Image description

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাময়িক বহিষ্কৃত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে দলে ফেরানোর পর নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। মেয়র পদ ফিরে পেতে গত বছরের ২১ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করেছিলেন জাহাঙ্গীর। রিটে তাকে সাময়িক বরখাস্তের আইনগত বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়। জাহাঙ্গীর আলম সেই রিট আবেদন তুলে ফেলবেন এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে মেয়রের চেয়ারে বসার অনুমতি দেওয়া হবে। 

রোববার জাহাঙ্গীর আলমের ঘনিষ্ঠ ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। গত শনিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বহিষ্কারের আদেশ প্রত্যাহার করে ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থি কার্যক্রম ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে ক্ষমা করে দেন কার্যনির্বাহী কমিটি। 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান ও সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মণ্ডলের কাছে। এই চিঠি পাওয়ার পর আওয়ামী লীগের সব অনুষ্ঠানে যোগদানে জাহাঙ্গীরের আর কোনো বাধা নেই।

এ বিষয়ে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। তবে গাজীপুরের আরেক বর্ষীয়ান নেতা ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপির সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি জানান, জাহাঙ্গীরের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না। 

তবে দলের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জাহাঙ্গীরকে বহিষ্কারের পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একাধিকবার দেখা করতে চেয়েছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি দেখা করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সরাসরি ক্ষমা চেয়েছেন। এরপর কার্যনির্বাহীর কাছে ক্ষমা চেয়ে চিঠি দেন। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে জাহাঙ্গীরকে ক্ষমা করে কার্যনির্বাহী কমিটি।

স্থানীয় সূত্র জানায়, জাহাঙ্গীর আলমকে দল ও মেয়র থেকে সরানোর পরও তিনি শক্ত অবস্থানে থেকে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৫ আগস্ট থেকে শুরু করে যত অনুষ্ঠানই হয়েছে সবগুলোতেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে আলাদা করে অনুষ্ঠান পালন করেছেন। এ ছাড়া সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠানেও যোগ দিয়েছেন। যেসব রাস্তাঘাটের কাজ অসমাপ্ত রয়েছে সেগুলোও দেখেছেন। এসব কারণে জাহাঙ্গীর আলমকে বহিষ্কার করা হলেও তার অবস্থান গাজীপুরবাসীর কাছে একটুও নড়বড়ে হয়নি। 

রোববার জাহাঙ্গীর আলম সময়ের আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌকা প্রতীকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদের জন্য অনুমতি দিয়েছেন। নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে নগরবাসীর উন্নয়নে কাজ শুরু করি। গত ১৪ মাস নগরবাসী উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। 

তিনি বলেন, আমি হাইকোর্টে যে আবেদন দিয়েছি সেটি তুলে ফেলব। এখন ইচ্ছা করলে হাইকোর্ট বা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে পারেন।

তিনি জানান, যত দ্রুত চেয়ারে বসবেন ততই নগরবাসী দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পাবেন। রাস্তাঘাটসহ এলাকার অনেক উন্নয়নমূলক কাজ আটকে রয়েছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা খুবই নাজুক। নগরের অনেক রাস্তাঘাট ভাঙা পড়ে রয়েছে। সামনে ঝড়-বৃষ্টির দিন আসছে, সেগুলো ঠিক না করা হলে আমার নগরবাসীর জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। 

স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, জাহাঙ্গীর আলমকে যখন দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয় এবং সিটি মেয়র থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয় তখনও নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। জাহাঙ্গীরের শুরু হয় ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়ে। একটি কুচক্রীমহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের নিয়ে কটাক্ষ করার ভিডিও ও অডিও কন্টেন্ট প্রকাশ করে গাজীপুরের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করেছে।

অন্যদিকে শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে জাহাঙ্গীর আলমের হাতে দলে ফেরানোর চিঠি দেওয়ার পর স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে উৎসব। গাজীপুর মহানগরের প্রত্যেক থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের উল্লাস করতে দেখা গেছে। রাতে ভিড় জমে গাজীপুর বাসনের নিজ বাস ভবনের সামনে। অনেকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। জাহাঙ্গীরপন্থিরা সরব হয়ে ওঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। তবে অনেকে জাহাঙ্গীর আলমের অনুসারী হয়েও প্রকাশ্যে আসতে চান না। কারণ জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে যারা রাজনীতি করেছেন তাদের অনেকেই পদ হারিয়েছেন। অনেকেই ‘রেড সিগন্যালে’ রয়েছেন।

গাজীপুর মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত ও ৫৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী মনিরুজ্জামান মনির সময়ের আলোকে বলেন, জাহাঙ্গীর আলমকে যেদিন দল থেকে বহিষ্কার করা হয়, তার পর দিন আমরা কয়েকজন তার বাসায় দেখা করতে যাই। এই অপরাধে একটি মহল সেই ছবি ও ভিডিও ভাইরাল করে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে দল থেকে বহিষ্কারের জন্য আবেদন করেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমাকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। 

তিনি বলেন, জাহাঙ্গীর আলম বা আমি কী বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতি করি? প্রধানমন্ত্রী জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের পদ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া পদের প্রতি সম্মান রেখেই তারা জাহাঙ্গীরের পাশে ছিলেন। জাহাঙ্গীর আলম যখন বিপদে পড়েছেন আর আমরা দেখতে গেলাম এটাই আমাদের অপরাধ। জাহাঙ্গীর আলম এবং আমাকে দল থেকে বাদ দিলেও আমরা মনেপ্রাণে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। 

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের নিয়ে কটাক্ষ করার অভিযোগে প্রথমে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয় জাহাঙ্গীর আলমকে। এরপর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকেও তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

তিনি ছাত্রলীগ গাজীপুর জেলা শাখার সহ-সভাপতি, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সহ-সম্পাদক ও ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সহ-সভাপতি ছিলেন। 

তিনি গাজীপুর সদর ও টঙ্গী উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৮ সালে জুলাইয়ে জাহাঙ্গীর আলম আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে ৪ লাখ ১০ ভোট পেয়েছিলেন এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী হাসান উদ্দিন সরকার ‘ধানের শীষের’ প্রতীক নিয়ে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬১১ ভোট পেয়েছিলেন।