
ভারত থেকে আসা বন্যা ও ভারী বৃষ্টিপাতের ক্ষতি থেকে দেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১১টি জেলার মানুষকে রক্ষা করতে একটি প্রকল্প নিয়েছে সরকার। ২ হাজার ১৪০ কোটি টাকা প্রাক্কলনে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের নেওয়া প্রকল্পটি হলো ‘বাংলাদেশ সাসটেইনেবল রিকভারি প্রিপারেডনেস অ্যান্ড রেসপনস’।
প্রকল্পটির প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। এরপর চলতি মাসের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভায় উত্থাপন হয়। পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে সভায় প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় প্রকল্পের ব্যয় ২ হাজার ১৪০ কোটি টাকার পরিবর্তে ১ হাজার ৯০৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে সরকার অর্থায়ন করবে ২৬২ কোটি টাকা এবং ঋণ সহায়তা আসবে ১ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা। চলতি বছরের এপ্রিলে কাজ শুরু হওয়ার কথা। মেয়াদ ৩০ জুন ২০৩১ সাল পর্যন্ত। কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, গত বছরের বন্যায় দেশের উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের প্রায় ৫৮ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় রাস্তাঘাট সংস্কার, সেতু, কালভার্ট নির্মাণ, বজ্রপাত নিরোধক ব্যবস্থা স্থাপন, আশ্রয়স্থল ও বিদ্যালয় তৈরি এবং সোলার স্ট্রিট লাইট স্থাপন করা হবে।
সূত্রমতে, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এই প্রকল্পের আওতায় ১১টি জেলার ৭৩টি উপজেলার ৫২৮টি ইউনিয়ন-পৌরসভার ৬০০ কিলোমিটার রাস্তা জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার, ১৫৫ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক পুনর্বাসন, ৬৪০ মিটার সেতু পুনর্নির্মাণ, ৫৩৩ মিটার বক্স কালভার্ট পুনর্নির্মাণ, ৩৩৬টি বিদ্যমান বিদ্যালয় পুনর্বাসন, ৫৪টি বিদ্যমান শেল্টারের ক্ষমতা বৃদ্ধি, ১১টি বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র প্রকল্পে (এমডিএসপি) অসম্পূর্ণ শেল্টার সম্পূর্ণকরণ, ২৫টি বহুমুখী জলবায়ু স্থিতিস্থাপক শেল্টারের পুনর্নির্মাণ, ৪ হাজার সোলার স্ট্রিট লাইট স্থাপন, ৬৭২টি বিদ্যালয়ে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ এবং ৫০০টি বজ্রপাত নিরোধক ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে।
প্রকল্প নির্বাচনের যৌক্তিকতা জানতে চাওয়া হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকৌশল অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আকস্মিক ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১১টি জেলার বিভিন্ন অবকাঠামো। এই অবকাঠামো সংস্কার ও জীবনমান উন্নয়নের জন্য সিলেট অঞ্চলে এডিবি, উত্তরাঞ্চলে জাইকা এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। তাদের প্রস্তাবের ভিত্তিতে এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পনা কমিশনের পিইসি সভায় প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন ২০২৯ পর্যন্ত নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে ঋণদাতাদের ১ লাখ ৩৫ হাজার লাখ মার্কিন ডলারকে ১২২ টাকা ধরে ব্যয় প্রাক্কলন করতে বলা হয়। এ ছাড়া প্রকল্পের ব্যয় ১ হাজার ৯০৯ কোটি রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এলজিইডি সূত্র জানায়, গত বছরের অক্টোবরে ভারতের ত্রিপুরা থেকে আসা বন্যার পানিতে দেশের ১১টি জেলার ৫৮ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্তমানে ১ লাখের বেশি মানুষ বন্যা-আক্রান্ত কমিউনিটিগুলোতে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। ভয়াবহ বন্যার কারণে ৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং প্রায় ৩ হাজার ৫০০টি পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করছে। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে নোয়াখালী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রাম।
বন্যায় গ্রামীণ রাস্তাঘাট, কৃষিক্ষেত্র এবং মাছের পুকুর তলিয়ে গিয়েছে, প্রয়োজনীয় যাতায়াত ব্যাহত হচ্ছে এবং স্থানীয় জনগণের জীবিকার ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। এই দুর্যোগে প্রায় ৩ লাখ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া মৎস্য চাষে আর্থিক ক্ষতি প্রায় ১২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষতির পরিমাণ ৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।