Image description

সময় বদলে গেছে, বদলে গেছে মানুষের বিনোদনের ধরনও। একসময় সন্ধ্যা নামলেই পরিবারের সবাই গোল হয়ে বসত বড় বাক্সের টেলিভিশনের সামনে— কেউ নাটক, কেউ খবর, কেউবা ক্রিকেট খেলা দেখত। সেই সাদা-কালো থেকে রঙিন বাক্স টিভি ছিল গ্রামীণ-শহুরে সব ঘরের অন্যতম আকর্ষণ। কিন্তু আজ সেই টিভি হারিয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তির ঝড়ে, আর এর সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে টিভি সার্ভিসিং পেশাও।

একসময় নীলফামারীর বিভিন্ন বাজারে টিভি সার্ভিসিং দোকানগুলোতে ভিড় লেগে থাকত। টিভি নষ্ট মানেই সেটি নিয়ে ছুটে আসতেন মেকানিকের দোকানে। এখন সেই দোকানগুলোর অনেকগুলোই ফাঁকা, পড়ে থাকে ধুলো জমে। মাসে এক-দুটি কাজ পেলেও তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে নিঃশব্দে হারিয়ে যাচ্ছেন এক সময়ের ব্যস্ত টেলিভিশন সার্ভিসিং মেকানিকরা।

নীলফামারীর সৈয়দপুরে ৩০ বছরের অভিজ্ঞ টেলিভিশন মেকানিক নূরুল ইসলাম বলেন, ‘এক সময় দিনে ৮-১০টা টিভি সার্ভিস করতে হতো। এখন মাসে ৩-৪টার বেশি আসে না। সবাই স্মার্টফোনে ভিডিও দেখে, পুরনো টিভি নষ্ট হলে কেউ আর মেরামত করায় না।’

নীলফামারীর চৌরঙ্গী মোড়ে সার্ভিসিং করে খোকন রায়। তিনি বলেন, ‘আমি যখন কাজ শিখি এবং কাজ করি তখন কাজের অভাব ছিল। প্রতিদিন কাজের ওপর কাজ এখন মানুষ সবাই স্মার্ট ফোন আর স্মার্ট টিভি ব্যবহার করছে। স্মার্ট টিভি নষ্ট হলে কোম্পানির কাছে পাঠিয়ে দেয়। এখন যা অল্প কিছু মানুষ টিভি ব্যবহার সেগুলো আসে। মাঝে মধ্যে কিছু এলইডি টিভি আসে এভাবে কোন রকমে যাচ্ছে জীবন।’

ডোমারের জাকারিয়া হোসেন নামের এক মেকানিক জানান, ‘ছোট একটা চাকরি করি। আগে চাকরির পাশাপাশি বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত টিভি মেরামতের কাজ করতাম। একসময় এ কাজেই ভালো আয় হতো, সংসারেও চলত স্বচ্ছলতা। কিন্তু এখন আর সেই দিন নেই। টেলিভিশনের সার্ভিসিংয়ের কাজ একেবারেই কমে গেছে ইনকাম নেই বললেই চলে, তাই এখন আর কাজ করি না।’

নীলফামারী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ছোটবেলায় আলিফ লায়লা, ইত্যাদি, সিনবাদ সহ শুক্রবারের সিনেমা দেখার জন্য অধির আগ্রহ নিয়ে বসে থাকতাম। এখন মোবাইলেই সবকিছু পাওয়া যায়। তাই টিভির প্রতি আগ্রহ কমে গেছে।’