
যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে একটি সিনাগগে (ইহুদিদের ধর্মীয় উপাসলয়) সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় দুজন ইহুদি ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
আরও চারজন গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজন নিরাপত্তাকর্মীও রয়েছেন। পুলিশ গুলি করে হামলাকারীকেও হত্যা করেছে।
অর্থাৎ হামলাকারীসহ মোট তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ইহুদি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় পবিত্র দিন 'ইয়োম কিপুর' উপলক্ষে মানুষ যখন উপাসনায় অংশ নিচ্ছিলেন, তখনই এ হামলা ঘটে। পুলিশ ঘটনাটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে ঘোষণা করেছে।
কীভাবে হামলা ঘটল?

ছবির উৎস,Getty Images
গ্রেটার ম্যানচেস্টার পুলিশের (জিএমপি) তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৩১ মিনিটে জরুরি সেবায় ফোন আসে যে, একটি গাড়ি উপাসনাকারীদের দিকে ধেয়ে গেছে এবং ছুরি হাতে এক ব্যক্তি উপস্থিতদের আক্রমণ করছে।
পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে কয়েক মিনিটের মধ্যেই হামলাকারীকে গুলি করে হত্যা করে। সকাল ৯টা ৩৮ মিনিটেই সন্দেহভাজন মারা যায়। পুলিশ জানিয়েছে, উপাসনাকারীরাই হামলাকারীকে ভবনের ভেতরে ঢুকতে বাধা দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, ঘটনার সময় সিনাগগের বাইরে বেশ ভিড় ছিল। স্থানীয় বাসিন্দা শাহ জানিয়েছেন, তিনি গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন যখন দেখেন একটি গাড়ি দ্রুত ছুটে গিয়ে মানুষের দিকে ধেয়ে আসছে। পরে তিনি দেখেন এক ব্যক্তি গাড়ি থেকে লাফিয়ে বের হয়ে মানুষের দিকে দৌড়াচ্ছে। তিনি ঘটনাটিকে "ভয়াবহ অভিজ্ঞতা" বলে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, "লোকটি হাতে ছুরি নিয়ে বের হয়ে এলো এবং উন্মত্তভাবে আক্রমণ শুরু করল। সত্যি বলতে ভীষণ ভীতিকর ছিল।"
আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী গ্যারেথ টং বিবিসিকে বলেন, তিনি কাছাকাছি ডেলিভারি ভ্যান চালাচ্ছিলেন এবং দেখেন এক ব্যক্তি রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে।
টং বলেন, "কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পুলিশ এসে পৌঁছায়। তারা কয়েকবার সতর্ক করে কিন্তু হামলাকারী শোনেনি। তাই গুলি চালানো হয়।"
তিনি আরও জানান, ছুরিধারী প্রথমে পড়ে গেলেও আবার উঠতে চেষ্টা করে, তখন আবার পুলিশ গুলি চালায়।
সন্দেহভাজন হামলাকারী

ছবির উৎস,Reuters
বৃহস্পতিবার বিকেলে এক পৃথক সংবাদ সম্মেলনে সন্ত্রাসবিরোধী পুলিশ প্রধান লরেন্স টেলর বলেন, পুলিশ ধারণা করছে যে তারা সন্দেহভাজন ব্যক্তির পরিচয় জানে কিন্তু "ঘটনাস্থলে নিরাপত্তার কারণে" এখনও তা নিশ্চিত করতে পারছে না।
হামলাকারীর গায়ে এমন একটি ভেস্ট ছিল যা দেখতে বিস্ফোরক রাখা জ্যাকেটের মতো লাগছিল। সেখানকার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ মাটিতে শুয়ে থাকা লোকটির দিকে অস্ত্র তাক করে আছে। কয়েক সেকেন্ড পর লোকটি উঠতে চাইলে গুলি চালানো হয় এবং সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
ইয়োম কিপুর কী?
ইয়োম কিপুর ইহুদিদের ধর্মীয় ক্যালেন্ডারের সবচেয়ে পবিত্র দিন। দিনটিকে প্রায়শ্চিত্তের সময় হিসেবে দেখা হয় এবং ইহুদিরা মনে করেন এদিনে ঈশ্বর আগামী বছরের জন্য ব্যক্তির ভাগ্য নির্ধারণ করে।
ইহুদিরা এদিন উপবাস পালন করেন। এটি প্রার্থনা ও আত্মশুদ্ধির দিন এবং এদিনে কাজকর্ম নিষিদ্ধ থাকে। অনেকে যারা নিয়মিত সিনাগগে যান না, তারাও এই দিনে যান। ফলে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়।
মেইডেনহেড সিনাগগের র্যাবাই (ধর্মযাজক) জোনাথন রোমেইন বলেছেন, "এটি প্রতিটি ইহুদির সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্ন। এই দিন শুধু সবচেয়ে পবিত্র নয়, বরং সবচেয়ে বড় সমাবেশেরও দিন।"
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার বলেছেন, দেশের বিভিন্ন সিনাগগে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। তিনি বলেন, "আমরা আমাদের ইহুদি সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার জন্য সবকিছু করব।" ঘটনার পর মি. স্টার্মার ডেনমার্ক সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে এসে জরুরি বৈঠক ডাকেন।