
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু), হল ও হোস্টেল সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। একদিন পর ভোট, প্রার্থী সমর্থককর্মী কারও দম ফেলার সময় নেই। সবাই ব্যস্ত শেষ সময়ের প্রচার নিয়ে। ক্যাম্পাসজুড়ে নানাভাবে চলছে প্রচার। হ্যান্ডবিল বিতরণ, প্রচারপত্র বিলি, গান, গম্ভীরা, নাটক এমনকি হলে হলে গিয়ে ভোট চাচ্ছেন। সবদিক মিলে ক্যাম্পাসজুড়ে জমে উঠেছে নির্বাচনি উৎসব। প্রার্থীর পাশাপাশি ব্যস্ত সাধারণ শিক্ষার্থীরাও। তাদের টেনশন ভোটের ফলাফল নিয়ে। নির্বাচনে কে হারে কে জিতে এটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে এক ধরনের উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রার্থীর পক্ষে কোথাও প্রচারে ঘাটতি আছে কি না তা খুঁজে বের করতে ব্যস্ত কর্মী সমর্থকরা। সব প্রার্থী ভোটার কাছে টানতে মরিয়া। আগামী ১৫ অক্টোবর ভোট। এর ২৪ ঘণ্টা আগে বন্ধ হবে আনুষ্ঠানিক প্রচার। এরপর শুরু হবে ভোট দেওয়া এবং ফলের জন্য অপেক্ষা। তবে চাকসু নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন ভোট গণনা হবে ওএমআর (অপটিক্যাল মার্ক রিডার) পদ্ধতিতে। এতে ফলের জন্য দীর্ঘ প্রতিক্ষার তেমন প্রয়োজন হবে না।
সরেজমিন দেখা গেছে, ভোটার আকৃষ্ট করতে কেউ বানিয়েছেন চায়ের কাপ, সংবাদপত্র, ডলার, টাকা, পুতুল, ফুল, মানচিত্র, রাইফেল, হাতুড়ি, হাতপাখা, কম্পিউটার কিংবা অণুবীক্ষণ যন্ত্রের আদলে প্রচারপত্র। আবার কেউ লিফলেটের সঙ্গে সংযুক্ত করছেন শাটল ট্রেনের সময়সূচি, জরুরি হটলাইন নাম্বার, বার্ষিক ছুটির তালিকা, রিকশা ও ই-কারের ভাড়ার তালিকাও। প্রার্থীরা সৃজনশীলতা ও অভিনবত্বের দৌড়ে একে অন্যকে ছাড়িয়ে যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। নির্বাচনি প্রচারণার এ রঙিন আমেজে ক্যাম্পাসজুড়ে বইছে উৎসবের হাওয়া।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রচারে ভিন্নমাত্রাযোগের ঘটনা পুরোনো। গত ৩৫ বছর আগে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও নানাভাবে প্রচার চালানো হয়েছিল। সেই সময়ের মতো এখনও চলছে কলা ভবন, বিজ্ঞানভবনসহ ফ্যাকাল্টি ভিত্তিক প্রচার। ঝুপড়ি ও ঝরনা ঘিরে নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন, চলে গান, প্যারোডি, নাটকসহ নানা অনুষ্ঠান। প্রচারে প্রাণসঞ্চার করে রেলস্টেশন, মামুর দোকানের আড্ডাগুলো। সকাল দুপুর এবং বিকালে শহরে বসবাসকারী শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে বিশ্ববিদ্যালয় রেলস্টেশন এলাকা। সেখানে চাকসুর প্রার্থীরা শিক্ষার্থীদের কাছে নানাভাবে ভোট প্রার্থনা করছেন। এরপর আছে কটেজ এলাকা। হলে সিট না পাওয়া শিক্ষার্থীদের বড় অংশ কটেজগুলোতে বাস করেন। কটেজ এলাকাতেও প্রচার চলছে। ছাত্র ও ছাত্রীদের হল ঘিরে চলে প্রচার চলে দিনে রাতে। প্রার্থীদের অনেকেই শহরে বসবাসকারী শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাচ্ছেন। চারুকলার শিক্ষার্থীদের আবাসস্থল হচ্ছে, শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেল। চট্টগ্রাম শহরে অবস্থিত এ হোস্টেলেও নির্বাচন হচ্ছে। সেখানেও চলছে প্রচার।
শেষ দিকের প্রচারে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর পাশাপাশি স্বতন্ত্রসহ মোট ১৩টি প্যানেলের প্রার্থীরা চষে বেড়াচ্ছেন পুরো ক্যাম্পাস ও শহরের বসবাসরত শিক্ষার্থীদের বাসা-বাড়ি। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন নির্বাচিত হলে সংকট সমাধানে হয়ে উঠবেন শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর।
জানতে চাইলে শহীদ আবদুর রব হলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী মো. রিফাতুল ইসলাম বলেন, ‘আমি দুই টাকার আদলে প্রচারণার কার্ড তৈরি করেছি। যেহেতু আমার ব্যালট নম্বর ২, তাই এই ধারণা আমার মাথায় আসে। ভিন্নভাবে কিছু করলে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়, সেই ভাবনা থেকেই এমনটি করেছি।’
