Image description

বিয়ের আনন্দ মুহূর্তেই কাল হয়ে দেখা দিল নূর মুহাম্মদের জীবনে। বিয়ের মাত্র দুই দিন আগে মায়ের সঙ্গে দীর্ঘসময় ফোনে কথা বলেছিলেন তিনি। বাড়িতে তখন বিয়ের প্রস্তুতি চলছিল জোরেশোরে। কিন্তু নির্ধারিত দিনে বাড়ি ফিরে তিনি দেখলেন ভয়াবহ এক দৃশ্য—বন্যায় প্রাণ গেছে পরিবারের ২৩ জনসহ মোট ২৪ জনের। বিয়ের সাজ নয়, শেষ পর্যন্ত প্রিয়জনদের জানাজায়ই অংশ নিতে হলো নূর মুহাম্মদকে। শুক্রবার (২২ আগস্ট) জিও নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘটনাটি ঘটেছে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বুনের জেলায়।

নূর মুহাম্মদ মালয়েশিয়া প্রবাসী পাকিস্তানি নাগরিক। বিয়ে করার জন্য তিনি গত ১৫ আগস্ট পাকিস্তানে আসেন। দেশটিতে ভয়াবহ বন্যার সময় ওই বাড়িতে অবস্থান করা মুহাম্মদের পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের ২৮ সদস্যের মধ্যে ২৪ জনই প্রাণ হারান। বুনের জেলার কাদির নগর গ্রামে খালের তীরে অবস্থিত পরিবারের বিশাল ৩৬ কক্ষের বাড়ির ধ্বংসস্তূপের পাশে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নূর মোহাম্মদ। বলেন, ‘আমি বোঝাতে পারব না যে তিনি (তার মা) কতটা খুশি ছিলেন।’

জিও নিউজ বলছে, পাহাড়ি বুনের জেলার এই গ্রামটি সাম্প্রতিক প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৫ আগস্ট থেকে পাকিস্তানের ভয়াবহ বন্যায় প্রায় ৪০০ জনের মধ্যে ২০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছে এই অঞ্চলে।

২৫ বছর বয়সি নূর কাঁদতে কাঁদতে বলেন, সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। বাড়ি ফিরে এসে ধ্বংসস্তূপ এবং ভারী পাথর ছাড়া আর কিছুই নেই। পাহাড় থেকে কাদা এবং প্রচণ্ড বন্যার পানির সাথে ঘরবাড়ি, বাজার এবং ভবনগুলোতে ভেঙে পড়েছে। তিনি বলেন, বন্যা এলো, এক ভয়াবহ বন্যা এলো, সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেল, বাড়ি, মা, বোন, ভাই, আমার চাচা, আমার দাদা এবং বাচ্চাদের।

নূর মুহাম্মদ মালয়েশিয়ায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। ১৫ আগস্ট তিনি বিয়ের উদ্দেশে দেশে ফেরার জন্য ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে পৌঁছান। বাবা এবং আরেক ভাই বিমানবন্দরে তাকে রিসিভ করতে যাওয়ার কারণে বেঁচে গেছেন।মুহাম্মদ জানান, তার পরিবারের ২৮ জনের মধ্যে মাত্র চারজন বেঁচে আছেন। তিনি বলেন, আমরা আর কী বলতে পারি? এটা সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা।

নিহতদের মধ্যে নূর মুহাম্মদরে মা, এক ভাই এবং এক বোনও ছিলেন। এছাড়া রয়েছে তার চাচাদের পরিবারের সদস্যরা, যারা তার দাদার তৈরি বাড়িটিতে উত্তরাধিকার সূত্রে ছিলেন এবং তার বিয়েতে যোগদানকারী আত্মীয়স্বজনরা।