Image description
 
 

গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের উপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত শিক্ষার্থী আবুল কাশেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। মা-বাবাহীন এতিম কাশেমের মৃত্যুতে শোকে কাতর এলাকাবাসী। তার মৃত্যুতে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেছেন তারা।

আবুল কাশেম (১৭) গাজীপুর মহানগরীর দক্ষিণ কলমেশ্বর এলাকার মৃত জামান হাজীর ছেলে। বুধবার বিকাল তিনটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।

বুধবার বিকালে সরেজমিনে কাশেমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তার বাড়িতে ভিড় করছেন। তাকে কোথায় দাফন করা হবে সে বিষয়ে মত দেওয়ার তেমন কোনো স্বজন নেই। এজন্য প্রতিবেশীরা কবর কোথায় দেওয়া হবে তা নিয়ে আলোচনা করছেন। মা- বাবা ও ভাই না থাকায় এলাকাবাসী এখন তার যাবতীয় দাফনের কাজের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কাশেমের মৃত্যুতে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছেন তারা। 

 

এলাকাবাসী জানান, আবুল কাশেম এতিম, তার বাবা মারা গেছেন ৫-৭ বছর আগে। মা হারিয়ে গেছে, তার খোঁজ নেই ১৫ বছর। বড়ভাই গতবছর জুলাই মাসে মারা গেছে। ১৫ বছরের ছোটবোন সুইটি থাকে আত্মীয়ের বাসায়। কাশেম স্পষ্টভাষী ছেলে, একাই বাড়িতে থাকতো। আর পাশের অনুশীলন প্রি- একাডেমি স্কুল পড়াশোনা করতো। জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলনে ও সব সময় বিভিন্ন মিছিল মিটিংয়ে যেতো। এলাকাবাসীর সবাই তাকে ভালো জানতো। সে একজন মানুষের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করেনি।

নিহত কাশেমের চাচি সুরাইয়া বেগম বলেন, শুক্রবার বিকালে বাসার সামনে বসে আছি। ও বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আমার দিকে বারবার তাকাচ্ছিলো। সন্ধ্যার পরে শুনলাম ছাত্রদের সঙ্গে কোথায় যেন গেছে। এরপরে তো আহত অবস্থায় হাসপাতালে। বাবা-মা নেই একা একা বসে কাঁদছি। ওর মৃত্যুতে কাঁদার মতো কেউ নেই দেশবাসী ছাড়া। ওর মৃত্যুতে যারা দায়ী তাদের বিচার চাই।

 

নিহত কাশেমের দূর সম্পর্কের আত্মীয় সজিব আহমেদ শাহিন বলেন, একসঙ্গে আমরা চলাফেরা করতাম। সে শুক্রবার রাতে আহত আবার খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে যাই। আমাকে দেখে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে, বলে শাহিন ভাই আমাকে অনেক মেরেছে আমাকে বাঁচাও। আমি কিছু করি নাই ছাত্ররা ফোন দিছে পরে আমি আইছি। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। এরপর আর কথা বলতে পারেনি, ইনজেকশন দিয়ে ঢাকা হাসপাতালে নিয়ে যায়। 

এর আগে গত শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে গাজীপুর মহানগরীর ধীরাশ্রম দক্ষিণখান এলাকায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ওপর হামলা করে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। তাদেরকে আটকে মারধর করা হয়। এতে ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হন।

এ ঘটনার পরদিন শনিবার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের গাজীপুরের আহ্বায়ক মো. আব্দুল্লাহ মোহিত বাদী হয়ে গাজীপুর সদর থানায় মামলা করেন। মামলায় ২৩৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২০০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি আমজাদ হোসেন মোল্লা নামের আওয়ামী লীগের এক কর্মী।