শিবির সমর্থিত প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী ইব্রাহিম হোসেন রনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে আমরা ইশতেহার ঘোষণা করেছি। তাদের প্রয়োজন ও প্রত্যাশার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছি এবং সেই অনুযায়ী প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাব। আশা করি শিক্ষার্থীরা যোগ্য প্রার্থীকেই বেছে নেবেন।’
ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী মো. শাফায়েত হোসেন বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। তাদের মৌলিক অধিকার রক্ষায় কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। বিশ্বাস করি, শিক্ষার্থীরা আমাদের সে সুযোগ দেবেন।’
বহিরাগত প্রবেশে কঠোরতা : চাকসু, হল ও হোস্টেল সংসদ নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে নিজ নিজ পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড/ব্যাংক রশিদ) সার্বক্ষণিক সঙ্গে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আসন্ন চাকসু নির্বাচন সামনে রেখে ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে প্রশাসন। এ লক্ষ্যে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিজ নিজ পরিচয়পত্র সার্বক্ষণিক সঙ্গে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সন্দেহজনক মনে হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে কাউকে তল্লাশি করতে পারবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
ওএমআর মেশিনে ভোট গণনা : চাকসু, হল ও হোস্টেল সংসদ নির্বাচনের ভোট হবে ব্যালট পেপারে। গণনা হবে ওএমআর (অপটিক্যাল মার্ক রিডার) পদ্ধতিতে। এ পদ্ধতিতে ভোটারদের বৃত্ত পূরণ করে ভোট দিতে হবে। ভোটারদের পর্যাপ্ত সময় নিয়ে ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকবে।
চাকসু নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, আমাদের ভোট হবে ব্যালটে। ভোটগ্রহণ শেষে গণনা হবে ওএমআর পদ্ধতিতে। অ্যানালগ পদ্ধতিতে গণনা করলে অনেক সময় লাগবে। তাই আমরা এ পদ্ধতিতে যাব না। তিনি বলেন, একজন ভোটারের ৪০টি ভোট দিতে আনুমানিক ১০ মিনিট সময় লাগতে পারে। তবে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। ভোটাররা যত সময় প্রয়োজন মনে করবেন, তত সময় নিয়ে ভোট দিতে পারবেন।
কোন কেন্দ্রে কত ভোটার : প্রকৌশল অনুষদে ভোট দেবেন ৪০৩৬ জন। তারা সোহরাওয়ার্দী হলের শিক্ষার্থী। কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের নতুন ভবন শহীদ হৃদয় চন্দ্র তরুয়া ভবনে ভোট দেবেন ৫২৬৩ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে শাহজালাল হলের ২৬৬৬ জন, এএফ রহমান হলের ১৩০৭ ও আলাওল হলের ১২৯০ জন ভোটার রয়েছেন। বিজ্ঞান অনুষদ ভবনে ভোট দেবেন ৪৫৩৮ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে শাহ আমানত হলের ২২৪৭ জন, শহীদ আবদুর রব হলের ১৭৭৫ ও মাস্টারদা সূর্য সেন হলের ৫১৬ জন। সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভবনে ভোট দেবেন ৬৬০৬ শিক্ষার্থী। যার মধ্যে নবাব ফয়জুন্নেছা হলের ১১৭৯ জন, শামসুন নাহার হলের ২২৯১, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হলের ২৪৮৭ ও অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান হলের ৬৪৯ জন। ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবনে ভোট দেবেন মোট ৭০৭৩ শিক্ষার্থী। যার মধ্যে প্রীতিলতা হলের ২৫৫৫ জন, বিজয় ২৪ হলের ২৬০৪, শহীদ ফরহাদ হোসেন হলের ১৭৬০ ও শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলের ১৫৪ জন।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ : জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে ছাত্রশিবিরের সহ-সাহিত্য সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক পদপ্রার্থী
