Image description

জুলাই সনদের তিন ইস্যুতে ছাড় দিতে রাজি নয় বিএনপি ও সমমনা জোটের দলগুলো। তারা জানিয়েছেন, জুলাই সনদকে সংবিধানের উপরে স্থান দেয়া হয়েছে, এটা ঠিক হয়নি। এ ছাড়া, জুলাই সনদ নিয়ে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না বলে অঙ্গীকারনামায় যে কথা বলা হয়েছে সেটাতেও আপত্তি জানিয়েছেন তারা। পটভূমিতে ’৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ’৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান, ’৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন এবং সংগ্রাম স্থান না পাওয়ার বিষয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তাদের ভাষ্য, দ্বিমত এবং একমতের বিষয়গুলোও সনদে সঠিকভাবে উপস্থাপন হয়নি। শব্দ চরণ এবং বাক্য গঠনেও ত্রুটি দেখছেন তারা। ওদিকে, কোনো রাজনৈতিক ‘সমঝোতার দলিল’ সংবিধানের উপরে স্থান পেতে পারে কিনা- সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি। দলটির ভাষ্য, জুলাই সনদকে সংবিধানের উপরে জায়গা দেয়ার সুযোগ নেই। জুলাই সনদ নিয়ে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না বলে অঙ্গীকারনামায় যে কথা বলা হয়েছে সেটাও গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করছে দলটি। এ ছাড়া, সনদে অঙ্গীকারনামা নিয়েও আপত্তির কথা জানিয়েছে দলটি। তবে, এসব বিষয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছে বিএনপি ও সমমনারা। 

গত বুধবার জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়ায় কয়েকটি বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে লিখিত মতামত জমা দিয়েছে বিএনপি। এর আগে জুলাই সনদ নিয়ে গত সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপি’র সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। নেতারা বলেন, বিএনপি যেসব মৌলিক প্রস্তাবে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে, সেগুলোতে ছাড় দেবে না। বিএনপি এখানে তাদের আগের অবস্থানেই থাকতে চায়। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন ব্যক্তি একইসঙ্গে দলীয় প্রধানের পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন না, নিম্নকক্ষের নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের ১০০ জন সদস্য নির্বাচিত হবেন অন্যতম। 

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ প্রণীত হবে, স্বাক্ষরিত হবে এবং বাস্তবায়িত হবে। অঙ্গীকারনামায় যে প্রস্তাবগুলো রাখা হয়েছে, রাজনৈতিক সমঝোতার এই দলিলকে সংবিধানের উপরে রাখা এবং কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না? এসব বিষয়গুলো গ্রহণযোগ্য নয়।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আমরা চেষ্টা করছি কাছাকাছি আসার। আর নিজেদের মধ্যে আরও বোঝাপড়া বাড়াতে চাচ্ছি। 

অন্যদিকে, জুলাই সনদ নিয়ে গত মঙ্গলবার যুগপৎ আন্দোলনের দল জোটদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি। এদিন রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি ও বাংলাদেশ লেবার পার্টির সঙ্গে বৈঠক করে দলটি। সেখানে অভিন্ন কিংবা কাছাকাছি মতামত দেয়ার পরামর্শ দেয় বিএনপি। 
সূত্র  জানিয়েছে, বৈঠকে নেতারা বলেন- জুলাই সনদে অস্পষ্ট ও অস্বচ্ছতা রয়েছে। যেসব প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য গঠন হবে, সেসব এখন শুধু বাস্তবায়ন করা হবে। পরবর্তীতে জাতীয় সংসদে বাকি সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। 

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না মানবজমিনকে বলেন, বিএনপি বলেছে অঙ্গীকারনামায় জুলাই সনদকে সংবিধান ও আদালতের উপরে রাখা হয়েছে। এটা তারা আপত্তি করবে। আমরা বলেছি, এটা তো ঠিক হতে পারে না। আর জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতির যে প্রশ্ন তুলছে, আমরা মনে করি- আমরা যে মুখে মুখে অঙ্গীকার করছি এটাই যথেষ্ট।

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মিজানুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, জুলাই সনদকে সংবিধানের উপরে এবং আইনের ঊর্ধ্বে রাখার বিষয়ে আমাদের আপত্তি আছে। কারণ এটা রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল। কখনোই সংবিধানের উপরে স্থান পেতে পারে না।  

বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, বেশ কিছু ‘নোট অব ডিসেন্ট’ আসে নাই। অবজারভেশন ছিল- অপ্রচলিত শব্দ দিয়ে বাক্য গঠন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বেশ কঠিন করে ফেলেছে। সেগুলো প্রচলিত শব্দের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে বাক্য গঠন ঠিক হয়নি। নোট অব ডিসেন্টের ক্ষেত্রে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন খুব স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে। কিন্ত অনেক প্রস্তাবে যারা দ্বিমত হয়েছে, তাদের নাম কেন লিখলেন না? যারা একমত হয়েছে এবং যারা দ্বিমত হয়েছে- তাদের নাম জাতি জানুক। শুধুমাত্র নোট অব ডিসেন্টে বিএনপি, এলডিপি এবং ১২ দলীয় জোটসহ যুগপৎ আন্দোলনের দল ও জোটদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আমাদেরকে ১৬৬টি সুপারিশমালা দেয়া হয়েছিল। কমিশন সনদে ৮৪টি সুপারিশমালা লিখেছেন। এর মধ্যে ২০ থেকে ৩০টি কমিশনে আলোচনা হয়নি। তাহলে কিসের ভিত্তিতে আনা হয়েছে?