
বয়স যেন আর শুধু সংখ্যা! জাপানের বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, তারা এমন এক যুগান্তকারী ওষুধ আবিষ্কার করেছেন যা মানুষের বার্ধক্যের গতি নাটকীয়ভাবে ধীর করে দিতে পারে। এই ওষুধের কল্যাণে মানুষের আয়ু বাড়তে পারে সর্বোচ্চ ২৫০ বছর পর্যন্ত।
এই খবর প্রকাশের পর থেকেই বিশ্বজুড়ে বৈজ্ঞানিক মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে। কেউ বলছেন—এটি মানব সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সাফল্য হতে পারে, আবার কেউ সতর্ক করছেন—এটি হয়তো প্রাকৃতিক জীবনের ভারসাম্যকে হুমকিতে ফেলতে পারে।
জাপান টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, টোকিও ইউনিভার্সিটি ও কিওটো বায়োসায়েন্স ইনস্টিটিউট যৌথভাবে তৈরি করেছে “এনআরএফ-৫১ (NRA-51)” নামের এই ওষুধ। এটি কোষের ভেতরে থাকা মাইটোকন্ড্রিয়াকে পুনরায় সক্রিয় করে তোলে, ফলে কোষগুলোর বয়স বাড়ার গতি কমে যায় এবং তারা দীর্ঘ সময় ধরে তরুণ অবস্থায় কাজ করতে পারে।
‘সায়েন্স অ্যালার্ট’-এর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ওষুধটি মানবদেহে থাকা SIRT6 নামের প্রোটিনের কার্যকারিতা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়—যা কোষের ডিএনএ মেরামত এবং কোষ বিভাজন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সাধারণত বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই প্রোটিন নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়, ফলে হৃদরোগ, ক্যান্সার, আলঝেইমারের মতো রোগ দেখা দেয়। কিন্তু এই ওষুধ সেই প্রক্রিয়া উল্টে দেয়।
গবেষকদের দাবি, এই ওষুধ মানুষের জিন বা ডিএনএ পরিবর্তন করে না; বরং দেহের নিজস্ব প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করে। ফলে বার্ধক্য বিলম্বিত হয় এবং বয়সজনিত রোগের ঝুঁকি কমে আসে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এটি বাস্তবে কার্যকর প্রমাণিত হয়, তবে মানব সভ্যতা প্রবেশ করবে এক নতুন যুগে—যেখানে মানুষ শত শত বছর সুস্থভাবে বাঁচতে পারবে। চিকিৎসা, প্রযুক্তি ও শিল্পকলায় অভিজ্ঞতা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সংরক্ষিত থাকবে।
তবে সমালোচকরাও কম নন। বিবিসি ফিউচার-এর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, মানুষের আয়ু ২৫০ বছর হলে বৈশ্বিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য ভেঙে পড়বে। জনসংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাবে, খাদ্য ও পানির সংকট দেখা দিতে পারে, আর ধনী-গরিবের বৈষম্য আরও তীব্র হতে পারে।
বর্তমানে এই ওষুধ এখনো গবেষণা পর্যায়ে রয়েছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, বাজারে এলে প্রতি কোর্সের দাম হতে পারে দুই থেকে তিন লাখ মার্কিন ডলার—বাংলাদেশি টাকায় প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা। ফলে প্রাথমিকভাবে শুধু ধনী শ্রেণীর নাগালেই পৌঁছাবে এটি।
গবেষকরা অবশ্য আশাবাদী। তাদের মতে, “এনআরএফ-৫১ হয়তো অমরত্ব এনে দেবে না, কিন্তু এটি বার্ধক্যের কষ্ট কমিয়ে মানুষকে আরও দীর্ঘ ও প্রাণবন্ত জীবন দান করতে পারে।”
এখন প্রশ্ন একটাই—এই ওষুধ কি সত্যিই মানব সভ্যতার ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচনা করবে, নাকি এটি হবে এক ভয়াবহ পরীক্ষার সূচনা?a