Image description

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে চলছে জোর প্রস্তুতি। প্রকাশিত হয়েছে প্রার্থী তালিকা। এর মধ্যে ভিপি (সহ-সভাপতি) পদে হেভিওয়েট সাত প্রার্থীই মাদ্রাসা থেকে আসা শিক্ষার্থী। তারা হলেন- ছাত্রদলের প্যানেলের আবিদুল ইসলাম খান, ছাত্রশিবিরের প্যানেলের সাদিক কায়েম, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের, স্বতন্ত্র প্যানেল ‘ডিউ ফার্স্ট’ এর মো. জামাল উদ্দীন খালিদ, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আবদুল ওয়াহেদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত।

এর মাঝে আলোচনার তুঙ্গে আছেন আবিদুল ইসলাম খান ও সাদিক কায়েম। মূলত ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের মধ্যেই হতে চলেছে ডাকসু নির্বাচনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। আবিদুল ইসলাম তামীরুল মিল্লাত টঙ্গী শাখা থেকে দাখিল সম্পন্ন করেছেন। সাদিক কায়েম বায়তুশ শরফ চট্টগ্রাম থেকে আলিম ও বায়তুশ শরফ খাগড়াছড়ি থেকে দাখিল সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি ভর্তি হন ঢাবি’র রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। 

এ বিষয়ে আবিদুল ইসলাম বলেন, আমরা যে জেনারেশনে বড় হয়েছি মাদ্রাসা শিক্ষা প্রায় একই ছিল। শুধু আমাদের চার থেকে পাঁচটা বিষয় বেশি পড়ানো হতো। এটাতে আলাদাভাবে দেখার কিছু নেই। আমি বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। 

এ বিষয়ে সাদিক কায়েম বলেন, এটা তো খুব স্বাভাবিক তাই না? এখানে তো আসলে পরিচয় ভিত্তিতে আসার কথা ছিল না কারও। কিন্তু এতদিন পরিচয়টা খুব বড় একটা ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছিল। জুলাইয়ের পর সেটার বিলোপ সাধন হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরে যে আদারিং করার রাজনীতি একঘরে করে দেয়ার রাজনীতি স্রেফ পরিচয়ের  ভিত্তিতে, সেটি বিলুপ্ত হয়েছে। তার সবচাইতে বড় প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচনে এবং ভবিষ্যতে এভাবে আদারিং করার যে রাজনীতি, পরিচয় ভিত্তিতে একঘরে করে দেয়া যে রাজনীতি সেটা আর থাকবে না। ডাকসু’র এই প্ল্যাটফরমটা সবার; মাদ্রাসার যেমন স্কুলেরও তেমন কলেজেরও তেমন অন্যান্য শিক্ষিতদেরও ক্ষেত্রেও তাই।

এদিকে বাগছাস আহ্বায়ক ও ভিপি আব্দুল কাদের লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলার যাদৈয়া ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল সম্পন্ন করেন। এরপর ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। কাদের বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিগত ১৭ বছর মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদেরকে মার্জিনালাইজ করে রাখা হয়েছে এমনকি গেস্টরুমেও ছাত্রলীগের নির্যাতনের মুখে মাদ্রাসা পরিচয় থাকলে একটু বেশি নির্যাতিত হতে দেখা গেছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরে যে আমরা আসলে দেশের রাজনৈতিক কালচারে একটা পরিবর্তন আনতে পেরেছি তার প্রমাণ হচ্ছে নির্বাচনে আমাদের এই সাতজনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারা। 

বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ কেওচিয়া মুজহেরুল হক  ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে আলিম করেছেন। পড়েছেন আরবী বিভাগে। তিনি বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের পদচারণা সবসময় ঢাবিতে ছিল কিন্তু তাদেরকে দমিয়ে রাখা হয়েছিল বিভিন্নভাবে। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ঢাবিতে এসে কায়দা করে চলা লাগতো। ক্যাম্পাসে এসে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের অনেকেই পাঞ্জাবি পায়জামা পড়তো না এই ভয়ে যে তাদেরকে ক্ষমতাসীনরা খারাপ চোখে দেখবে। জঙ্গি বা শিবির ট্যাগ দিয়ে নির্যাতন করবে। অনেকেই ফজরের নামাজ জামায়াতে মসজিদে গিয়ে না পড়ে রুমে পড়তো। এই পরিস্থিতি স্বাধীনতার পর থেকে ২০২৪-এর জুলাই বিপ্লবের আগ পর্যন্ত ছিল, এমন অবস্থাও ছিল যে ক্যাম্পাসের হলগুলোতে ওয়াশরুমে ফজরের নামাজ আদায় করতে হতো। ’২৪-এর জুলাই বিপ্লব দেশবাসীসহ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদেরকে মুক্তি দিয়েছে।

ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত বলেন, একটা সময় মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে ভালো সাবজেক্ট দেয়া হতো না। পাঞ্জাবি টুপি নামাজ পড়া ছাত্রদেরকে বিভিন্ন ট্যাগিং করা হতো। সেখানে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ভিপি পদে দাঁড়ানো সেটা অবশ্যই আনন্দের, পাশাপাশি  আগামীর বাংলাদেশের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।

স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জামাল উদ্দীন খালিদ পড়েছেন আরবী বিভাগে। তিনি হিফজ শেষ করেছেন বাবার কাছে। আলিম পড়েছেন লতিফগঞ্জ ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর থেকে। দাওরায়ে হাদিস করেছেন জামিয়া ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদ, ঢাকা থেকে। বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা সুন্নাটেংরা দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল সম্পন্ন করেছেন। তিনি বলেন, আসলে শীর্ষ পদে যে আসলে অনেক বেশি মাদ্রাসা শিক্ষার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে এটা আসলে একটা আহামরি নতুন কিছু না। এর আগেও ছাত্রলীগের কমিটিতে ও ২০১৯ সালের ডাকসুতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছিলেন। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা বরাবরই ছিল। কিন্তু এখন পার্থক্য হলো যে আগে তারা ভয়ে থাকতো। কারণ যেহেতু একটা ভয়ের রাজনীতি ছিল তারা সেটা বলতো না। এখন সেটা বলছে অনেক বেশি করে। কেবল এতটুকুই পার্থক্য। সুতরাং যারা আসলে এটা বলতে চান তারা আমার মনে হয় একটা ভুল ন্যারেটিভ দাঁড় করার চেষ্টা করছেন।