
ভারতের কেরালার মেয়ে নিমিশা প্রিয়া। স্বপ্ন ছিল, বিদেশে গিয়ে উপার্জন করে মায়ের মুখে হাসি ফোটাবেন। মাকে আর গৃহকর্মীর কাজ করতে হবে না। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে ২০০৮ সালে পাড়ি জমান ইয়েমেনে। সেখানে নার্সিং পেশায় যোগ দিয়ে একাধিক হাসপাতালে কাজ করার পর ছোট একটি ক্লিনিক খোলেন তিনি।
স্বপ্নবাজ নিমিশা আজ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। ১৬ জুলাই তাঁর জীবনের শেষদিন হতে পারে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালে স্থানীয় নাগরিক তালাল আবদো মাহদির সঙ্গে যৌথভাবে ক্লিনিকের ব্যবসা শুরু করেন নিমিশা। কারণ, ইয়েমেনে বিদেশিদের একা ব্যবসা করার অনুমতি নেই। কিন্তু ধীরে ধীরে তাঁদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক তিক্ততায় রূপ নেয়।
মাহদির বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে মামলা করেন নিমিশা। তাঁকে তখনই গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু পরে তিনি ছাড়া পান এবং নিমিশাকে হুমকি দিতে শুরু করেন।
নিমিশার পরিবারের দাবি, মাহদির কাছে নিজের আটকে থাকা পাসপোর্ট উদ্ধার করতেই একদিন তাঁকে ঘুমের ওষুধ দেন নিমিশা। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত ডোজে তাঁর মৃত্যু ঘটে। ইয়েমেন ছাড়ার চেষ্টা করতেই গ্রেপ্তার হন নিমিশা। ২০১৮ সালে মাহদিকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড হয় তাঁর। ২০২৩ সালের নভেম্বরে ইয়েমেনের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল সেই রায় বহাল রাখে।
ইয়েমেনের আইনে একটি বিশেষ বিধান রয়েছে। নিহত ব্যক্তির পরিবারের অনুমতি থাকলে ‘ব্লাড মানি’ বা ক্ষতিপূরণ দিয়ে মৃত্যুদণ্ড এড়ানো সম্ভব। কিন্তু সেই অর্থের পরিমাণ ঠিক করে নিহত ব্যক্তির পরিবারই।
নিমিশার মা কেরালার কোচি শহরে গৃহকর্মীর কাজ করেন। বাড়ি বিক্রি করে ইয়েমেনে মেয়ের মামলা চালান তিনি। তাঁর আর কোনো সম্বল নেই, যা দিয়ে মেয়েকে মুক্ত করতে পারবেন।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আইনজীবী আব্দুল্লাহ আমিরকে নিয়োগ দেয়। কিন্তু আলোচনায় বাধা পড়ে, কারণ, শুরুতেই তিনি ২০ হাজার ডলার ফি দাবি করে বসেন।
পরে পুরো ফি ৪০ হাজার ডলারে পৌঁছায়, যার প্রথম কিস্তি সংগ্রহ করা হয় অনলাইনে ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে। তবে এই তহবিল সংগ্রহ ও ব্যবহারের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
এ বছরের শুরুতে ভারত সরকার জানায়, নিমিশার বিষয়টি তারা পর্যবেক্ষণ করছে এবং পরিবারকে সর্বোচ্চ সহায়তা দিচ্ছে। তবে দণ্ডপ্রাপ্তের মায়ের শঙ্কা, পর্যবেক্ষণ করতে করতেই না জানি সময় ফুরিয়ে যায়!
নিমিশার মা বলেন, ‘আমি ভারত সরকার, কেরালা সরকার এবং যারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাই। কিন্তু এটাই আমার শেষ অনুরোধ। দয়া করে আমার মেয়েকে বাঁচাতে সাহায্য করুন। সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে।’