Image description

বাংলাদেশী, ভারতীয় ও পশ্চিমা মিডিয়ায় এমনভাবে হাইপ তোলা হয়েছে যেন তুরস্কে কেয়ামত চলছে। এরদোয়ানের পতন হয়ে গেছে! আমাদেরকে আগামীকালই তার্কি থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে।


গত কয়েকদিন ধরে ইচ্ছা করেই এসব বিষয় নিয়ে কথা বলিনি। কারণ আমরা যারা তুরস্কে বসবাস করি, তারা ভালো করেই জানি, ইস্তানবুলের মেয়র ইকরেম ইমামওলুকে হঠাৎ করে গ্রেফতার করা হয়নি। এই গ্রেফতার সিএইচপির দলীয় কোন্দলের সুযোগ নিয়ে সুপরিকল্পিতভাবেই করা হয়েছে এবং যে আন্দোলন হচ্ছে, তাও এই পরিকল্পনারই অংশ মাত্র।


চলমান আন্দোলনের আজকের ঘোষিত কর্মসূচি এবং তা কীভাবে শেষ হচ্ছে, কেবলমাত্র এই বিষয়গুলোর দিকে নজর দিলেই সহজে অনুমেয় হবে। একটু পেছন থেকে বলি।
মূলত, তুরস্কের প্রধান বিরোধীদল সেক্যুলার কামালিস্টদের দল সিইএচপি প্রধান ওযগুর ওযেল-এর আগামী নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ আছে। তাই ইমামওলুর নিজ দলের কিছু বিদ্রোহী নেতা তার বিরুদ্ধে আনিত দুর্নীতির অভিযোগগুলো ফাঁস করেছে বলে গুঞ্জন রয়েছে (অভিযোগগুলো পরে বলছি)। এমনকি ইমামওলুকে গ্রেফতারে সিএইচপির একটি অংশ খুশিও হয়েছে, যদিও বড় অংশটি ইমামওগলুকে সমর্থন করেছে।


এই সুযোগটি কাজে লাগিয়েছে এরদোয়ান ও সরকারদলীয় জোট। যেহেতু ইমামওলু আগামীতে প্রেসিডেন্টপ্রার্থী হচ্ছে, তাই তাকে ঘায়েল করে তুলনামূলকভাবে কম শক্তিশালী প্রার্থীর মুখোমুখি হলে সহজে একেপির জয় ধরে রাখা যাবে। তাই সুবর্ণসুযোগটি সরকারদলীয় জোট লুফে নিয়েছে।
গুঞ্জন আছে, সিএইচপির প্রধান ওযগুর ওজেলেকে কনভিন্স করেই কথিত কঠোর আন্দোলন করিয়েছে। যে আন্দোলনকে এরদোয়ান আক্ষরিক অর্থেই কোনো পাত্তা দেয়নি। 
যে আন্দোলনের ফলাফল হচ্ছে, বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইমামওলু ইস্তানবুলের মেয়র পদ হারিয়েছে, এক বান্ডিল দুর্নীত ও অন্যান্য অভিযোগ নিয়ে লম্বা সময়ের জন্য জেলে বন্দী হয়েছে।


অভিযোগগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ইস্তানবুল সিটি কর্পোরেশনের টেন্ডারে অনিয়ম, ইমামওলুর ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও নিজ বলয়ের কোম্পানিগুলোকে নিয়মের বাইরে গিয়ে মিলিয়ন মিলিয়ন লিরা অতিরিক্ত প্রদান, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে অর্থ প্রদান, ব্যাচেলরের সার্টিফিকেট জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ। 
এবার আসুন, মিডিয়াতে যে আন্দোলনে এরদোয়ানের পতন হয়ে যাচ্ছে, সে আন্দোলনের পরিনতি কি হয়েছে দেখি। তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল সিএইচপি প্রধান ওযগুর ওযেল একটু আগে ঘোষণা দিয়েছেন:


১. ইস্তানবুলের মেয়র একরেম ইমামওলুকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে ইস্তানবুল সিটি কর্পোরেশন ভবনের সামনে গত ৬ দিন ধরে চলা বিক্ষোভ সমাবেশের আজ সমাপ্তি হবে।
২. আগামী কাল থেকে আর বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে না।


৩. আগামী কাল ইস্তানবুলের মেয়র পদে ইস্তানবুল মেয়রের ডেপুটিদের মধ্য থেকে (সিএইচপি) এর একজনকে ভারপ্রাপ্ত মেয়র নির্বাচন করা হবে। 
৪. প্রতিবাদস্বরূপ আগামী কাল থেকে ইস্তানবুলের বিভিন্ন এলাকায় ইফতার প্রোগ্রাম করবে সিএইচপি। প্রথমটি করবে একরেম ইমামওলুর এলাকা বেইলিকদুযু-তে। তারপর অন্যান্য এলাকায়। 


৫. ঈদের দিন ইস্তানবুল সিটি কর্পোরেশন ভবনের সামনে বিশাল এক ঈদ উৎসবের আয়োজন করা হবে। 
কি বুঝলেন? এগুলো হচ্ছে তুরস্কের সবচেয়ে বড় শহরের মেয়র ও দলের আগামী নির্বাচনে প্রেসিডেন্টপ্রার্থীকে গ্রেফতার ও এরদোয়ানের পতন ঘটানোর কর্মসূচি! ও হ্যাঁ, ঈদের পরে আর কোনো কর্মসূচি দেয়া হয়নি।
তাই যারা মিডিয়াকে বিশ্বাস করে আমাদেরকে বিভিন্নভাবে নক দিচ্ছিলেন যে, আমাদের কী হবে? এরদোয়ানের কী হবে? পতন হয়ে গেছে কিনা? তারা আশাকরি উত্তর পেয়েছেন।


একটি বিষয় এখানে ধারণা করা হচ্ছে, এই পুরো বিষয়গুলোকে এরদোয়ান একেবারে গুরুত্ব না দেয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে পুরো মেকানিজমের সাথে জড়িত ছিলো ইব্রাহিম কালিনের নেতৃত্বাধীন তুরস্কের গোয়েন্দা সংস্থা MIT.

সাইফুল ইসলাম, তুরস্ক