Image description

রাজধানী ঢাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা তথ্য বলছে, রাজধানীতে অন্তত ৫০টির বেশি স্পটে ছিনতাই-ডাকাতি এবং প্রকাশ্যে অস্ত্রবাজির ঘটনা বেশি ঘটছে। এসব জায়গায় বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারি এবং অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

রাজধানীবাসীর অভিযোগ, প্রশাসন কঠোর অবস্থানের কথা বললেও বাস্তবে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। দিন-রাত কোনও সময়ই নিরাপদ নন নগরবাসী। বিশেষ করে রাতে ছিনতাইকারীদের তৎপরতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বেড়েছে অস্ত্রবাজিও।

এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সামরিক ও বেসামরিক বাহিনীর যৌথ প্রচেষ্টায় বিশেষ টহল বৃদ্ধি ও অভিযান শুরু করা হয়েছে।

 

গত রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে বনশ্রীতে এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে তার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ সোনা ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এর আগে দেশীয় অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে মোহাম্মদপুরে। উত্তরায় প্রকাশ্যে কোপানোর ঘটনা তো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল। গুলশানে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে কোটি টাকা ছিনতাই করা হয়। হাজারীবাগে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি করে সোনা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। প্রতিনিয়ত এমন ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন নগরবাসী।

এমন বেশ কয়েকটি ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এসব ফুটেজে দেখা যায়, ছিনতাইকারী ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে বাঁচার জন্য চিৎকার করলেও আশপাশে কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসছে না। পুলিশের টহল ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন নগরবাসী। তারা বলছেন, গত ২০ বছরে এমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটেনি।

 

মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা মো. সাইদুর রহমান বলেন, ‘এখন দিন-রাত কোনও সময়ই এই শহরকে নিরাপদ মনে হয় না। মনে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপরাধীদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।’

Bonsri-2d4e2eb5704f429b9b08431625fd3d11সম্প্রতি বনশ্রীতে ঘটা ছিনতাইয়ের ঘটনা (ছবি: ভিডিও থেকে)

ঢাকার অপরাধপ্রবণ এলাকা

গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, ছিনতাইকারীদের প্রধান হট স্পটগুলোর মধ্যে রয়েছে যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, কুতুবখালী, বনানী ব্রিজ, বাবুবাজার, কদমতলী, মতিঝিল, ধানমন্ডি ৩২ থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান, বছিলা তিন রাস্তার মোড়, নবোদয় হাউজিং, চাঁদ উদ্যান, শ্যামলী লিংক রোড, রায়ের বাজার এবং বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের আশপাশের এলাকা। এছাড়া তেজগাঁও, ফার্মগেট, মহাখালী, মিরপুর-১০ গোল চত্বর থেকে মিরপুর-১২ নম্বর, কালশী, উত্তরা, কাউলা, জসীমউদদীন, উত্তরা-৩, ৪, ১০ ও ১৪ নম্বর সেক্টর, আব্দুল্লাহপুর, মতিঝিল, পল্টন, কুড়িল বিশ্বরোড, বাঁশতলা, রামপুরা, বনশ্রী এলাকা।

বিশেষ করে যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, মোহাম্মদপুর এবং বছিলা এলাকায় ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বেশি বলে জানা গেছে। এসব স্থানে পুলিশের উপস্থিতি কম থাকায় অপরাধীরা সহজেই অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসে সারা দেশে ২৯৪টি হত্যাকাণ্ড, ১৭১টি চুরি, ৭১টি ডাকাতি, ১০৫টি অপহরণ এবং নারী ও শিশু নিপীড়নের ১ হাজার ৪৪০টি ঘটনা ঘটেছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এসব অপরাধের সংখ্যা বেড়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা, অপরাধীদের হাতে লুট হওয়া অস্ত্রের কারণে এসব অপরাধ বেড়েছে।

19উত্তরায় প্রকাশ্যে কোপানোর ঘটনা (ছবি: ভিডিও থেকে)

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপ

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশেষ অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেনাবাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড এবং পুলিশের যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে ঢাকাসহ দেশের অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোতে বিশেষ অভিযান শুরু করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অতিরিক্ত টহল বাড়ানো হয়েছে এবং থানাভিত্তিক অপরাধীদের তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে।

ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাজধানীর হটস্পটগুলোর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং বিশেষ ব্লক রেড পরিচালিত হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে দ্রুতই অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে রাজধানীর অপরাধ কমিয়ে আনা যাবে।’

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, ‘ছিনতাই প্রতিরোধে ডিবির স্পেশাল টিম মাঠে কাজ করছে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।’

এ বিষয়ে অপরাধ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মো হাম্মদ ওমর ফারুক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে শিথিলতা থাকলে অপরাধ বাড়ে। ঢাকার পরিস্থিতি এখন সে রকমই। রাজধানীর অপরাধ প্রবণতা রোধে সক্রিয় ব্যবস্থা নেওয়া না হলে জননিরাপত্তার সংকট আরও তীব্র হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।‘