জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন-২০২৫ নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠিত না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সাম্প্রতিক ভূমিকম্প আতঙ্কে অবকাঠামোগত ঝুঁকি, ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ এবং শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস ত্যাগ নির্বাচনী প্রস্তুতিকে অনিশ্চয়তায় ফেলেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, ঘোষিত সময় অনুযায়ী ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনা থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নির্বাচন পেছানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি রাজধানীসহ আশপাশ এলাকায় একাধিক ভূমিকম্পে জবির শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আবাসন সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস-সংলগ্ন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোতে ফাটল ধরার খবর উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দেয়।
এ প্রেক্ষাপটে গত ২৩ নভেম্বর প্রাথমিকভাবে একদিনের জন্য ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করে জবি প্রশাসন। পরে বিভিন্ন প্যানেল ও শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত সব ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। পরিস্থিতি বিবেচনায় ৩০ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনলাইন ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্তও জানায় প্রশাসন। পাশাপাশি একমাত্র ছাত্রী হলে ফাটল দেখা দেওয়ার আশঙ্কায় ২৪ নভেম্বর সকাল ১০টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয়।
শিক্ষার্থীদের নিরাপদে বাড়ি ফেরাতে পরিবহন সুবিধার দাবিও ওঠে প্যানেলগুলোর পক্ষ থেকে। এতে সাড়া দিয়ে ২৪ নভেম্বর সকাল ৮টা থেকে বিভাগীয় শহরগুলোতে বিশেষ বাসের ব্যবস্থা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে জায়গা সংকটে অনেকে না যেতে পারায় ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ ও ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য’ শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা বাসের ব্যবস্থা করে।
এদিকে হঠাৎ ছুটি ঘোষণা ও শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস ত্যাগ আসন্ন শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয় স্বাভাবিক না হলে নির্বাচনী কার্যক্রম ব্যাহত হবে। ফলে নির্ধারিত সময়ের নির্বাচন পেছানোর আশঙ্কাই এখন প্রবল হয়ে উঠেছে।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসান বলেন, নির্বাচন পেছানোর এখনও অফিশিয়াল কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নি। আমাদের যে তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে, সেটা ছাড়া বিকল্প তারিখ নেই। তবে চলমান ছুটি নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করবে। তবে অভিযোগ জানানো, আপিল করাসহ অন্যান্য কাজ চলমান আছে। তবুও বিশ্ববিদ্যালয় খোলা না থাকলে নির্বাচনী কার্যক্রম চালানো কঠিন। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় খোলা না থাকলে তো নির্বাচনই হবে না।
যা বলছে প্যানেলগুলো
এদিকে নির্বাচন ঘিরে প্যানেলগুলোর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। কোনো প্যানেল চায় যথাসময়ে নির্বাচন হোক। কোনো প্যানেল চায় নির্বাচন পেছালেও যেন ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
জকসু নির্বাচনে সতন্ত্র ভিপি পদপ্রার্থী চন্দন কুমার দাস বলেন, এই ছুটি নির্বাচনের উপর প্রভাব ফেলবে। কারণ অনেক প্যানেল অনলাইনসহ জেলা কল্যাণেও প্রচারণা শুরু করেছে। কিন্তু আমরা সতন্ত্র প্রার্থীরা ১৬ হাজার শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানোর একমাত্র উপায় ক্যাম্পাস। কিন্তু প্রশাসনের দেওয়া সময়ে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব নয়। সেজন্য নির্বাচন পেছানো যুক্তিযুক্ত। তবে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।
ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী খাদিজাতুল কুবরা বলেন, আমাদের কাছে সবার আগে জবিয়ানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। নির্বাচন আগানো বা পেছানো নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে আমরা সাদরে গ্রহণ করবো।
ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য’ প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী আব্দুল আলিম আরিফ বলেন, নির্বাচনে খুব একটা প্রভাব ফেলবে না। কারণ সিডিউল অনুযায়ী ৯তারিখের আগে যে কাজ আছে তা প্রশাসনের কাজ, প্রার্থীদের না। প্রচারণা ৯ তারিখের পর।
ছাত্র শক্তি সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ জবিয়ান’ প্যানেলের এজিএস প্রার্থী শাহিন মিয়া বলেন, এই লম্বা ছুটি অবশ্যই নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে। কারণ আমাদের হল নেই, ক্যাম্পাসই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এনগেজমেন্টের একমাত্র সুযোগ। তবে ভুমিকম্পের আতঙ্কে শিক্সার্থীদের নিরাপত্তায় যদি নির্বাচন ১ সপ্তাহ পেছানো হয়, তাহলে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। তবে এর বেশি পেছালে সমস্যা। ডিসেম্বর মাসেই নির্বাচন সম্পন্ন হোক এটাই প্রত্যাশা।
বামজোটসহ ৯টি সংসগঠনের সমন্বয়ে ‘মওলানা ভাসানী বিগ্রেড’ প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী ইভান তাহসীব বলেন, অবশ্যই ভূমিকম্পজনিত এই ১৪ দিনের ছুটি জকসু নির্বাচনের ওপর অনেকখানিই প্রভাব ফেলবে। শিক্ষার্থীরা ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়েই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এমন সময়ে এই দুর্যোগের ঘটনা সেই প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটাবে। এদিকে প্রশাসন এমন লম্বা ছুটির পেছনে যথেষ্ট কারণ দর্শাতেও ব্যর্থ হয়েছে। আমরা দাবি করেছিলাম ক্যাম্পাসের সকল ভবনের ফিজিবিলিটি টেস্ট ও প্রয়োজনীয় উদ্ধার কার্যক্রমের প্রস্তুতি নিতে যে সময় লাগবে সেটা নিয়ে আবার একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করতে। তবে প্রশাসন তেমন কোনো বক্তব্য স্পষ্ট করেনি।