
আসামে আবারও খুলে গেল পুরোনো ক্ষত। বিজেপির রাজ্য কমিটি সামাজিক মাধ্যমে এক এআই–তৈরি ভিডিও ছড়িয়ে দিল, যেখানে ‘বাংলাদেশি মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের’ হুমকি চিত্রিত করা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানালো বিরোধী দল কংগ্রেস।
গোহাটি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে কংগ্রেস নেতারা বলছেন— এভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে জনমত উত্তেজিত করা একেবারেই বেআইনি।
বিরোধীদলীয় নেতা দেবব্রত শইকিয়া সরাসরি অভিযোগ তুললেন—প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একাধিকবার অভিবাসন রোধের আশ্বাস দিয়েছিলেন, কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি ভেস্তে গেছে। ২০১৪ সালে নির্বাচনের পরই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ছিল, আজও অবাধে প্রবেশ ঘটছে।
শইকিয়া প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন—তাহলে সীমান্ত রক্ষায় দায়িত্বে থাকা বাহিনী কী করছে? বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স কিংবা সীমান্ত পুলিশ ব্যর্থ হলে তার দায় কার?
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ‘অসফল মন্ত্রী’ ঘোষিত করা উচিত কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুললেন তিনি। শইকিয়ার বক্তব্যে স্পষ্ট—ধর্মের বিভাজন নয়, বিদেশি মানেই বিদেশি।
আসাম চুক্তি ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চকে সীমা ধরে দিয়েছিল। এর পরে আসা কাউকে, সে হিন্দু হোক বা মুসলিম, ফিরিয়ে দেওয়াই শর্ত। অথচ বিজেপি সরকার নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে ধর্মভিত্তিক ছাড় দিয়ে সেই চুক্তির মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে।
বিরোধীদলীয় এই নেতা সতর্ক করে বলেন—এভাবে নাগরিকত্ব বাড়ানো হলে রাজ্যের জনসংখ্যার গঠন ও সংস্কৃতির আসল চরিত্র বদলে যাবে।
কংগ্রেসের এ অভিযোগের জবাবে কড়া সুর চড়িয়েছে বিজেপিও। রাজ্য সহ–সভাপতি রত্না সিং বলেন, ভিডিও কোনো মিথ্যা নয়, বাস্তব।
তার মতে, বহিরাগতরা বাজার দখল করেছে, জমি নিয়েছে, অর্থনীতির ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, প্রকৃত আসামীয় মুসলিমরা হুমকির মুখে নেই, বরং বহিরাগতদের হাতেই তাদের অস্তিত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। কংগ্রেসের দীর্ঘ শাসনকালে সমস্যার সমাধান তো হয়নি, বরং আরও বাড়ানো হয়েছে—এমন অভিযোগও তুলেছেন এই নেত্রী।
এদিকে রাজনৈতিক তর্কের ভেতর দিয়ে এক নতুন মাত্রা এনেছে এই এআই–ভিডিও। প্রযুক্তি এখন শুধু উন্নতির হাতিয়ার নয়, বরং রাজনীতির ময়দানে অস্ত্রও বটে। বিরোধীরা একে বলছে ‘মানুষকে বিভক্ত করার খেলা’, আর ক্ষমতাসীনরা বলছে ‘চোখে আঙুল দিয়ে সত্যি দেখানো’।
কিন্তু জনতার দৃষ্টিতে প্রশ্ন হলো—এত প্রতিশ্রুতি, এত আন্দোলন, এত আইন সংশোধন—তবু কেন সমস্যার শেষ হলো না? চুক্তি কার্যকর হলো না কেন? কার দায়ে আজও সীমান্ত পেরিয়ে মানুষ ঢুকে পড়ছে?
রাজনীতি উত্তপ্ত হলেও মানুষের মনে জমছে অনিশ্চয়তা। আগামী দিনে আসামের নির্বাচন, রাজনীতি ও সামাজিক ভারসাম্য কতটা এই অভিবাসন ইস্যুর ওপর নির্ভর করবে, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।