Image description

এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএর মতো দেশের প্রধান বাণিজ্য সংগঠনগুলোর নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এসব সংগঠনে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করে দায়িত্ব হস্তান্তরের নির্দেশনা দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কেবল প্রকৃত ব্যবসায়ীরা যাতে নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন তা নিশ্চিত করতে প্রশাসকরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগকে চিঠি দিয়ে বিধি সংশোধনের অনুরোধ করেছেন। প্রশাসকরা নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করতে পারেননি এবং কবে নাগাদ ভোট হবে সেটাও নিশ্চিত করে বলেননি।

গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এবং বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতিসহ (বিজিএমইএ) বাণিজ্য সংগঠনগুলোতে প্রশাসক নিয়োগ করে। নিয়োগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ছিল। নির্বাচনের ব্যবস্থা না করে এখন প্রশাসকরা বাণিজ্য সংস্থাগুলোর নির্বাচনি প্রক্রিয়া সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংশোধনী প্রস্তাবগুলো হলো- সভাপতি নির্বাচন সরাসরি ভোটের মাধ্যমে হওয়া উচিত, কোনো সভাপতি টানা দুই মেয়াদের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না এবং বাণিজ্য সংগঠনগুলোর পরিচালকের সংখ্যা কমানো উচিত। নতুন প্রশাসকরা আরও উল্লেখ করেছেন, বাণিজ্য সংগঠনের বর্তমান ভোটার তালিকায় অনেক কাল্পনিক নাম রয়েছে, কারণ অনেকের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে, কিছু ব্যবসায়ী কোম্পানির মালিক দেশ ছেড়ে চলে গেছেন এবং অন্যরা সম্পূর্ণভাবে ব্যবসা থেকে অবসর নিয়েছেন।

উদাহরণস্বরূপ বলেছেন, বিজিএমইএতে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ৩৭৫ জনের বেশি, যেখানে এই বাণিজ্য সংগঠনের অধীনে চালু থাকা পোশাক কারখানার বর্তমান সংখ্যা প্রায় ২ হাজার ১০০টি। বিজিএমইএ ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সদস্যদের নথি জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। যাতে তারা প্রকৃত ভোটার তালিকা তৈরিতে সহায়তা করতে পারেন প্রশাসক। বিজিএমইএর প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্য নিয়ে সবার সার্বিক সহযোগিতায় নির্বাচনের কাজ চলছে। নির্বাচনের বিধি সংশোধনের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। সেগুলো যাচাইবাছাই শেষে অনুমোদন করলেই নির্বাচনের কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনে যোগ্য ভোটার হিসেবে যোগ্যতা অর্জনের জন্য প্রকৃত ব্যবসায়ীদের তাদের ট্যাক্স রিটার্ন সার্টিফিকেট, আপডেট ট্রেড লাইসেন্স এবং আরও কিছু নথি জমা দিতে হবে।

৯০ দিনের সময়সীমার মধ্যে নির্বাচনের বিষয়ে হোসেন বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় সংশোধনী অনুমোদন করার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি নির্বাচনের তফসিল নিয়ে এগিয়ে যাবেন। গত বছরের ৯ মার্চ বিজিএমইএ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৪২৯ জন ভোটারের কর ফাইল না থাকায় ওই নির্বাচনের আগে ফোরাম প্যানেলের একজন প্যানেল নেতা নির্বাচন বোর্ডের কাছে প্রাথমিক ভোটার তালিকা বাতিল করে নতুন তালিকা প্রকাশের দাবি জানান। ২০২৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর এফবিসিসিআইর প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব হাফিজুর রহমান। নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুবিধার্থে তার মেয়াদ আরও ১২০ দিন বাড়ানো হয়েছে। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এফবিসিসিআইতে মোট ভোটার সংখ্যা এখন ২ হাজার ৭০০ হলেও প্রকৃত ভোটারের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার ৫০০ হতে পারে।

বিজিএমইএর মতো ভোটারদের যোগ্য ভোটার হওয়ার জন্য তাদের হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স এবং কর সার্টিফিকেট জমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব মো. আবদুর রহিম খান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাণিজ্য সংগঠনগুলোর নির্বাচনি বিধি সংশোধনের বিষয়ে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে একটি বৈঠক করা হবে। বৈঠকের পর অনুমোদনের জন্য উপদেষ্টা পরিষদের সভায় উত্থাপন করা হবে। এটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংশোধন করার পরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এফবিসিসিআই, বিজিএমএই ছাড়াও চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের কমিটি ভেঙে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার।