
হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচ কিভাবে হারা যায় সেটা গোটা ক্রিকেট দুনিয়াকে দেখিয়ে দিল বাংলাদেশ! দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে সুপার ফোরের (অঘোষিত সেমিফাইনাল) ম্যাচে পাকিস্তানকে মাত্র ১৩৫ রানে থামিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা জোরালো করেন বোলাররা। কিন্তু এই মামুলী রানও টপকাতে পারেননি টাইগার ব্যাটাররা। অমার্জনীয় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে মাত্র ১২৪ রান করে অধিনায়ক জাকের আলির দল।
যে কারণে ১১ রানের জয়ে এশিয়া কাপ ক্রিকেটের ফাইনালে পৌঁছে গেছে পাকিস্তান। আর বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ। আগামী রবিবার রাতে একই ভেন্যুতে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিরুদ্ধে খেলবে সালমান আগার দল। যেখানে গ্রুপ পর্ব ও সুপার ফোরের ম্যাচে ভারতের কাছে দুইবার হারের প্রতিশোধ নেওয়ার মোক্ষম সুযোগ পাচ্ছে পাকিস্তান।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে দারুণ এক সাফল্য পায় বাংলাদেশ। সেটাও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। তবে ক্রিকেট নয়; ফুটবলের অনূর্ধ্ব-১৭ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে। শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে চলমান আসরের সেমিফাইনালে পাকিস্তানকে ২-০ গোলে হারিয়ে আসরের ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশের কিশোররা। অসাধারণ জয়ে লাল-সবুজদের হয়ে গোল দু’টি করেন অধিনায়ক নাজমুল হুদা ফয়সাল ও অপু রহমান। সবমিলিয়ে একই দিনে ক্রিকেট ও ফুটবলের দু’টি আসরের ফাইনালে ওঠার অনন্য কীর্তি গড়তে পারত বাংলাদেশ। কিশোর ফুটবলাররা পারলেও ক্রিকেটারদের হতাশার হারে সেটা সম্ভব হয়নি।
দুবাইয়ে শুরুতে মূলত টাইগার লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনের তোপের মুখে পড়েন পাকিস্তানি ব্যাটাররা। পেসার তাসকিন আহমেদের বলে সাহিবজাদা ফারহান ও মেহেদি হাসানের বলে সাইম আইয়ুবের ক্যাচ তালুবন্দী করেন রিশাদ। এরপর বল হাতে এসে পাকিস্তানের পরের দুই উইকেট (ফকর জামান ও হুসেইন তালাত) শিকার করেন তিনি। তাতেই পাকিস্তানিদের ব্যাটিংয়ের মেরুদ- ভেঙে যায়। যা আর সোজা করতে পারেনি তারা।
তবে শেষদিকে মোহাম্মদ হারিসের দলীয় সর্বোচ্চ ৩১, মোহাম্মদ নাওয়াজের ২৫ ও শাহিন শাহ আফ্রিদির ১৯ রানে ভর করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৩৫ রান করে পাকিস্তান। বাংলাদেশের হয়ে তাসকিন আহমেদ সর্বোচ্চ ৩টি এবং রিশাদ হোসেন ও মেহেদি হাসান ২টি করে উইকেট লাভ করেন। এছাড়া ১ উইকেট কব্জা করেন মুস্তাফিজুর রহমান।
এই ম্যাচে বাংলাদেশের তৃতীয় বোলার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটে ১০০ উইকেট শিকারের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন তাসকিন আহমেদ। পাকিস্তানের ওপেনার সাহিবজাদা ফারহানকে আউট করে অনন্য এই রেকর্ডে নিজের নাম লিখিয়েছেন তিনি। সব দেশ মিলিয়ে তাসকিন এই মাইলফলকে ২৬তম বোলার। বাংলাদেশের হয়ে তাসকিনের আগে আন্তর্জাতিক টি২০ তে একশ’ উইকেট পূর্ণ করেছেন স্পিনার সাকিব আল হাসান ও পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। চলতি আসরেই সাকিবকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশের ইতিহাসে টি২০ ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী হয়েছেন মুস্তাফিজ।
সহজ জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশের ব্যাটাররাও শুরু থেকে পাকিস্তানি বোলারদের তোপের মুখে পড়েন। শূন্য রানে প্রথম ওভারেই ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন আউট হয়ে যান। শুরুর এই ধাক্কা আর সামলে উঠতে পারেননি টাইগার ব্যাটাররা। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট খোয়াতে থাকা দলকে একশ’ রান পেরুতে সহায়তা করে ইনিংস সর্বোচ্চ শামীম হোসেন পাটওয়ারির ৩০ রান।
এছাড়া ওপেনার সাইফ হাসান ১৮, নুরুল হাসান সোহান করেন ১৬ রান। শেষদিকে ১৬ রানে অপরাজিত থাকেন রিশাদ হোসেন। বাকিরা ছিলেন যাওয়া-আসায় ব্যস্ত। শেষ পর্যন্ত ১২৪ রানে থেমে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। পাকিস্তানের পক্ষে পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি ও হারিস রউফ ৩টি করে এবং সাইম আইয়ুব ২ উইকেট লাভ করেন। এছাড়া মোহাম্মদ নাওয়াজ ১ উইকেট কব্জা করেন।