
খারাপ খেলে দেশে ফেরার পর বিমানবন্দরে দুয়ো ধ্বনি শোনার অভিজ্ঞতা হাবিবুল বাশার বা মুশফিকুর রহিমদের হয়নি। জুলাই মাসে শ্রীলঙ্কার কাছে ওয়ানডে সিরিজ হেরে দেশে ফেরার সময়ও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি মেহেদী হাসান মিরাজদের। গতকাল বুধবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনাল এলাকায় সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেছে।
একদল সমর্থক জড়ো হয়ে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের দুয়ো দেন। ভালো খেললে যে ক্রিকেটারদের মাথায় তুলে নেন, নায়কের আসনে বসিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন, সেই সমর্থকরাই হলেন রুষ্ট! সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে আফগানিস্তানের কাছে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশের ঘটনা মেনে নিতে না পেরে এভাবেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটান তারা।
এই ‘মব’কে শান্ত করার এখন একটাই পথ খোলা- ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ভালো ক্রিকেট খেলে সিরিজ জিততে হবে মেহেদী হাসান মিরাজদের। হতাশা কাটানোর জন্য ক্রিকেটারদের সামনে এটি মোক্ষম সুযোগ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়রাও চলে এসেছেন মিরপুরের স্পিন ট্র্যাকে সিরিজ খেলার মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে ভরাডুবিতে হতাশার দগদগে ক্ষত নিয়ে বুধবার বিকেলে দেশে ফেরেন ক্রিকেটাররা। এই খেলোয়াড়দেরই মানসিক প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে তিন দিনের বিরতিতে আরেকটি তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলার জন্য।
অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ মঙ্গলবার সিরিজ শেষে বলছিলেন, পরিবারের সঙ্গে দুই দিন কাটিয়ে সতেজ হয়ে ফিরবেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হোম সিরিজে ভালো ক্রিকেট খেলতে। দেশের মাটিতে খেলা হওয়াতেই হয়তো কিছুটা নির্ভার মিরাজ। টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে হয়তো মন্থর ও নিচু উইকেট চাওয়া হয়েছে কিউরেটর টনি হেমিংয়ের কাছে। কারণ ক্যারিবীয়দের কুপোকাত করতে হলে এই কৌশলেই খেলতে হবে টাইগারদের। এই পরিকল্পনায় সফল না হলে গ্যালারি থেকেও দুয়ো শুনতে হতে পারে মিরাজদের।
সে কারণে ভালো-মন্দ মাথায় রেখে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে লড়াকু ক্রিকেট খেলার আহ্বান জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসানের, ‘মোটাদাগে জয়ের কোনো বিকল্প নেই। এখন কীভাবে ম্যাচ জিতবে টিম ম্যানেজমেন্ট ও খেলোয়াড়দের সে পথ খুঁজে বের করতে হবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ‘স্লো’ ও ‘লো’ উইকেট বানিয়ে সিরিজ জেতার চিন্তা করা হবে আত্মঘাতী পরিকল্পনা। আমাদের মতো ক্ষুরধার না হলেও মানসম্পন্ন স্পিনার ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলেও আছে। শারীরিক উচ্চতার কারণে স্পিন ট্র্যাকে সুবিধা পাবে তারা। আমাদের উচিত হবে স্পিনারদের কিছুটা সুবিধা রেখে উইকেট বানানো। একেবারে স্পোর্টিং না করে সেমি স্পোর্টিং করলে ভালো হবে।’
ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের সোনালি সময় গেছে মাশরাফি বিন মুর্তজাদের সময়ে। বৈশ্বিক কোনো টুর্নামেন্টে শিরোপা জিততে না পারলেও র্যাঙ্কিংয়ে সাত-আটে ছিল পাঁচ বছরের বেশি। সেই দলটিই ২০২৩ সালের বিশ্বকাপ থেকে ছন্নছাড়া। দ্বিপক্ষীয় সিরিজেও ভালো করছে না। গত বছর আফগানিস্তানের কাছে সিরিজ হেরেছিল শারজাহয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে মিরাজের নেতৃত্বে।
৫০ ওভারের ক্রিকেটে ২০২৫ সালের সাফল্য বলতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি মাত্র ম্যাচ জয়। বাকি সবই পরাজয়ের ইতিবৃত্ত। রকিবুল হাসান শঙ্কা প্রকাশ করছেন এভাবে চলতে থাকলে ঝুঁকিতে পড়ে যেতে পারে সরাসরি ২০২৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ করে নেওয়া। তাঁর মতে, ‘ম্যাচ জিততে না পারলে ২০২৭ সালের বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জনে ব্যাঘাত ঘটবে।’
জাতীয় দলের আরেক সাবেক অধিনায়ক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর প্রত্যাশা কন্ডিশনের সুবিধা কাজে লাগিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করবে বাংলাদেশ, ‘দেশের মাটিতে নতুন করে সিরিজ শুরু করবে। এখানে কত দ্রুত রিকভারি করতে পারে এটি দেখার বিষয়। দেশের মাটিতে একটু সুবিধা পাবে। আমাদের মন্থর উইকেটে মনে হয় না ওয়েস্ট ইন্ডিজ তেমন কিছু করতে পারবে। আমরা কীভাবে রিকভারি করতে পারি সেটা বিষয়। মিরপুরে একটা সুবিধা অবশ্যই থাকবে। যে কোনো বিদেশি দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ মিরপুরে ভালো খেলে। এই সুবিধাটা অবশ্যই নিতে হবে।’