আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পাঁচ মাসের মাথায় সরকারি পর্যায়ে খাদ্যশস্যের মজুত কমেছে ৪০ শতাংশের বেশি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় গত ৭ আগস্ট দেশে মোট খাদ্যশস্যের মজুত ছিল ১৮ লাখ ৯ হাজার ৮৫৭ টন। গত ১৩ জানুয়ারি-২০২৫ পর্যন্ত এ মজুত কমে দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৩২ হাজার ৪৫৪ টনে। সে হিসাবে গত পাঁচ মাসে খাদ্যশস্যের মজুত কমেছে সাড়ে ৬ লাখ টনের বেশি। এদিকে রমজান শুরু হতে বাকি আছে আরও অন্তত ৪৪ দিন। আসন্ন রমজানে চাল, ডাল, তেল, ছোলা, খেজুর, চিনিসহ ১১টি নিত্যপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে মাসখানেক আগে বিশেষ কর্মসূচি নিয়েছে সরকার। এ কর্মসূূচির আওতায় ওই ১১টি পণ্য আমদানিতে দেওয়া হয়েছে শুল্ক-ছাড়। অবৈধভাবে কেউ মজুত করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এসবের কোনো ইতিবাচক প্রভাব এখনো বাজারে পড়েনি। বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন সম্প্রতি বলেছেন, ‘আসন্ন রমজানে বাজার স্বাভাবিক রাখতে আমরা আগাম প্রস্তুতি শুরু করেছি। আমাদের বাজারব্যবস্থায় পুরনো কিছু জঞ্জাল রয়েছে, সেগুলো রাতারাতি ঠিক করা সম্ভব নয়। সময়ের প্রয়োজন।’
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ও ঢাকার কারওয়ান বাজার এবং কাপ্তান বাজারের সূত্রগুলো বলছে, এসব খাদ্য আমদানি ও মজুত পরিস্থিতি আগের বছরের তুলনায় কম। একই সঙ্গে বাজারে সরকারের কোনো কার্যকর মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে রমজান শুরুর আগে সরকার সজাগ না হলে বাজারে নৈরাজ্য সৃষ্টি হতে পারে। একই সঙ্গে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে সরকারকে সতর্ক করেছে। পুরনো সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয় থাকায় রমজানে বাজারে নৈরাজ্য সৃষ্টি হতে পারে বলে আগেভাগেই সরকারকে জানিয়েছেন তারা।
এদিকে জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (এফএও) বলছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, প্রয়োজনের তুলনায় খাদ্য আমদানির ঘাটতি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দেশের ২ কোটি ৩৬ লাখ মানুষ তীব্র খাদ্যসংকটে ভুগছে। এ অবস্থা চলমান থাকলে আগামীতে তা আরও শোচনীয় হতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে সংস্থাটি। এরই মাঝে চলতি বছর বিশ্ববাজারে খাদ্য ও পানীয়সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড সাপ্লাই (সিআইপিএস)। সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে ট্যারিফ কমিশন বলছে, খেজুরের আমদানিও আগের বছরের তুলনায় কমেছে। চলতি অর্থবছরের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ৫,৮৮৩ টন খেজুর আমদানি হয়েছে। আগের বছরের এ সময়ে তা ছিল ৯,৬২৮ টন। এ ছাড়া মসুর ডাল, পাম অয়েল ও চিনি আমদানির জন্য গত নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে এলসি খোলা হয়েছে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কম। তবে ছোলা ও খেজুর আমদানির জন্য একই সময়ের তুলনায় বেশি এলসি খোলা হয়েছে। নভেম্বর ও ডিসেম্বরে খোলা এলসির পণ্য জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে দেশে পৌঁছাবে। অর্থাৎ রমজান শুরুর আগেই দেশে আসবে এসব পণ্য। সংস্থাটি বলছে, রোজায় ছোলা ও মসুর ডালের চাহিদা থাকে ১ লাখ টন করে। মসুর ডালের চাহিদা সৃষ্টি হয় হালিমসহ অন্যান্য ইফতার তৈরির উপকরণ হিসেবে। খেজুরের চাহিদা থাকে ৬০-৮০ হাজার টন। চিনি ও ভোজ্য তেলের চাহিদা থাকে ৩ লাখ টন। আর ৫ লাখ টন পিঁয়াজের চাহিদা সৃষ্টি হয় এ মাসে। যদিও বর্তমানে পিঁয়াজের দাম কম। চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে ৩.৮৪ লাখ টন। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১.০৯ লাখ টন বেশি। আর এ সময়ে পাম অয়েল আমদানি হয়েছে ৭.১১ লাখ টন, যা আগের বছরের তুলনায় ২.৬৪ লাখ টন কম। চিনি আমদানিও কমেছে। ওই সময়ে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত মিলিয়ে মোট ৬.৬৪ লাখ টন চিনি আমদানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২ লাখ টন কম। তবে চলতি অর্থবছরের ওই সময়ে দেশে মসুর ডাল ও ছোলা আমদানি বেড়েছে।