Image description

রাশিয়ার গভীরে হামলার জন্য ইউক্রেনকে টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের পরিকল্পনা করলে তা মস্কো-ওয়াশিংটনের সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে পারে, এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রবিবার রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে সরাসরি এই সতর্কবার্তা দেন তিনি।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের আলাস্কায় শীর্ষ বৈঠকের মাত্র দুই মাস না যেতেই রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক ফের তীব্র উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর অগ্রগতি এবং রুশ ড্রোনের ন্যাটোর আকাশসীমায় প্রবেশের অভিযোগ নতুন করে সংঘাতের ঝুঁকি বাড়িয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে ওয়াশিংটন ইউক্রেনকে দূরপাল্লার টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি বিবেচনা করছে বলে জানিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রায় ২,৫০০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম, যা ইউক্রেনের হাতে গেলে পুরো রাশিয়া এবং মস্কো সরাসরি এর আওতায় চলে আসবে।

পুতিন এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘এই ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করা হলে তা আমাদের সম্পর্ক ধ্বংস করবে। কিংবা অন্তত যে ইতিবাচক প্রবণতাগুলো তৈরি হচ্ছিল, তা একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে।’

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, পুতিন শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছেন। রাশিয়াকে কটাক্ষ করে ট্রাম্প বলেন, ‘কাগুজে বাঘ’ রাশিয়া ইউক্রেনকে দমনে ব্যর্থ হয়ে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করেছে। এর জবাবে পুতিন পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন: ‘ন্যাটোই কি কাগুজে বাঘ নয়? যারা রাশিয়ার অগ্রযাত্রা থামাতে পারেনি।’

রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মার্কিন দুই কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লিখিত তথ্য যে, ইউক্রেনকে টমাহক সরবরাহ এবং রাশিয়ার জ্বালানি অবকাঠামো নিয়ে গোয়েন্দা তথ্য দেওয়া হতে পারে, তা সত্য।

তবে অপর একটি মার্কিন কর্মকর্তা ও আরও তিনটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, বাস্তবিকভাবে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনে পাঠানোর সম্ভাবনা এখনো খুবই সীমিত। কারণ এই অস্ত্র বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী এবং সামরিক নিরাপত্তা কাঠামোয় ব্যবহৃত হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার পুতিন মন্তব্য করেছিলেন, টমাহকের কার্যকর ব্যবহার শুধুমাত্র মার্কিন সামরিক বাহিনীর সরাসরি সম্পৃক্ততা ছাড়া সম্ভব নয়। তার ভাষায়, ‘এ ধরনের অস্ত্র সরবরাহের মানেই হবে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা সম্পূর্ণ নতুন এবং উচ্চতর স্তরে পৌঁছাবে।’

তিনি আরও বলেন, এই ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার জন্য হুমকি হলেও, তার দেশ সেগুলো ভূপাতিত করতে সক্ষম। পাশাপাশি এটি রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আরও উন্নয়নে সহায়তা করবে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ইউক্রেন যুদ্ধকে রাশিয়া-পশ্চিম সম্পর্কের একটি মোড় ঘোরানো মুহূর্ত হিসেবে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ার পর পশ্চিমারা ন্যাটো সম্প্রসারণ এবং রাশিয়ার প্রভাব বলয়ে হস্তক্ষেপ করে মস্কোকে অপমান করেছে।

অন্যদিকে পশ্চিমা নেতারা এবং ইউক্রেন এই যুদ্ধকে রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদী ভূমি দখলের প্রচেষ্টা হিসেবে বিবেচনা করছেন। তাদের মতে, রাশিয়াকে পরাজিত না করলে পুতিন ন্যাটোর অন্য কোনো সদস্য রাষ্ট্রে আক্রমণের ঝুঁকি নিতে পারেন। যদিও এসব অভিযোগ বারবার অস্বীকার করে আসছেন ভ্লাদিমির পুতিন।

 

সূত্র: রয়টার্স।