জিহাদ হোসাইন। রোববার চাকসু, হল ও হোস্টেল সংসদ নির্বাচনের প্রধান কমিশনার বরাবর এই অভিযোগ করা হয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়, ১০ অক্টোবর শুক্রবার, খুলনা বিভাগীয় অ্যাসোসিয়েশনের চড়ুইভাতি অনুষ্ঠানে ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের জিএস প্রার্থী মো. শাফায়াত হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক প্রার্থী শাহরিয়ার লিমন এবং নির্বাহী সদস্য প্রার্থী ফয়সাল প্রান্ত বাবর এ আয়োজনে মাইক ব্যবহারের মাধ্যমে আচরণ বিধির ৬ এর ‘ক’ ধারা লঙ্ঘন করেন। যা স্পষ্টত নির্বাচনি আচরণ বিধির লঙ্ঘন।
ভোটের লড়াইয়ে নয় প্যানেল
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন কেন্দ্র করে জমে উঠেছে প্রচার-প্রচারণা। ভোটের লড়াইয়ে নেমেছে ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ আটটি প্যানেল। এছাড়া বিভিন্ন পদে রয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রার্থী। ভোটারদের কাছে টানতে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন প্রার্থীরা। ইতোমধ্যেই ইশতেহার ঘোষণা করছে প্যানেলগুলো। সেখানে স্থান পেয়েছে নানা সংকটের সমাধান। তবে সেগুলো বাস্তবায়নের এখতিয়ার রাকসুর হাতে আছে কী না-তা নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাদের আকর্ষণ করতেই ‘মুখরোচক’ প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে। তবে প্রার্থীরা বলছেন, শিক্ষার্থীরা পাশে থাকলে বাস্তবায়ন সম্ভব।
দীর্ঘ ৩৫ বছর পরে আগামী ১৬ অক্টোবর রাকসু, হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন হচ্ছে। রাকসুর ২৩টি পদের বিপরীতে ২৪৭ জন এবং সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ৫টি পদে ৫৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে রয়েছেন ১৮ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে (জিএস) ১৩ এবং সহকারী সাধারণ সম্পাদক পদে ১৬ জন।
যে নয়টি প্যানেল ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে যাচ্ছে, সেগুলো হলো-ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম, ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’, ছাত্র অধিকার পরিষদ ও ছাত্র ফেডারেশনের নেতৃত্বে গঠিত ‘রাকসু ফর র্যাডিক্যাল চেঞ্জ’, সাবেক সমন্বয়কদের নেতৃত্বে ‘আধিপত্যবাদ বিরোধী ঐক্য’, বাম জোটের ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’, ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ) ঘোষিত ‘অপরাজেয় ৭১, অপ্রতিরোধ্য ২৪’, সাবেক আরেক নারী সমন্বয়কের নেতৃত্বে ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন মনোনীত ‘সচেতন শিক্ষার্থী পরিষদ’।
কার ইশতেহারে কী আছে : প্যানেলগুলোর ইশতেহারে যেসব অভিন্ন বিষয় স্থান পেয়েছে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-আবাসন সংকট নিরসন এবং পূর্ণাঙ্গ আবাসিক করার রোডম্যাপ প্রণয়ন, মেডিকেল সেন্টারের আধুনিকায়ন, গ্রন্থাগারের আধুনিকায়ন এবং উন্নয়ন, আবাসিক হলে খাবারের মান নিশ্চিতকরণ ও ভর্তুকি, ক্যাম্পাস নিরাপত্তা এবং সহিংসতা প্রতিরোধ, নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, শিক্ষা এবং গবেষণার উন্নয়ন, প্রশাসনিক কার্যক্রমের ডিজিটালাইজেশন, রাকসু নির্বাচনকে একাডেমিক ক্যালেন্ডারে অন্তর্ভুক্ত, অন-ক্যাম্পাস জব সৃষ্টি এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও ভিন্ন ধর্মের শিক্ষার্থীদের অধিকার নিশ্চিত করা।
