Image description

জুলাই শহীদ ও আহতদের মধ্যে প্রথম ধাপে আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন ছয় হাজার ১৯৬ জন। এর মধ্যে রয়েছে ৭৫৯টি শহীদ পরিবার ও পাঁচ হাজার ৪৩৭ জন আহত ব্যক্তি। তহবিলসংকটে সহায়তা দেওয়া সম্ভব হয়নি ৭৫টি শহীদ পরিবার ও আহত আরো ছয় হাজার ৬০৬ জনকে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গেজেটভুক্ত জুলাই শহীদ পরিবারের সংখ্যা ৮৩৪টি এবং আহত ব্যক্তির সংখ্যা ১২ হাজার ৪৩ জন। সেই হিসাবে এখনো ৪৮.১১ শতাংশ পরিবার সরকারি অর্থ সহায়তা পায়নি। এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি দ্বিতীয় ধাপে সহায়তার দাবিতে জুলাই ফাউন্ডেশনের অফিস ভাঙচুর করেছে জুলাই আহতদের একটি দল।

তারা বলছে, ফাউন্ডেশনে কর্মরতদের ঘনিষ্ঠদের বেছে বেছে টাকা দেওয়া হচ্ছে। অন্যদের টাকা নেই জানিয়ে মাসের পর মাস ঘোরানো হচ্ছে।

এ বিষয়ে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আকবর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের তহবিলে যথেষ্ট টাকা নেই। যে টাকা রয়েছে, তাতে ৩০ থেকে ৪০ জনকে দেওয়া সম্ভব। এ জন্য যাঁরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত আর এখনো চিকিৎসাধীন, তাঁদের কয়েকজনকে টাকাটা দেওয়ার চেষ্টা করছি। এ নিয়েই মূলত আহতদের অভিযোগ।

জুলাই আহত নাজমুল হোসেন বলেন, ‘সাত মাস ধরে দ্বিতীয় ধাপের টাকার জন্য ঘুরছি। দেওয়া হচ্ছে না। অথচ ফাউন্ডেশনের লোকজনের সঙ্গে যাঁরা ঘনিষ্ঠ, তাঁদের টাকা দেওয়া হচ্ছে। এখানে আমার মামা-চাচা না থাকায় টাকা পাচ্ছি না।’

জুলাই ফাউন্ডেশন অফিসে ভাঙচুরের বিষয়ে জুলাই আহত মো. মামুন বলেন, ‘জুলাই ফাউন্ডেশনের একজন কর্মী আমাদের ধাক্কা দিয়ে সেখান থেকে বের করে দেওয়ার কথা বলেন। এ কারণে সবাই ক্ষুব্ধ হয়ে ফাউন্ডেশনের অফিসে ভাঙচুর করেছে।’

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক সামসি আরা জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নতুন কমিটি গঠনের পর গত দেড় মাসে কোনো ধাপের কাউকে টাকা দেওয়া শুরু হয়নি। তহবিল স্বল্পতায় গুরুতর অল্প কয়েকজনকে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।’

ভাঙচুরের ঘটনায় জুলাই ফাউন্ডেশনে কর্মরতরা আতঙ্কে আছেন বলে জানান সামসি আরা জামান। তিনি বলেন, ‘এর আগে একবার হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। তার পরও আমরা তাঁদের ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখছি। কিন্তু তাঁরা কিছুতেই পরিস্থিতি বুঝতে চাচ্ছেন না। তাঁদের চিকিৎসার দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের, জুলাই ফাউন্ডেশনের নয়।’

সহায়তায় প্রয়োজন ২৫০ কোটি টাকা

গত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত জুলাই শহীদ পরিবার ও আহতদের প্রথম ধাপে ১১০ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এখনো প্রয়োজন ২৫০ কোটি টাকা। জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আকবর এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রধান উপদেষ্টার তহবিল থেকে ১০০ কোটি টাকা পেয়েছিলাম। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাঁচ কোটি ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে এক জায়গা থেকে পাঁচ কোটি টাকাসহ অন্যান্য মিলিয়ে মোট ১১৮ কোটি টাকা পেয়েছি। এর মধ্যে শহীদ পরিবারকে পাঁচ লাখ করে টাকা দিয়েছি, ছয় হাজারের বেশি আহতদের বিভিন্ন ধাপে টাকাসহ এ পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে ১১০ কোটি টাকা। তববিলে থাকা অবশিষ্ট টাকা বাদ পড়া শহীদ পরিবারকে দিতে হবে।  এ ছাড়া আহতদের প্রথম ধাপ শেষ করতে আরো ২৭ কোটি টাকা দরকার। এর মধ্যে দ্বিতীয় ধাপের টাকা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না।’

সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত ব্যক্তির পরিবার এককালীন ৩০ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা পাবে। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হবে। আর ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাইয়ে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকা সহায়তা দেওয়া হবে। পাশাপাশি প্রতিটি শহীদ পরিবারকে প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে। শহীদ পরিবারের কর্মক্ষম সদস্যরা সরকারি ও আধা সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন।

জুলাই যোদ্ধারা সুবিধা পাবেন দুটি মেডিক্যাল ক্যাটাগরি অনুযায়ী। গুরুতর আহত ব্যক্তিদের ‘ক্যাটাগরি এ’ অনুযায়ী এককালীন পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) দুই লাখ টাকা দেওয়া হবে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) তিন লাখ টাকা দেওয়া হবে। পাশাপাশি গুরুতর আহত প্রত্যেক জুলাইযোদ্ধা মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে আজীবন চিকিৎসাসুবিধা পাবেন। মেডিক্যাল বোর্ডের সুপারিশে দেশি-বিদেশি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা পাবেন। তাঁরা কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনসুবিধা পাবেন।

‘ক্যাটাগরি বি’ অনুযায়ী, জুলাই যোদ্ধাদের এককালীন তিন লাখ টাকা দেওয়া হবে। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) এক লাখ টাকা দেওয়া হবে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) দুই লাখ টাকা দেওয়া হবে। পাশাপাশি মাসিক ১৫ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হবে। কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও অগ্রাধিকারভিত্তিতে সরকারি-আধা সরকারি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।

সর্বোচ্চটা দিয়ে তাঁদের চিকিৎসার চেষ্টা করেছি

প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জুলাই আহতদের শরীরে এখনো যে বুলেট রয়ে গেছে, সেগুলো সরানোর মতো অবস্থায় নেই। দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার সর্বোচ্চটা দিয়ে তাঁদের চিকিৎসার চেষ্টা করা হয়েছে। এগুলো বের করার উপায় পৃথিবীর কোথাও নেই। বেশির ভাগ চিকিৎসক মনে করেন, ওগুলো থেকে গেলে টিস্যুর যতটুকু ক্ষতি হবে, সেগুলো সরাতে গেলে তার চেয়ে অনেক বেশি টিস্যুর ক্ষতি হবে।’

জুলাই আন্দোলনে নিহত মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বলেন, ‘জুলাইয়ে শহীদ বা আহতদের পরিবারকে কর্মসংস্থান বা উদ্যোক্তা বা আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে পুনর্বাসন করা যায়। যতই আর্থিক সহায়তা করা হোক, তা দিয়ে পুনর্বাসন সম্ভব না। আমরা চেষ্টা করছি সরকারি-বেসরকারি চাকরির মাধ্যমে তাঁদের পুনর্বাসন করতে। কিন্তু একটা কমন সমস্যা হচ্ছে বেসরকারি চাকরি কেউ করতে চায় না। আহত বা শহীদ পরিবারের প্রত্যাশা থাকে, তারা সরকারি চাকরি করবে।’