ভারত, চীন বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র- কাউকেই অসন্তুষ্ট করতে চায় না বাংলাদেশ। বরং সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে অন্তর্বর্তী সরকার বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। বুধবার অত্যাসন্ন চীন সফর বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ভারত, চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র- তিনটি দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অবশ্যই এখানে ভারসাম্য রক্ষা করবো। আমরা কাউকেই অসন্তুষ্ট করতে চাই না বরং আমাদের নিজেদের স্বার্থ সমুন্নত রাখতে সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। বাংলাদেশ সব সময় ভারসাম্যপূর্ণ একটি সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায় বলে দৃঢ়তার সঙ্গে জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। আগামী ২০শে জানুয়ারি পূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সফরে বেইজিং যাচ্ছেন তৌহিদ হোসেন। ওই দিন যুক্তরাষ্ট্রে পুনঃনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেক। তাছাড়া উপদেষ্টার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে চীন যাত্রাটি এমন এক সময় হচ্ছে যখন ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে চরম অস্বস্তিকর পর্যায়ে। বুধবারের সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব বিষয়ে উত্থাপিত বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন উপদেষ্টা। খোলাসা করেই তিনি বলেন, আমাদের সম্পর্কের ভিত্তি হবে ‘ভারসাম্যে’, প্রাধান্য পাবে দেশের স্বার্থ।
যুক্তরাষ্ট্রে সরকার পরিবর্তনে সম্পর্ক হোঁচট খাবে না: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকার পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে হোঁচট খাবে না বলে মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। চীন সফর নিয়ে বুধবার আলাপকালে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেকের দিন তথা আগামী ২০শে জানুয়ারি বেইজিং সফরে যাচ্ছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। এই দিনকে পছন্দ করার বিশেষ কোনো তাৎপর্য রয়েছে কিনা? এবং মার্কিন নতুন প্রশাসনের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের যোগাযোগ হচ্ছে কিনা? এমন একাধিক প্রশ্নে উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের জবাব ছিল ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বা এরকম বড় দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক সেটা কিন্তু সরকার স্পেসিফিক হয় না। নতুন সরকার এলে তাদের কিছু বক্তব্য থাকতে পারে, সেটা আমরা দেখবো। স্পেকুলেশন করার কিছু নাই। আমি কবে, কোন তারিখে বা কোন সময়ে চীন সফরে যাচ্ছি- সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়। সরকার পরিবর্তনে সম্পর্কে খুব একটা পরিবর্তন আসে না জানিয়ে পোড় খাওয়া ওই কূটনীতিক বলেন, আমরা মনে করি, এটা স্মুথলি চলবে। সম্পর্ক একটা বহমান ধারা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, এটাতে পারস্পরিক চাওয়া-পাওয়ার হিসাব থাকে। যা সব সময় একটু-আধটু পরিবর্তন হয়। এ রকম যখন হবে তখন আমরা সেই অনুযায়ী আমাদের পদক্ষেপ নেবো এবং আমরা নিতে পারবো বলে আমি মনে করি। প্রসঙ্গত, চীন সফর শেষে আগামী ২৪শে জানুয়ারি দেশে ফিরবেন তিনি।
সমস্যা আসবে, সমাধানও হবে: এদিকে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সংকট নতুন নয়। নতুন নতুন ঘটনা ঘটবে, সমস্যা আসবে, সমাধানও হবে। সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ ইস্যুতে মুখোমুখি প্রতিবেশী দুই দেশ। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আলোচনার ভিত্তিতে সীমান্ত সংকটসহ যেকোনো সমস্যার সমাধান হবে। ভারত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার বিষয়ে মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, এমন ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। প্রতিবার এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে কিছু জায়গায় ছাড় দেয়া যেতে পারে, কিন্তু তা অবশ্যই আলোচনার মাধ্যমে হতে হবে।
চীন সফরে গুরুত্ব পাবে বাজেট সহায়তা: চীন সফরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা হবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ভূরাজনীতি, বাণিজ্য ইস্যু নিয়েও কথা হবে। সফরে ঋণের সুদহার কমানোসহ পরিশোধের মেয়াদ ৩০ বছর করতে প্রস্তাব দেয়া হবে। অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনায় গুরুত্ব পাবে। বাজেট সহায়তার প্রস্তাব করা হবে। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কথা না হলেও নদী ব্যবস্থাপনা নিয়ে চীনের সঙ্গে শেষ হয়ে যাওয়া এমওইউ নবায়ন করা হবে। এ সফরেই এই সমঝোতা স্মারক সই হবে। এই সফরে চীন থেকে বাজেট সহায়তা পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, চীন সফরে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক অনেক বিষয়ে আলোচনা হবে। চীন থেকে বিভিন্ন সময় নেয়া সুদ কমানো ও মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে কথা বলবো। কোটা সুবিধা বজায় রাখার বিষয়ে আলাপ রাখবো। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রকল্পে সহায়তার বিষয়ে আলোচনা করবো। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের যে চুক্তি চীনের সঙ্গে হয়েছিল তা বহাল রাখার বিষয়ে আলোচনার কথাও জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তবে হ্যাঁ, কমিটমেন্ট ফি বাদ দিতে কথা বলবো।