Image description

যুক্তরাষ্ট্রে শিকাগোর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের টম অ্যান্ড জেরির জাইরোস ডাইনারে কাজ করতেন সিলভেরিও ভিয়েগাস গনজালেস। তার নিয়মানুবর্তিতা নিয়ে সবাই ছিলেন খুবই সন্তুষ্ট। কখনও ৫ মিনিট দেরির সম্ভাবনা থাকলেও কর্মস্থলে কাউকে জানিয়ে রাখতেন। কিন্তু এক সকালে তিনি যখন ১২ মিনিট দেরি করেন, তখনই ম্যানেজার বুঝতে পারেন কিছু গড়বড় হয়েছে।

সেদিনের শিফট শুরুর কিছুক্ষণ আগে ৩৮ বছর বয়সি গনজালেস তার দুই ছেলেকে স্কুল ও ডে-কেয়ারে নামিয়ে ফেরার পথে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) কর্মকর্তার গুলিতে নিহত হন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে পরিচালিত দেশব্যাপী অভিবাসন অভিযানে বলি হলেন তিনি।

শুক্রবার সকালে তিনি বড় ছেলেকে স্কুলে ও ছোট ছেলেকে ডে-কেয়ারে নামিয়ে ফেরার পথে আইসিই কর্মকর্তারা তাকে থামান। একাধিক সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, কর্মকর্তারা গাড়ির দু’পাশে এসে কথা বলছেন। কিছুক্ষণ পর গনজালেস গাড়ি পেছনে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাইলে গুলির শব্দ শোনা যায়।

অল্প সময়ের মধ্যেই তার গাড়ি এক ডেলিভারি ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা খায়। পরে পুলিশ নিশ্চিত করে, তিনি ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

মেক্সিকোর ইরিম্বোতে তার ভাই জর্জ তখন একটি মিনিবাস চালাচ্ছিলেন—সেখানেই ফোনে পান ভাইয়ের মৃত্যুসংবাদ। গনজালেসের দুই ছেলেকে এরপর স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ফস্টার কেয়ারে নেয়।

হত্যাকাণ্ডের পর হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দাবি করে, নিহত ব্যক্তি একজন অপরাধী এবং অবৈধ অভিবাসী। তার বেপরোয়া গাড়ি চালানোর রেকর্ড ছিল। তাদের দাবি, গনজালেস গাড়ি চালিয়ে এক কর্মকর্তার দিকে ধেয়ে আসায় আত্মরক্ষার্থে গুলি ছোড়া হয়।

এখন এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তের দায়িত্ব কার হাতে যাবে তা স্পষ্ট নয়। ফ্র্যাঙ্কলিন পার্ক পুলিশ ও এফবিআই ঘটনাস্থলে গেলেও, দু’দলই মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়।

রয়টার্সের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মেক্সিকোর মিচোয়াকান রাজ্যের ইরিম্বো গ্রামের মানুষটি ছিলেন পরিশ্রমী ও চুপচাপ স্বভাবের, যিনি অর্থনৈতিক উন্নতির আশায় মার্কিন মুলুকে পাড়ি জমান। অতিরিক্ত মদ্যপানে একসময় অসুস্থ হয়ে পড়লেও পরে সম্পূর্ণ সুস্থ জীবনযাপন শুরু করেন।

সহকর্মীরা তাকে নির্ভরযোগ্য ও বিনয়ী হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ডাইনারের ম্যানেজার অ্যাশলি আলেকনা বলেন, তিনি ছিলেন নরমস্বভাবের। কখনও উচ্চস্বরে কথা বলতেন না।

গনজালেসের শৈশবের বন্ধু ও পরবর্তীতে জীবনসঙ্গী ব্লাঙ্কা মোরার ভাষায়, সে খুব শান্ত স্বভাবের ছিল। ছোটবেলায় গ্রামের সীমানায় আমাদের দেখা হতো নিয়মিত।

২০০৭ সালে গনজালেস যুক্তরাষ্ট্রে আসেন তার বড় ভাইয়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে। রেস্তোরাঁয় তিনি কাজ শুরু করেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ রাঁধুনিই বিদেশি বংশোদ্ভূত।

সঙ্গিনী এবং দুই সন্তান নিয়ে ছিল তার পরিবার। আর্থিক দিক থেকে চাপে থাকলেও তিনি পরিবারটিকে টিকিতে রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন তিনি। ২০১১ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে তার বিরুদ্ধে ট্র্যাফিক আইন লঙ্ঘনের কয়েকটি অভিযোগ ছাড়া কোনও ফৌজদারি অপরাধের রেকর্ড ছিল না।

গনজালেস নিয়মিত সন্তানদের নিয়ে যেতেন স্থানীয় লাইব্রেরিতে, খেলতেন লেগো। রাতের খাবারের সময় পুরোপুরি বরাদ্দ রাখতেন পরিবারের জন্য, সে সময় কড়াভাবে মুঠোফোন ব্যবহার এড়িয়ে চলতেন তারা।

শোকে দিশেহারা ব্লাঙ্কা মোরা বলেছেন, রাতে চোখ বন্ধ করলেও সে ভাবত কেবল সন্তানদের কথা।