এ ছাড়াও প্রতিটি প্যানেলের পৃথক কিছু প্রতিশ্রুতি আছে, যা উল্লেখ করার মতো। ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল চায় শামসুজ্জোহা দিবসকে জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণা, ক্যাম্পাসে স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা, ২৪ ঘণ্টা অন-ক্যাম্পাস ফার্মেসি স্থাপন, নারী হলে ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন, রাবি রেলস্টেশন সচল ও ডিসকাউন্ট টিকিট সেবা প্রদান, শিক্ষা বাণিজ্যিকীকরণ রোধে ইউজিসির কৌশলপত্র বাতিল, উপস্থিতির হারের নম্বর প্রথা বাতিল, হলে ক্যানটিনের পাশাপাশি প্রশাসনিক তত্ত্বাবধানে ডাইনিং চালু, জাতিসত্তার অধিকার নিশ্চিতকরণ ও প্রকাশনা সংস্থা সচল করা। আর ছাত্রশিবির প্যানেল জুলাই হামলাকারীদের বিচার, জাদুঘর স্থাপন, ১৬ জুলাইকে সন্ত্রাস প্রতিরোধ দিবস করা, শিক্ষক বিনিময়ে এমওইউ প্রথা চালু, তথ্যসেবা অ্যাপ এবং দক্ষতা উন্নয়ন কোর্স চালু, সাহিত্য ও প্রকাশনা সুবিধা নিশ্চিত ও দলীয় শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এছাড়া ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল ১০ বছর মেয়াদি একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান, রিসার্চ অ্যান্ড ইম্প্যাক্ট দপ্তর সৃষ্টি ও স্বচ্ছ রিপোর্ট প্রকাশ, এক ট্যাপে পরিশোধ সমাধান, অ্যালামনাই নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, সিনেট দিয়ে উপাচার্য নিয়োগ, ফুড অ্যান্ড পাবলিক হেলথ মনিটরিং গ্রুপ, ইনস্টিটিউশনাল মেইল ব্যবস্থা, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চাপ সৃষ্টি করতে চায়। আর ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেল খাতা মূল্যায়ন রোলবিহীন এবং চ্যালেঞ্জ সুযোগ দিতে চায়। ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ১৯৪৭, ১৯৭১, ২০২৪ চেতনায় উপযোগী নেতৃত্ব গড়ে তোলা, কালচারাল হেজিমনি ও হিজাবফোবিয়া রোধ, রাবি হেল্প ডেস্ক চালু, জব ফেয়ার, ওয়ান স্টপ ক্যারিয়ার সেন্টার, ইন্টার্নশিপ, স্কিল ট্রেনিংয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তাদের ইশতেহারে। ‘রাকসু ফর রেডিক্যাল চেঞ্জ’ প্যানেল অ্যাকাডেমিক রুটিন ঘোষণা, শিক্ষক নিয়োগে ডেমো ক্লাস ও প্রবেশন পিরিয়ড, শিক্ষক জবাবদিহিতায় অডিট টিম, ডিপার্টমেন্ট সভায় ছাত্র প্রতিনিধি করতে বাধ্য করাতে চায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।
একাধিক প্যানেলের নেতৃত্বস্থানীয় প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছে যুগান্তরের এই প্রতিনিধি। তারা বলছেন, রাকসু তার গঠনতন্ত্রের বাইরেও চাপ সৃষ্টি করার মতো সক্ষমতা রাখে। ফলে শিক্ষার্থীরা সঙ্গে থাকলে এ ইশতেহার বাস্তবায়ন সম্ভব।
ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী নূর উদ্দিন আবির বলেন, ‘আমরা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করতে প্রস্তুত। আমাদের যে ইশতেহারগুলো রয়েছে, সেগুলো বাস্তবসম্মত এবং শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় আমরা এগুলো পূরণ করতে সক্ষম হব। আমরা বিশ্বাস করি, শিক্ষার্থীদের পাশে থাকলে আমাদের সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবে রূপ দিতে পারব।’ গত শনিবার এক অনুষ্ঠানে ছাত্রশিবির মনোনীত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, ‘আমাদের ইশতেহারে যা দেওয়া হয়েছে তা বাস্তবায়নে আমাদের ৬-৭ মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়। আমরা এক বছরে আমাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করব।’
শিক্ষার্থীদের বক্তব্য : রাকসু নির্বাচনের ইশতেহার নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বর্ষের অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তারা প্রায় অভিন্ন সুরে বলেন, শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতেই এমন মুখরোচক ইশতেহার দিয়েছে অনেকে। হয়তো তারা শিক্ষার্থীদের প্রলুব্ধ করার জন্য এরকম ইশতেহার সামনে এনেছেন। কারণ তাদের কার্যপরিধির মধ্যে এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের এখতিয়ার নেই।
