![Image description](https://content.bdtoday.net/files/img/202502/3a5cedf2949734d63f1bb1d83b986c05.png)
Salem Abduhu
আমি ভাবছিলাম—এই পৃথিবীতে “আয়নাঘর” এর মতো আর কিছু আছে কি? এমন কোনো জায়গা, যেখানে মানুষকে চুপচাপ গুম করে ফেলা হয়, যেখানে দিনের আলো পৌঁছায় না, যেখানে নিরপরাধ মানুষ বছরের পর বছর বন্দি থাকে?
আর্জেন্টিনা। ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৩।
এক অন্ধকার অধ্যায়, যার নাম “ডার্টি ওয়ার” (La Guerra Sucia)। সাত বছর ধরে সামরিক জান্তা সরকার হাজার হাজার মানুষকে তুলে নিয়ে গুম করেছিল। কারও বিচার হয়নি। কেউ ফিরে আসেনি। ESMA (Escuela de Mecánica de la Armada)— নৌবাহিনীর মেকানিক্যাল স্কুল, যেখানে মানুষদের ধরে এনে অকথ্য নির্যাতন চালানো হতো। Club Atlético, Olimpo, Automotores Orletti— এসব ছিল ভয়ংকর নির্যাতন কেন্দ্র, যেখানে মানুষদের ধরে এনে অত্যাচার করা হতো, হত্যা করা হতো, কিংবা চিরতরে নিখোঁজ করে দেওয়া হতো।
কিন্তু আর্জেন্টিনা ইতিহাস চাপা দেয়নি। তারা এই বন্দিশালাগুলোকেই মিউজিয়ামে পরিণত করেছে। আজ এসব জায়গায় গিয়ে মানুষ দেখে, কীভাবে রাষ্ট্রীয় শক্তিকে ব্যবহার করে স্বৈরশাসকরা মানুষ গুম করেছিল। নতুন প্রজন্ম শিখছে, যাতে ইতিহাস আর কখনো পুনরাবৃত্তি না হয়।
এবং ২০২৩ সালে, ইউনেস্কো ESMA মিউজিয়ামকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ঘোষণা করেছে। এটি শুধু আর্জেন্টিনার নয়—গুম, নিপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো প্রতিটি জাতির জন্য এক প্রতীক।
আমাদের আয়নাঘরগুলো কি ভুলে যাওয়ার জন্য? নাকি ইতিহাসের জন্য?
আমরা কি পারি না প্রতিটি আয়নাঘরকে মিউজিয়ামে পরিণত করতে? যেখানে থাকবে বন্দিদের নাম, গুম হওয়া মানুষদের ছবি, নির্যাতনের চিহ্ন। নতুন প্রজন্ম জানবে, কীভাবে নিরপরাধ মানুষগুলো বছরের পর বছর অন্ধকার ঘরে বন্দি ছিল।
কেবল বইয়ের পাতায় ইতিহাস লিখলে তা ম্লান হয়ে যায়। কিন্তু বাস্তবের সামনে দাঁড়ালে কেউ মুছে ফেলতে পারে না।
সবাই জানুক—
কীভাবে এক বাবাকে বিচার ছাড়াই হত্যা করা হলো।ছেলে জানতেই পারলো না, কীভাবে আট বছর বন্দি রাখা হলো।
কীভাবে স্ত্রী সন্তানরা জানতেই পারল না, তার স্বামী বেঁচে আছে কি না।
সরকারের উচিত প্রতিটি আয়নাঘরকে সংরক্ষণ করা এবং নতুন প্রজন্মের জন্য সত্য উদঘাটন করা। ইতিহাস চাপা পড়ে গেলে, অন্যায় বারবার ফিরে আসে। আমরা কি সেটা হতে দিতে পারি?