Image description
 

বাংলাদেশে অধ্যয়নরত ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের কল্যাণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে ঢাকাস্থ ফিলিস্তিন দূতাবাস।

 

ঢাকাস্থ ফিলিস্তিন দূতাবাস জানিয়েছে, বর্তমান বাংলাদেশ সরকার ফিলিস্তিনি নাগরিকদের প্রতি উদার সহায়তা অব্যাহত রেখেছে, যার মধ্যে রয়েছে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থীর জন্য ‘ভিসা অন অ্যারাইভাল’ সুবিধা এবং দেশের ২০টিরও বেশি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় ২৮০টি পূর্ণাঙ্গ বৃত্তি।

সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (এএইউডব্লিউ)-এ গাজা থেকে আগত নারী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রসঙ্গে দূতাবাসের অবস্থান ‘বিকৃতভাবে’ উপস্থাপিত হয়েছে বলে জানায় ফিলিস্তিন দূতাবাস। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, দূতাবাস মাত্র ‌‘দুই ডজন’ বৃত্তি নিশ্চিত করেছে, যা সঠিক নয়। দূতাবাসের দাবি, বাস্তবে তারা ২০০টিরও বেশি বৃত্তি নিশ্চিত করেছে। এছাড়া দূতাবাসের কারণে বিলম্বে ৩০ জন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে—এমন অভিযোগও ভিত্তিহীন। এই ৩০ জন শিক্ষার্থী স্বেচ্ছায় এএইউডব্লিউ থেকে সরে গিয়ে দূতাবাসের ব্যবস্থাপনায় বিকল্প বৃত্তি গ্রহণ করেছেন।

দূতাবাস জানায়, বাংলাদেশে অধ্যয়নরত ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের, বিশেষত নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তাদের অগ্রাধিকার। অতীতে এএইউডব্লিউ-তে আফগানিস্তানের এক শিক্ষার্থী ও লাওসের এক শিক্ষার্থীর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা সক্ষমতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টির এমন কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে, যারা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ইসরাইলি সরকার ও তার ফিলিস্তিনবিরোধী নীতিকে সমর্থন করে।

ফিলিস্তিন দূতাবাসের বিরোধিতার মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে—

* এএইউডব্লিউ-এর প্রতিষ্ঠাতা চ্যান্সেলর চেরি ব্লেয়ার, যিনি সাবেক যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের স্ত্রী। টনি ব্লেয়ার যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘গাজা রিভিয়েরা’ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত, যার লক্ষ্য গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনিদের যেকোনোভাবে উৎখাত করা।

* বাংলাদেশে একমাত্র বিদেশি চ্যান্সেলর রয়েছেন এএইউডব্লিউ-তে, যেখানে বাকি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজে ইসরাইল-সম্পৃক্ত ব্যক্তি রয়েছেন।

* এএইউডব্লিউ-এর গুরুত্বপূর্ণ দাতাদের মধ্যে বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন, বায়াবাংলাদেশে অধ্যয়নরত ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের কল্যাণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধর এজি এবং ডাইরেক্ট রিলিফ রয়েছে, যাদের ইসরাইল বা ইসরাইলি সংস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে।

* যুক্তরাষ্ট্রসহ পাঁচটি পশ্চিমা দেশ ফিলিস্তিন দূতাবাসকে এএইউডব্লিউ থেকে শিক্ষার্থী নিতে চাপ দিয়েছে, অথচ এসব দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়নি বরং ইসরাইলকে অস্ত্র সরবরাহ করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির অংশীদারিত্ব রয়েছে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সিওজিএটি (COGAT)-এর সঙ্গে, যা ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক উচ্ছেদে জড়িত।

দূতাবাস জানিয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) যে এএইউডব্লিউকে সরাসরি সহায়তা দিচ্ছে—প্রতিবেদনে এমন ইঙ্গিত থাকলেও, সরকারি সূত্রে নিশ্চিত হয়েছে যে আরব আমিরাতের সহায়তা ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য মানবিক ভিত্তিতে ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নয়। বর্তমানে আরব আমিরাত আর এ ধরনের সহায়তা দেবে না, যা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রসত্তার বিপরীতে যায়।

 

দূতাবাস স্পষ্ট করেছে, গাজার নারী শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে পড়াশোনার জন্য অন্য যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে আগ্রহী এবং এ ধরনের ভর্তি প্রক্রিয়ায় দূতাবাসের কোনো আপত্তি নেই। বর্তমানে বাংলাদেশে ৭০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে এবং আরও শিক্ষার্থী আনতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

 


 

গাজার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে দূতাবাস জানিয়েছে, বর্তমানে ২২ লাখের বেশি মানুষ অবরুদ্ধ অবস্থায় বোমাবর্ষণ, জোরপূর্বক উচ্ছেদ ও অনাহারের শিকার। ইসরাইল ও তার মিত্ররা গাজাকে জনশূন্য করে তথাকথিত ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা’ বানানোর পরিকল্পনা করছে, যা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রসত্তাকে বিপন্ন করবে।

দূতাবাসের বক্তব্য, ‘ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীরা, কোনো রাজনৈতিক বা প্রাতিষ্ঠানিক এজেন্ডার পণ্য নয়। তাদের মর্যাদা, অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষা করেই বাংলাদেশে শিক্ষার সুযোগ বাড়াতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’