Image description

এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি। মাঠে ভিড়, টিভি কিংবা মোবাইলের পর্দায় কোটি দর্শকের চোখ—সব মিলিয়ে এ লড়াইকে ঘিরে উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে। তবে এই ক্রিকেট উৎসবকে রাজনীতির কাদা ছোড়াছুড়ি দিয়ে কলুষিত করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান সুনীল গাভাস্কার।

নিজের কলামে গাভাস্কার লিখেছেন, 'খেলাধুলা ও রাজনীতি একসঙ্গে মেশানো উচিত নয়। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী নীতি ছাড়া আর কোনো কারণে কোনো দেশকে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া থেকে বাদ দেওয়া হয়নি। তিনি উদাহরণ টেনে মনে করান, ১৯৭৪ সালের ডেভিস কাপ টেনিস ফাইনালে ভারত দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে খেলতে অস্বীকৃতি জানায়। নীতিগত কারণে সুযোগ হারালেও ভারত তার অবস্থানে অটল থাকে।'

গাভাস্কার অলিম্পিকের দিকেও ইঙ্গিত করেন। ঠান্ডা যুদ্ধের সময়ে ১৯৮০ সালের মস্কো অলিম্পিক পশ্চিমাদের বয়কট এবং ১৯৮৪ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক সোভিয়েত ব্লকের বয়কটকে তিনি রাজনৈতিক প্রভাবের বড় উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন। তবুও, বিশ্বক্রীড়াঙ্গন বেশিরভাগ সময়েই রাজনীতিকে খেলাধুলা থেকে আলাদা রাখার চেষ্টা করেছে।

তিনি লিখেছেন, ' আইসিসি ও অন্যান্য প্রতিযোগিতার ড্র এমনভাবে সাজানো হয় যাতে ভারত ও পাকিস্তান একই গ্রুপে থাকে। এতে অন্তত একটি ম্যাচ নিশ্চিত হয়। এখানেও দেখা যায়, গ্রুপে অন্য দলগুলো সাধারণত দুর্বল হয় যাতে ২০০৭ বিশ্বকাপের মতো অঘটনের সম্ভাবনা না থাকে। অন্য দেশগুলো আপত্তি তোলে না, কারণ তারাও জানে এই ম্যাচই সবচেয়ে বেশি দর্শক টানে, আর এই দর্শকরাই আনে অর্থ, যা তাদের ক্রিকেটকেও চালায়।

অন্যান্য খেলায় ড্র হয় র‌্যাঙ্কিং বা সিডিং অনুযায়ী, কিন্তু ক্রিকেটে ভারত-পাকিস্তান থাকলে পরিস্থিতি আলাদা হয়ে যায়। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে সবসময়ই উত্তেজনা থাকে, কিন্তু এশিয়া কাপের এই আসরে তা একেবারেই ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। আগেও খেলোয়াড়দের মাঝে ছোটখাটো ঝগড়া হয়েছে, কিন্তু গত সপ্তাহে যা ঘটল তা অতীতে দেখা যায়নি।

দুই দলের সমর্থকদের সীমারেখার বাইরে দাঁড়িয়ে প্রতিপক্ষ ফিল্ডারদের উদ্দেশে মন্তব্য করা সবখানেই দেখা যায়। কিন্তু এবার ব্যাপারটা ভিন্ন ছিল—ফিল্ডারদের যুদ্ধ নিয়ে উসকানিমূলক মন্তব্য শোনাতে হয়েছে। দুই দেশের বর্ণনাই যুদ্ধের ফলাফলকে নিজেদের সুবিধামতো সাজিয়ে জনগণের কাছে পৌঁছেছিল। সেই অনুযায়ী ভঙ্গি আর বিদ্রূপও চলেছে। খেলাধুলা ও রাজনীতি আলাদা থাকবে—এমন আশা হয়তো কল্পনা, তবে গত রবিবারের ম্যাচ দেখে মনে হয়েছে পাকিস্তানের বিপক্ষে কোনো খেলাই না খেলাই ভালো, বিশেষ করে আবেগতাড়িত খেলা ক্রিকেটে।'

ভারত অধিনায়ক সুর্যকুমার যাদব পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় সেনাদের উৎসর্গ করায় ম্যাচ ফির ৩০ শতাংশ জরিমানা গুনেছেন। এ প্রসঙ্গে গাভাস্কার বলেন, আইসিসির নিয়মে রাজনৈতিক মন্তব্য নিষিদ্ধ হলেও ফাইনালের ঠিক আগে এমন সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবে ব্যাখ্যা হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।

শেষে গাভাস্কার আশা প্রকাশ করেন, এশিয়া কাপের ফাইনাল যেন নিখাদ ক্রিকেটের উৎসব হয়, 'ফাইনাল হবে রোমাঞ্চকর ক্রিকেটে ভরা, কিন্তু এমন কোনো আচরণ ছাড়া যা আমাদের এই মহান খেলার ক্ষতি করে।”