Image description

রাশিয়া থেকে তেল কেনার ‘অপরাধে’ বুধবার (৬ অগাস্ট) প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতের ওপর যে বাড়তি ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানোর কথা ঘোষণা করেছেন, সেই ধাক্কা থেকেই দিল্লি এখনও বেরোতে পারেনি। ভারতীয় পণ্যের ওপর এখন মোট মার্কিন শুল্ক হতে যাচ্ছে ৫০ শতাংশ - যে পদক্ষেপ এই ঘোষণার ঠিক তিন সপ্তাহ পর, অর্থাৎ আগামী ২৭শ অগাস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা।

এই পদক্ষেপকে ভারত সরকার বিবৃতি দিয়ে ‘অন্যায়’ ও ‘অযৌক্তিক’ বলে বর্ণনা করেছে যথারীতি এবং বিশ্লেষকরা সবাই প্রায় একবাক্যে বলছেন, ভারতের রফতানিমুখী বাণিজ্য ও সার্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর এত বড় আঘাত স্মরণকালের মধ্যে আসেনি। ভারত এই মুহুর্তে বছরে প্রায় ৮৭ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ পণ্য আমেরিকায় রফতানি করে থাকে। ট্যারিফের এই হার বজায় থাকলে তার প্রায় পুরোটাই বাণিজ্যিকভাবে ‹আনভায়াবেল› হয়ে পড়বে- মানে অন্য দেশের পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ভারত টিকে থাকতে পারবে না।

এর মধ্যেই, আন্তর্জাতিক রিটেল ইকমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন, টার্গেট, ওয়ালমার্টের মতো প্রতিষ্ঠান ভারতীয় পণ্য নেয়া বন্ধ করেছে। ভারতীয় রফতানিকারকরা বলছেন, মার্কিন ক্রেতারা ই-মেইল ও চিঠির মাধ্যমে পোশাক ও টেক্সটাইল পণ্যের চালান আপাতত বন্ধ রাখতে বলেছে। শুল্ক আরোপের কারণে ক্রেতারা বাড়তি খরচ ভাগাভাগি করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ভারতীয় রপ্তানিকারকদেরই এই বোঝা বহন করতে বলেছে। এনডিটিভি জানিয়েছে, ট্রাম্পের আরোপ করা দ্বিগুণ শুল্কের জেরে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় পণ্যের রফতানি খরচ ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে এবং এতে যুক্তরাষ্ট্রগামী অর্ডার ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কমে যেতে পারে। ফলে ভারতের ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি মার্কিন ডলারের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

ভারতীয় এই সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ওয়েলস্পান লিভিং, গোকালদাস এক্সপোর্টস, ইন্ডো কাউন্ট ও ট্রাইডেন্টের মতো ভারতীয় বড় বড় রফতানিকারকদের পণ্য বিক্রির ৪০ থেকে ৭০ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক। ভারতের পোশাক ও টেক্সটাইল শিল্পে যুক্তরাষ্ট্রই সবচেয়ে বড় রফতানির বাজার। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট ৩৬.৬১ বিলিয়ন ডলারের রফতানির ২৮ শতাংশই গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম টেক্সটাইল রফতানিকারক ভারত আশঙ্কা করছে, এই পরিস্থিতিতে তারা বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর কাছে অর্ডার হারাতে পারে, যাদের ওপর বর্তমানে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ রয়েছে।

সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক কনসালটেন্সি ‘এশিয়া ডিকোডেড’-এর প্রিয়াঙ্কা কিশোর বিবিসিকে বলছেন, টেক্সটাইল ও জুয়েলারির (রতœ ও স্বর্ণালঙ্কার) মতো যে সব রফতানি পণ্য খুব ‘শ্রম-নিবিড়’ (লেবার ইনটেনসিভ), দেশের অভ্যন্তরে সেই শিল্পগুলোতে আমেরিকার শুল্কের প্রভাব পড়বে মারাত্মক। তামিলনাডুর তিরুপুরে তৈরি পোশাক কারখানায়, কিংবা গুজরাটের সুরাটে হীরের গয়না বা স্বর্ণালঙ্কারের কারখানায় বহু শ্রমিক হয়তো কাজ হারাবেন, অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানই মুখ থুবড়ে পড়বে। কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির রাকেশ মেহরাও স্বীকার করছেন, মার্কিন বাজারে ভারতীয় টেক্সটাইলের যে ‘কম্পিটিটিভনেস’ ছিল, সেটাই এবার অন্য প্রতিযোগী দেশগুলোর কাছে তারা খোয়াতে বসেছেন! সূত্র : বিবিসি।