রাকসুর কার্যপরিধি : প্যানেলগুলোর এমন ইশতেহার দেখে প্রশ্ন উঠেছে এক বছর মেয়াদি ছাত্র সংসদের কার্যপরিধি কতটুকু এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া কী হবে। রাকসুর প্রথম গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করা হয়েছিল ১৯৬২ সালে। গত বছর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে এ গঠনতন্ত্রে কিছু সংশোধনী আনা হয়। বিদ্যমান গঠনতন্ত্রে রাকসুর সুনির্দিষ্ট কাজের কথা বলা হয়েছে। কাজগুলো হলো-বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের অনুষ্ঠান আয়োজন; বছরে অন্তত একবার সাময়িকী প্রকাশ করা; মানবহিতৈষী ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়া; বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা ও বক্তৃতার আয়োজন করা; প্রতি বছর অন্তত একবার সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা; আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতা এবং পরিবেশগত সম্মেলনে প্রতিনিধিদের পাঠানো। একই উদ্দেশ্যে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো; ভিপির অনুমোদনে সহপাঠ্যক্রমিক ও পাঠক্রমবহির্ভূত কার্যক্রমের আয়োজন করা।
উপাচার্য যা বললেন : রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে পোলিং এজেন্টদের সঙ্গে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, আমরা খুবই আশাবাদী এবং নির্বাচনি পরিবেশও অত্যন্ত সুন্দর। ভালো লাগছে এটা দেখে যে, প্রতিদ্বন্দ্বিতার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেই প্রচারণা চালাচ্ছে। টুকটুাক যে দুই একটি ব্যত্যয় ঘটছে না তা নয়, তবে বড় কোনো ঘটনা এখনো ঘটেনি। সিন্ডিকেট থেকে যে নির্বাচন কমিশন করে দেওয়া হয়েছে সেটা অত্যন্ত শক্তিশালী, তারা এখনো পর্যন্ত ধৈর্য রেখে কাজ করছেন। এটা যারা উপলব্ধি করতে পারছেন না তারা শিগগিরই বুঝতে পারবেন। নির্বাচন কমিশন নানারকম অপপ্রচার, খারাপ কথা হজম করেছেন শুধু শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে।
তিনি আরও বলেন, আচরণবিধির বিষয়টি সবার খেয়াল রাখা উচিত। এখানে সবাই সচেতন নাগরিক, সুতরাং বারবার এই কথাটি বলতেও খারাপ লাগে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে রাকসু প্রয়োজন কোথায় সেটা আমাদের বুঝতে হবে। আগে শিক্ষার্থীদের নেতাদের গুনে চলতে হতো কিন্তু রাকসু হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের আর নেতাদের গুনে চলতে হবে না।
যে কারণে পেছানো হয় নির্বাচন : একাধিকবার রাকসু নির্বাচনের তফশিল পুনর্বিন্যাস করে সর্বশেষ গেল মাসের ২৫ সেপ্টেম্বর ভোটগ্রহণের দিন ঠিক করা হয়েছিল। তবে ওই সময় পোষ্যকোটা পুনর্বহাল ও শিক্ষক লাঞ্ছনার অভিযোগ তুলে ধারাবাহিক কর্মবিরতি পালন শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে ক্লাস পরীক্ষা-বন্ধ হয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। এদিকে ওই মাসের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজার ছুটি শুরু হওয়ার কথা ছিল। ফলে অনেক শিক্ষার্থী ক্লাস পরীক্ষা না হওয়ায় এবং দুর্গাপূজার ছুটি সামনে রেখে বেশকিছু শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে দেখা যায়। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা ও ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীশূন্যতার অভিযোগ তুলে ছাত্রদলসহ বেশ কয়েকটি প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচন পেছানোর দাবি জানায়। পরে নির্বাচন কমিশন এক জরুরি সভায় বসে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নির্বাচন পেছানোর সিদ্ধান্ত নেয়।