Image description

সিলেট-আখাউড়া রেলপথ। ঠিকঠাক আছে কেবল রেল সড়ক। আর সবকিছুই নড়বড়ে। প্রবাসী ও পর্যটন অধ্যুষিত সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম এই রেলপথটি চরম দৈন্যদশায়। দীর্ঘ কয়েক যুগ থেকে নেই দৃশ্যমান কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া। অবহেলিত এই রেলপথটির টেকসই উন্নয়নেও নেই কোনো উদ্যোগ। কোনো রকম জোড়াতালি দিয়ে চলছে এই রেলপথটির কার্যক্রম।

সিলেট-আখাউড়া রেলপথ সংস্কার, আসন সংখ্যা বৃদ্ধি, মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন, জরাজীর্ণ বগি পরিবর্তন, নতুন বগি বাড়ানো, সহজে টিকিট প্রাপ্তি, নতুন ট্রেন ও বন্ধ স্টেশন চালু এবং ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনে উন্নীতকরণসহ ৮ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন এ রোডের যাত্রীরা। প্রায় অনেক দিন থেকে কুলাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে নানা কর্মসূচি নিয়ে আন্দোলনে সরব রয়েছেন যাত্রীরা। আন্দোলনকারীরা বলছেন চলমান এই চিহ্নিত সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে এই রোডের যাত্রীরা অন্তহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বড় কয়েকটি দুর্ঘটনার পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক না নড়াতে দাবি আদায়ে তারা আন্দোলনে নেমেছেন। বৃটিশ আমলের নির্মিত লাইন, ট্রেন আর ব্রিজ। দুর্ঘটনা ঘটলেই কেবল ওই স্থানে টুকটাক জোড়াতালির সংস্কার হয়। বিগত এক দশকের মধ্যে প্রায় অর্ধশতাধিক ছোট বড় ও ভয়াবহ কয়েকটি দুর্ঘটনায় আতঙ্ক বাড়িয়েছে যাত্রীদের। সিলেট আখাউড়া ১৭৯ কিলোমিটার রেলপথই ঝুঁকিপূর্ণ। এমনটিই বলছেন উপকারভোগীরা। কারণ, এ রোডের চরম ঝুঁকিপূর্ণ অধিকাংশ ব্রিজ, লাইন, ইঞ্জিন, বগি, সিগন্যাল, স্লিপার, ফিসপ্লেট, নাট-বল্টু, পাথর, জয়েন্ট পয়েন্ট, ক্রসিং পয়েন্ট, হুক, ক্লিপ, প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ও রেল স্টেশনসহ সবকিছুই পুরাতন ও জরাজীর্ণ।

 অনেক স্থানেই ত্যানা (পুরাতন কাপড়), সুতলি, প্লাস্টিকের ব্যাগ দিয়ে বেঁধে আটকানো হয়েছে ফিসপ্লেট ও নাট বল্টু। স্লিপারের সঙ্গে রেল লাইন আটকানোর হুক ও ক্লিপ নেই। জয়েন্ট পয়েন্ট ও ক্রসিং পয়েন্টের ফিসপ্লেট ও নাট বল্টু থ্রেটহীন অকার্যকর। নেই স্লিপার ও পর্যাপ্ত পাথর। শুধু মৌলভীবাজার জেলা অংশে মনু, পলকী ও বরমচাল ব্রিজসহ ছোট বড় মিলিয়ে রয়েছে ১০-১২টি ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ। বিজগুলো টুকটাক সংস্কারে কোনো রকম চলাচলের উপযোগী করে রাখা হয়েছে। ব্রিজগুলোতে ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কা স্থানীয় বাসিন্দাদের। চরম ঝুঁকিপূর্ণ যে সকল রেললাইন ও ব্রিজ তা মেরামত নয়, নতুন করে নির্মাণের দাবি তাদের। জানা যায় ২০১৯ সালের ১২ই নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত ও শতাধিক আহত হন। একই বছরের ২৩শে জুন রাতে ‘উপবন এক্সপ্রেস’ রাত সাড়ে ১১টার দিকে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল বড়ছড়া ব্রিজে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ব্রিজ ভেঙে ৫টি বগি ব্রিজের নিচে ও খাদের পাশে পড়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ৪ নিহত ও প্রায় ৩ শতাধিক যাত্রী আহত হন। ওই দুর্ঘটনায় গঠিত একাধিক তদন্ত কমিটির তদন্ত রিপোর্টগুলোতে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ত্রুটি-বিচ্যুতিসহ ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে নানা সুপারিশও করা হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয় মূলত দুর্ঘটনাস্থলের রেলপথ যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ার কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটে। ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে ওয়ে অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ম্যানুয়েলের নির্দেশনানুযায়ী নিয়মিত ট্রলি নিয়ে পরিদর্শন করে ত্রুটি শনাক্ত করাসহ সাত দফা সুপারিশও করেন তারা। কিন্তু তার বাস্তবায়ন নেই আজও। 

জানা যায় ২০১৯ সালে নয় মাসে রেলের সিলেট রোডে ছোট বড় প্রায় ২০টিরও বেশি দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতের পরিসংখ্যান ছিল উল্লেখযোগ্য। এরপর থেকে চলতি বছর পর্যন্ত লাইচুত্য, ইঞ্জিন বিকল হয়ে আগুন ধরে যাওয়া, ইঞ্জিন থেকে বগি বিচ্যুৎ হওয়া ও ট্রেন আটকে পড়াসহ অসংখ্য দুর্ঘটনা এখনো চলমান। জানা যায়, সিলেট অঞ্চলে রেল যোগাযোগ চালু হয় বৃটিশ আমলেই। ওই সময়ে রেলের নির্মিত লাইন, ব্রিজ ও স্টেশন দিয়েই এখনো চলছে দেশের পূর্বাঞ্চলীয় রেলপথ। কিন্তু এ রেলপথে বড় আকারের সংস্কার কাজ এখনো হয়নি। দীর্ঘ দিন থেকে বন্ধ রয়েছে অনেক স্টেশন। পর্যাপ্ত যাত্রী থাকা সত্ত্বেও বন্ধ রয়েছে লোকাল ও আন্তঃনগর ট্রেন। এ অঞ্চলের যাত্রীরা বলছেন কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা থাকলে বন্ধ হওয়া লোকাল ট্রেন ও স্টেশন চালু হলে মানুষের কর্মসংস্থান বাড়তো। বড় পরিসংখ্যানের রাজস্ব আয়ও হতো। ৮ দফা দাবি আদায়ের আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক সিনিয়র সাংবাদিক আজিজুল ইসলাম, সমন্বয়ক ও কুলাউড়া উপজেলা ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান আখই ও আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে মাঠে সক্রিয় থাকা সাবেক এমপি এডভোকেট নওয়াব আলী আব্বাস খান, উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ও সাবেক প্যানেল মেয়র জয়নাল আবেদীন বাচ্চু, ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও কুলাউড়া উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সজল জানান, এই ন্যায্য ও যুক্তিসঙ্গত দাবির প্রতি একাত্মতা জানিয়ে ইতিমধ্যে আমাদের সঙ্গে সিলেট বিভাগ জুড়ে অনেকেই নানা কর্মসূচি পালন করছেন ও করতে চাচ্ছেন। রেলওয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষ ১৫ দিনের সময় নিয়েছেন। এর ভেতরে সমাধানের দিকে না গেলে সিলেটবাসীকে নিয়ে বৃহত্তর কর্মসূচি দিয়ে আমরা মাঠে সক্রিয় থাকবো।