Image description

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট পদে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার আর কোনো আগ্রহ নেই তাঁর। আজ বৃহস্পতিবার হাঙ্গেরি সফর শেষে দেশে ফেরার পথে বিমানেই সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই কথা বলেন। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদুলু তাঁর এই মন্তব্য প্রকাশ করেছে।

৭১ বছর বয়সী এই নেতা বর্তমানে তুরস্কের সংবিধান পরিবর্তনের জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন সংবিধান নিজের জন্য নয়, দেশের জন্য চাই। এটি যেন সামরিক শাসনের সময়কার নয়, বরং একটি বেসামরিক সংবিধান হয়।’ তুরস্কের বর্তমান সংবিধানটি ১৯৮০ সালের এক সামরিক অভ্যুত্থানের পর গৃহীত হয়েছিল।

২০০৩ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী ও পরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় থাকা এরদোয়ান আরও বলেন, ‘চলুন কমিশন গঠন করি, দ্রুত বেসামরিক সংবিধান তৈরি করি এবং তা জাতির সামনে উপস্থাপন করি।’

এরদোয়ানের দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি) গত দুই দশকে অর্থনীতি ও অবকাঠামোর উন্নয়নে বড় ভূমিকা রেখেছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তুর্কি অর্থনীতি সংকটে পড়েছে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় জনজীবনে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে এবং সরকারের জনপ্রিয়তাও কমেছে।

তুরস্কে আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ২০২৮ সালে। তবে প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপল’স পার্টি আগাম নির্বাচনের দাবি তুলেছে। যদিও তাঁদের মূল প্রার্থী বর্তমানে দুর্নীতির অভিযোগে আটক রয়েছেন।

সংবিধান পরিবর্তনের মাধ্যমে এরদোয়ান আবার নির্বাচন করার পথ তৈরি করতে পারেন—এমন আশঙ্কা বহুদিন ধরেই বিরোধীরা প্রকাশ করে আসছে। কারণ ২০১৮ সালে চালু হওয়া দেশটির প্রেসিডেনশিয়াল ব্যবস্থায় কোনো প্রেসিডেন্ট সর্বোচ্চ দুটি মেয়াদে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। তৃতীয়বার নির্বাচন করতে চাইলে সেই বিধান বাতিল করতে হবে। কিন্তু বিধানটি বাতিল করার জন্য সংসদে যে পরিমাণ ভোটের প্রয়োজন, এরদোয়ানের জোটের বর্তমান এমপির সংখ্যা এর চেয়ে কম রয়েছে।

এদিকে সংবিধান পরিবর্তনের মাধ্যমে কুর্দি জনগোষ্ঠীর অধিকারের প্রসার ঘটবে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত। কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে) অস্ত্র ত্যাগ করার শর্ত হিসেবে রাজনৈতিক স্বীকৃতি চায়। তবে দেশজুড়ে এই দাবির প্রবল বিরোধিতা রয়েছে।

আমিরাত-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনালকে এরদোয়ানের ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেছেন, ‘তিনি (এরদোয়ান) হয়তো আর বহু বছর নেতৃত্ব দিতে চান না। কিন্তু তিনি একটি বেসামরিক, সন্ত্রাসমুক্ত তুরস্ক রেখে যেতে চান।’ তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, সংবিধান পরিবর্তনের মাধ্যমে এরদোয়ানের ক্ষমতায় থাকার পথ প্রশস্ত হতে পারে বলেই আশঙ্কা করছেন অনেকে।