করেছি। সেই কাজের ফলাফল হয়তো জনগণ পাবে। আজকে থেকে আমি সরকারের দায়িত্বে নেই। নতুন দলের আহ্বায়কের দায়িত্বের প্রশ্নে তিনি বলেন, নতুন রাজনৈতিক শক্তি ও দল গঠন হচ্ছে, আমার সেখানে অংশ নেয়ার অভিপ্রায় আছে। জনগণের সঙ্গে মিশে আবারো জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে মাঠে থেকে কাজ করার লক্ষ্যে আমি পদত্যাগ করেছি। ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্বে আসা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং মাহফুজ আলমও একই পথ অনুসরণ করবেন কিনা? সেই প্রশ্নে নাহিদ বলেন, এখনো গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা তো বাস্তবায়িত হয়নি। বিচার এবং সংস্কারের যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে এই সরকার গঠন হয়েছিল সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে দুইজন রয়েছে। তারা মনে করেছে তাদের সরকারে থেকে জনগণকে সার্ভ করা উচিত। তারা যদি রাজনীতি করার প্রয়োজন বোধ করেন, তখন হয়তো সরকার ছেড়ে দেবেন। 

দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা আছে কিনা- এমন প্রশ্নে এই তরুণ নেতা বলেন, আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল। সেই সীমাবদ্ধতা কাটানোর চেষ্টা করেছি। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ছিল। আমরা এসে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি থাকা পুলিশকে পেয়েছি। জুলাইয়ের গণহত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের বিষয়টি রয়েছে। জনপ্রশাসন কমিটির একটা দায়িত্বে দুই সপ্তাহের মতো ছিলাম। এই সময়ে যারা ২০১৮ সালের নির্বাচনে ডিসি ছিল এবং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের সরানোর দায়িত্ব নিয়েছি। নাহিদ বলেন, আমি আশা করবো, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের আকাঙ্ক্ষা, গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হবে। এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সফলতা দেখাতে পারবে।